মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার ঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার রাখা গ্রামে জমশেদ খাঁনের পরিবার ও তার সহযোগীদের দৌড়াত্বে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে সুলতান খানের পরিবারসহ স্থানীয় জনগণ। দিন মজুরকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে ভিডিও ধারণ করে স্বীকার উক্তি আদায়, রাস্তার মাঝখানে লাশ দাফন, গ্রামের বিভিন্ন লোকজনের উপর একাধিক হামলা, জবরদখল, লুটপাট, চুরি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী, বাল্যবিয়ে সংঘটন, গ্রামছাড়া করাসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ আব্দুল হাসিম (৫২) নামীয় একজন দিন মজুরকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে ভিডিও ধারণ করে স্বীকার উক্তি আদায় করার ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, জমশেদ খাঁনের পরিবার ও তার সহযোগীদের অপরাধ ও তাদের দৌড়াত্ব কি বন্ধ করা যাবে না ?। ১০নং নাজিরাবাদ ইউনিয়নের বৈধ্যজ্ঞাতি এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে রাখা গ্রামের আছাদ খানের ঘরে দিন মজুর হিসাবে কর্মরত ভুক্তভোগী আব্দুল হাসিম জানান- গত ১০ ডিসেম্বর বাদ মাগরিব নিজ প্রয়োজনে বাড়ী থেকে ড্রাইভার জাহাঙ্গীর কে সাথে নিয়ে একটি পাম্প নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তার পথ আটকে বাড়ীর সামনের ঈদগাহ রাস্থায় দেশীয় অস্ত্র চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে মারধোর করেন জমশেদ খাঁনের পুত্র সাহেল খাঁন, মৃত ঃ কদর খাঁনের পুত্র সুজন খাঁন, পংধরাই গ্রামের সিফন মিয়া, জনি খানম ও রুবি খানম। সুলতান খান গংদের ফাঁসানোর জন্য তাদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বারসহ গন্যমান্য লোকজন জমশেদ খাঁনের পরিবার ও তার সহযোগীদের ষড়যন্তের বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং তাদেরকে তাদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করেন। এ ব্যপারে জানতে চাইলে আফজাল খাঁন, সুলতান খান বলেন- জমশেদ খাঁন, তার পরিবার ও তার সহযোগীদের দৌড়াত্বে অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। আমাদের বাড়ীর কাজের লোককে যে ভাবে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা অমানবিক। এর সুষ্ট বিচার দাবী করছি। তিনি আরো জানান- জমশেদ খানের পরিবার ও তার সহযোগীদের দৌড়াত্ব বন্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ জরুরী। চলতি বছরের ২৬ মে জমশেদ খানের নেতৃত্বে তার পুত্র সায়েল খান ও ভাতিজা সাকের খানসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন মিলে সুলতান খান দম্পতিকে মারধোর করে স্বর্নালংকার ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় সুলতান খান মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা (নং- ৩২, তাং ২৭/০৫/২০২২) দায়ের করেন। চলতি বছরের ৪ আগষ্ট জমশেদ খানের নেতৃত্বে তার ভাতিজা শাকের খানসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন মিলে গ্রামের আফজল খানের বাড়ীতে হামলা ও তাকে মারধর করে। এ ঘটনায় আফজল খান মৌলভীবাজার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার হয়নি। চলতি বছরের ২৫ আগষ্ট জমশেদ খান ও তার ভাতিজা শাকের খান নিজেদের বাড়ীর সামনে পেয়ে গ্রামের সুলতান খানের উপর চড়াও হয়। প্রাণভয়ে সুলতান খানের শোর-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসায় তিনি রক্ষা পান। এ ঘটনায় সুলতান খান মৌলভীবাজার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেও কোনো শুরাহা হয়নি। এলাকায় ধান ও গরু চুরি ঠেকাতে গ্রামের অনেকেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করলে, জমসেদ খান ও তার সহযোগীরা এসব সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে জমশেদ খান ও তার সহযোীরা অনেকের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মৃতঃ তোরাব মিয়াকে গ্রামের ঈদগাহ’র রাস্তার উপর দাফন করে। এর প্রতিবাদে গ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়ায় জামসেদ খান গোষ্ঠি সুলতান খানের উপর অতর্কিত হামলা করে। পরে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসীর ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রায় আড়াই মাস পরে মৃতঃ তোরাব মিয়া লাশ উত্তোলনপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। সর্বশেষ গত ১৪ নভেম্বর আফজল খানের ভূমি থেকে অকেগুলো বাঁশ ও গাছ কেটে নিয়ে যায় জমশেদ খা ও তার সহযোগীরা। এর প্রতিবাদ করায় পরবর্তীতে আফজল খানকে রাস্তায় একা পেয়ে জমশেদ খা ও তার পুত্র তাকে মারধোর ও ছিনতাই করে। এ ঘটনায় আফজল কান থানায় মামলা (নং- ২০/৩৪০) দায়ের জমশেদ খা ও তার পুত্র-কন্যারা মিলে আফজল খানের বাড়ীতে হামলা করে সকল সিসি ক্যামেরা ভাংচুর ও বসতগৃহ লুটপাট করে এবং মামলা করলে পেট্রোল দিয়ে বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়ার হুমকী দিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে গেলে পুলিশ তাদের কয়েকজনকে ৩৫৫/২২নং মামলায় আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। ওইদিনই পুত্র-কন্যা ও অজ্ঞাতনামা ৪ জন মিলে আফজল খানের চাচার বাড়ীতে হামলা-ভাংচুর ও পরিবারের লোকজনকে হত্যার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ সরেজমিন ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করে ভূক্তভোগীদের উদ্ধার করে। গত ৭ ডিসেম্বর রাতে সাহান খানের তিনটি গরু সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করিলে পুলিশ সাথে নিয়ে গরু গুলোকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকারী রাহিন আহমদ ও আছকর মিয়া জানান- জমশেদ খান এর বাড়ীতে দিন মজুর আব্দুল হাসিমকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পেয়ে ঘটনার সত্যতা জানার চেষ্টা করি। পরবর্তীতে জানতে পারি জমশেদ খাঁনের পরিবার ও তার সহযোগীরা সুলতান খানকে ফাঁসানোর জন্যই এ ঘটনা সাজিয়েছেন। এলাকার লোকজনদের সহযোগীতায় ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করি। সাবেক মেম্বার জমশেদ খাঁনের পরিবার ও তার সহযোগীদের দৌড়াত্বে অতিষ্ট এলাকার লোকজন। ৮নং কনকপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ সেলিম জানান- এলাকায় জালিমের রাজত্ব চলছে। দিন মজুর আব্দুল হাসিমকে মিথ্যা ঘটনায় হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। রাখা গ্রামের জমশেদ খাঁনের পরিবার ও তার সহযোগীরা সুলতান খান ও তার পরিবারকে ষড়যন্ত করে মিথ্যা মামলা জড়িত করার জন্যই একজন নিরহ লোককে নির্যাতন করেছে। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য লোকজন অবগত রয়েছেন। মৌলভীবাজার মডেল থানার এস.আই বশির জানান- মূল ঘটনা হলো, সুলতান খান এর পরিবারের সাথে জমশেদ খান এর পরিবারের বিরুদ চলছে। এ ঘটনায় জের ধরে এসব ঘটনা হচ্ছে। নির্যাতন এর ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল হাসিম থানায় মামলা করেননি। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অবগত রয়েছেন। এ ব্যপারে জানতে চাইলে ৮নং কনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ রুবেল উদ্দিন এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও এ ব্যপারে তার বক্তব্য জানা যায়নি।