সঞ্জু রায়, বগুড়া: ‘কৃষিই কৃষ্টি, কৃষিই সভ্যতা’ স্লোগানে বগুড়া নিবাসী ও জেলার বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত প্রায় ৪ শতাধিক কৃষিবিদের এক উৎসবমুখর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে বগুড়ায়। বাদ্যের তালে তালে কৃষির বিকাশে করণীয় নানা ইতিবাচক বার্তা প্রচারের মাধ্যমে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও সকলের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে শুক্রবার সকালে এক বর্ণাঢ্য র্যালী বগুড়া পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে। তবে কৃষিবিদদের এই র্যালী ছিল কিছুটা ভিন্নধর্মী কারণ র্যালীর সামনে বিভিন্ন কৃষিবিদের সৃজনশীলতায় ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছিল গ্রামবাংলার কৃষকদের বাস্তব কর্মজীবনের চিত্রকে যেখানে কেউ সেজেছিল জেলে, কেউ বা রাখাল আবার কেউ বা চাষী যা নজর কেড়েছে বগুড়ার আপামর জনসাধারণের।
কৃষিবিদ পুনর্মিলনী ২০২২ এর আাহ্বায়ক ও জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম এর নেতৃত্বে র্যালী পরবর্তী সকাল ১১ টায় শহরের সাতমাথায় বেলুন, ফেস্টুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে পুনর্মিলনীর দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কৃষিবিদ তথা কৃষির সাথে জড়িত সকলের অবদান অপরিসীম। দেশের কল্যাণে কৃষির সাথে জড়িত সকলের যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে এটি যেন অব্যাহত থাকে সেটির লক্ষ্যে তিনি শুভ কামনা জানান এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সদা দেশের জন্যে কাজের অঙ্গিকার করেন তিনি।
এ সময় কুড়িগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম জাকির হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, সুদীর্ঘ সময় ধরে এই বাংলাদেশে কৃষির উন্নয়নে কৃষিবিদরা মাটি ও কৃষকের সাথে সম্পৃক্ত থেকে এদেশের কৃষিখাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছে। কৃষিবিদরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে বগুড়া শহরের হোটেল মমইনে নানা সৃজনশীল উদ্যোগ নেয় কৃষিবিদরা। পরিবারের সদস্যসহ প্রায় সহস্রাধিক মানুষের এক অপরুপ মিলনমেলা ঘটে অনুষ্ঠানস্থলে। বিকেলে পুনর্মিলনী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় কৃষির বিকাশে ও দেশের সামগ্রিক কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে কৃষিবিদদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বগুড়ার মহা-পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খলিল আহম্মেদ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বিএআরআই বগুড়ার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও নিজেদের কর্মজীবনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কৃষিবিদদের মাঝে বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার সাবেক পরিচালক ডা: মো: আব্দুল লতিফ, মসলা গবেষণা কেন্দ্র বগুড়ার মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫ জন কৃষিবিদকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সংবর্ধনা জানান কৃষিবিদরা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সংবর্ধনাপ্রাপ্ত কৃষিবিদরা হলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের প্রাক্তন ২ জন মহাব্যবস্থাপক যথাক্রমে ড. আতিকুর রহমান ও আতাউর রহমান এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন ৩ জন উপ-পরিচালক যথাক্রমে আব্দুল মতিন, দলিল উদ্দিন ও মীর মো: আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আব্দুর রশিদ, মোতাহার হোসেন, শরাফত ইসলাম ও হেলেনা আক্তারসহ দুদক বগুড়ার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: মনিরুজ্জামান, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট বগুড়ার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, কৃষিবিদ মুশিদুল হকসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কৃষিবিদরা উপস্থিত ছিলেন। পরিশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষিবিদদের দিনব্যাপী আয়োজনের পরিসমাপ্তি হয়।
কৃষিবিদদের নিয়ে ব্যতিক্রমী এই আয়োজন প্রসঙ্গে পুনর্মিলনী আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম বলেন, দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষিখাতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। দেশের কৃষিকে যান্ত্রিকীকরনের মাধ্যমে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের এইযাত্রায় এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষিবিদরা নিজেদের অবস্থান থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। শুধু তাই নয় কৃষি শিক্ষা ও গবেষণাতেও কৃষিবিদদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাই আগামীর সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কৃষিবিদরা যেন নিজেদের মাঝে মিলবন্ধনের মাধ্যমে এবং সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রেখে উন্নত বাংলাদেশ গঠন প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যেন কাজ করতে পারে তাই কৃষির ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা বগুড়াতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।