সুলতানা রিজিয়া
জীবনের দীর্ঘ পথ কখনো কখনো মানুষকে অনেক উঁচুতে তুলে দেয়। প্রজন্মে সিঁড়িটা গিয়ে স্পর্শ করে তিন অথবা চারের কোঠায়। এই পর্যায়ের পথ পরিক্রমার সৌভাগ্য ইদানীং গড় আয়ু দীর্ঘ হওয়ার বদৌলতে আমরা কম বেশি অনেকেই পাচ্ছি। আমাদের সময়ে নানা-নানী,দাদা-দাদীরা পঞ্চাশ থেকে টেনেটুনে ষাটের কোঠায় বেঁচে থাকতেন। এখন আমরা তাদেরই তৃতীয় প্রজন্ম অনায়াসে সত্তর বছরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের সম বয়সীদের কেউ কেউ আজ অনন্তের আহ্বানে হারিয়ে গিয়েছেন। আমরাও এখন হারানোর মহড়ায় গোত্তা খাচ্ছি। কেউ রক্তচাপে, কেউ কিডনির জটিলতায়, নয়তো ডায়াবেটিস নিয়ে পেরেসান। হাঁটুর ব্যথা, দাঁতের ব্যথা, বাত বেদনার বিষে জর্জরিত।
কি যাতনা বিষে
বুঝিবে সে কিসে
কভু আশিবিষে
দংশেনি যারে।
দূরের বাদ্য শুনতে ভালো –
নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস-
আমরা এখন লালন পালন করছি তৃতীয় প্রজন্ম। দাদা/ দাদী, নানা/ নানীরা এখন এদের মাঝেই আপন বিশ্ব খুঁজে ফিরছেন। চারপাশে এইসব বুদ্ধিদীপ্ত প্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞ নাতী নাতনীদের রোশনাই উপস্থিত এককথায় “সাতজন্ম তপস্যার ফল”। এদের কেউ কেউ দেশ বিদেশে লেখাপড়ায়, আয় উপার্জনেও কম নয়। ইনারাই এখন আমাদের প্রকৃত অভিভাবক। কি করতে হবে, কেনো করতে হবে, সুস্থতার পাশাপাশি কিসে স্বস্তি ও আনন্দ বিনোদন সেটারও হালনাগাদ রুটিনে তারা আটকে রাখতে চায়। ফলে দাদা, দাদীরদের অবশিষ্ট বন্ধু স্বজন কিম্বা দ্বিতীয় প্রজন্মের ( সন্তানরা ) দাবীদার প্রায়শঃই দূরে সরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। বর্তমানের বাস্তবতা – আসলের চেয়ে লাভের প্রতি আগ্রহ বেশি। আমাদের কপালে এখন লাভের মিষ্টি গুড়। ফলে অনিবার্য পরিণতি গড্ডালিকায় ভাসা। আমরাও তাই সময় অসময়ে নেটওয়ার্কে উঁকি ঝুঁকি থেকে ফেসবুকে বুঁদ হয়ে থাকছি। প্রয়োজনে নাতীদের দারস্থ হচ্ছি। তারা ভালোই ম্যাকানিক ( প্রোগ্রামার ), ফ্রী সার্ভিস দেয়। তারাই এখন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় বিশেষ বিশেষ দিনগুলোর কথা। মা দিবস, বাবা দিবস, কন্যা দিবস, ভালোবাসা দিবস থেকে মনে করিয়ে দেয় বিবাহের দিন এবং জন্মদিনের তারিখ, হাতে করে আনে বিশেষ কেক। সাথে উপহার (উপরি পাওনা )। বছরে কমপক্ষে হাফ ডজন উৎসব, বিশেষ খানা, বছরজুড়ে আনন্দে বাঁচার নিখাঁদ খোরাক। আমরা তাদের নিয়ে এককথায় নির্বিঘ্নেই আছি। তাদের পিতামাতার ( আমাদের সন্তান ) আর্থিক বাজেটে আমাদের জন্য বিশেষ দিনগুলো উদযাপনের ফর্দ নাতী নাতনীরাই ধরিয়ে দেয়।
এই প্রবাসে আমি আমার বিশেষ দিনটিতে নাতী নাতনীদের সাথে অন্যরকম ভালোলাগায় ভেসেছিলাম। সন্তানরা তাদের বন্ধুদের নিয়ে ঘটা করেই আমার জন্মদিনের কেক কাটায় উৎফুল্ল ছিলো। বাড়ি ভর্তি মেহমান, শিশু কিশোরদের কল গুঞ্জন, সাজ সরঞ্জাম, খানা খাদ্যের ম ম সুবাস, অভাবনীয় উপহার সামগ্রী, সাথে ছবি তোলার হুল্লোড়! জীবনের শেষ বেলায় এমন অপ্রত্যাশিত আনন্দের ক্ষণে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত স্মরণে আঁখি পল্লব উদগত অশ্রুতে ভিজে উঠেছিলো।
আমার অনেক বন্ধু – মুগ্ধ শুভার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ এই দিনে পেয়েছি অশেষ শুভকামনা, শুভাশিস, দোয়া এবং ভালোবাসার বার্তা। সকলকে জানাই আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা, শুভকামনা এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা। ভালো থাকো সবে, সুস্থ থাকো।