ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
দেশের সবজি চাষে খ্যাত ঈশ্বরদীতে চাষাবাদে বেড়েছে কীটনাশকের ব্যবহার। বিশেষ করে শিম ও ঢ্যাড়শ চাষে সবচেয়ে বেশী পরিমাণে ব্যবহার কীটনাশক। শিম ও ঢ্যাড়শ চাষের এলাকা মুলাডুলি ইউনিয়নের সর্বত্র বাতাসে বিষের গন্ধ। ফুলকফি, বেগুণ থেকে শুরু করে সব ধরণের সবজি চাষেই ব্যবহার হচ্ছে বিপুল পরিমাণে কীটনাশক।
পঁচিশ বছর ধরে মুলাডুলি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামে শিমের বাণিজ্যিক আবাদ হচ্ছে। এ গ্রামের ৯০ ভাগ জমিতে শিম চাষ হয়। মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি শিম ও ঢ্যাড়শের আবাদ হচ্ছে। তবে শিমের মৌসুমে বাতাসে ভেসে বেড়ায় কীটনাশকের গন্ধ।
মুলাডুলি ইউনিয়নের শেখপাড়া, বেতবাড়িয়া, বাঘহাছলা, আটঘরিয়া, মুলাডুলি, ফরিদপুর গ্রাম সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুধু শিমের আবাদ। শিমের ক্ষেতে অনেকে কীটনাশক স্প্রে করছেন। কীটনাশক ব্যবহারের পর বিষের উৎকট গন্ধে পথ চলতে নাকে রুমাল দিতে হচ্ছে। মুলাডুলির প্রতিটি গ্রামের বাতাসে কীটনাশকের ঝাঁঝালো গন্ধ । কৃষকরা জানান, শিমের ফুল ও কচি শিমের জাবপোকা দমন করতে সপ্তাহের পাঁচ দিনই টাফগড় নামের কীটনাশক স্প্রে করা হয়। কোনো কোনো জমিতে পোকার আক্রমণ বেশি হওয়ায় দিনে ২ বার বিষও প্রয়োগ করেন।
বেতবাড়িয়া পূর্বপাড়ার কৃষক আব্দুরল জব্বার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে শিমের আবাদ করেছেন শিম আবাদে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় ও কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সবজি আবাদের মধ্যে শিম, ঢ্যাড়স, বেগুণ ও কফি চাষে সবচেয়ে বেশি কীটনাশক ব্যবহার হয়। অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রেতে এলাকাজুড়ে বিষের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বাতাসে কীটনাশকের দুর্গন্ধ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহের মারাত্মক তি করছে। এতে শিশু, নারী ও বৃদ্ধসহ শিম চাষিরা নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
শিম চাষে খ্যাতির জন্য আমিনুল ইসলাম বাবু ‘শিম বাবু’ জানান, এক বিঘা শিমের জমিতে কীটনাশকে খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। দানাদার, সুমিথিয়ন, টাফগড়, ফ্যানথেন, ওকোজিমসহ নানা ধরনের কীটনাশক নিয়মিত জমিতে স্প্রে করতে হয়। অসাবধানতাবশত: মাঝে মধ্যে শরীরে পড়লে কৃষকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।
কীটনাশক রিটেইলার সমিতির সভাপতি শামসুল আলম বিশ্বাস বলেন, শিম, ঢ্যাড়শ, বেগুন কফিসহ সবজি চাষে প্রায় ২০ ধরনের কীটনাশক ব্যবহার হয়। এরমধ্যে ভিরতাকো, ব্রিফার, প্রোটেক্ট, সবিকরন, কট, মাস্টার, টিডো পল্গাস, ফাইটার, গ্রিনফুরান অন্যতম। তিন চার বছরের ব্যবধানে কীটনাশক বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ।
মুলাডুলির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলিউজ্জামান জিয়া বলেন, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং কৃষকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। কৃষকদের বারবার বোঝানো হলেও তারা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আসমা খান বলেন, কীটনাশক ব্যবহারে উৎপাদিত সবজি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সবজি খেলে ক্যানসারও হতে পারে। কিডনি ও লিভার ড্যামেজ, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে