আবু ইসহাক,সাঁথিয়াঃ ২৭ শে নভেম্বর ধূল্উাড়ি হত্যাযজ্ঞ সাঁথিয়া বাসীকে স্মরন করিয়ে দেয় সেই ভয়াল রাতে হৃদয় বিদারক কাহিনী। বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাস ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ একটি গৌরবোজ্জল ও বেদনা দায়ক এবং বীরত্বর্পূণ অধ্যায় । এ অধ্যায় যারা সৃষ্টি করেছেন এবং যারা সহায়তা করেছে শক্র মুক্ত করেছে দেশেকে । তাদেরই একটা অংশ সাঁথিয়া বাসী। স্বাধীনতা অর্জনের সাঁথিয়া বাসীর যেমন গৌরব ও বীরত্বর্পূণ ইতিহাস রয়েছে তেমনি রয়েছে বেদনা দায়ক ও হৃদয় বিদারক ইতিহাস। ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধে সারা দেশের ন্যায় সাঁথিয়ার মুক্তি যোদ্ধারাও ঝাপিয়ে পড়ে মাতৃভৃমি বাংলাদেশকে শক্র মুক্ত করতে। এমন একটি মর্ম্মস্পশী দিন সাঁথিয়ার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা সেই- ২৭ শে নভেম্বর। ৭১এর এই দিনে সাঁথিয়ার ধূলাউড়ি গ্রামে ঘটে যায় এক হত্যা কান্ড। সারাদেশে চলছিল মুক্তি যুদ্ধ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তি সেনারা আসতে থাকে ধূলাউড়ি গ্রামে। প্রায় দু’ শত মুক্তি যোদ্ধাদের এই গ্রামে থাকা সমীচিন নয় বলে পাশ্ববর্তী রাম কান্তপুর, গোপালপুর, নূরদহ, ডহরজানি সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে আশ্রয় নেয়, দুর দুরান্ত থেকে হেটে আসা ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মুক্তি সেনারা। উদ্দেশ্য ছিল পরদিন পরবর্তী অপারেশনের প্রস্তুতি গ্রহণ। এর কয়েক দিন পূর্বে সাঁথিয়ার সদরে সাঁথিয়া হাই স্কুলে রাজাকারদের ক্যাম্পে মুক্তি যোদ্ধারা আক্রমন করে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার সাঁথিয়ার মুক্তি সেনাদের উপর বিশেষ নজর দেয় পাকসেনারা । সেদিন ২৭ শে নভেম্বর রাত প্রায় আড়াইটা হঠাৎ চারিদিকে গুলির শব্দ। পাক সেনারা তাদের দোসরদের সহযোগিতায় সমস্ত ধূলাউড়ি গ্রাম ঘিরো ফেলে । ঘুমিয়ে থাকা মুক্তি যোদ্ধাদের পাহারারত মুক্তি যোদ্ধারা তাদের সহ যোদ্ধা ও গ্রাম বাসীদের সর্তক করতে কোন সুযোগ পায়নি। ভোর রাতে শুরু হয় পাক সেনাদের তান্ডব লীলা অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধা ও গ্রাম বাসী হতভম্ভ হয়ে দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। এ সময় পাকসেনারা চালায় গুলি, লুটপাট, ধর্ষন ও অগ্নিসংযোগ। গ্রাম বাসী জানায় এদিন ছিল ধূলাউড়ি গ্রামের কাশেম ফকিরের বাড়ীতে মেয়ের বিয়ে। পাক সেনারা বিয়ে বাড়ীতে ঢুকে অত্যাচার, নির্যাতন, জঘন্যতম ঘৃনিত তান্ডবলীলা চালিয়েও ক্ষান্ত হয়নি । মুক্তি যোদ্ধাসহ ঘুমন্ত গ্রামবাসীকে রশি দিয়ে বেধে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এ দিনের হত্যা যজ্ঞে ৮ জন প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাসহ ১১ জন শহীদ হন এরা হচ্ছেন শহীদ খবির উদ্দিন, শহীদ আকতার আলী , শহীদ আলম ,শহীদ দ্বারা হোসেন, শহীদ চাঁদআলী বিশ্বাস , শহীদ শাহজাহান আলী , শহীদ মহসিন , শহীদ মোসলেম আলী, শহীদ মকসেদ আলী। গ্রাম বাসীর মধ্যে আওয়াল খলিফা, কাশেম ফকির ও মাতহান বিবি। এই হত্যা যজ্ঞ শেষে পাকসেনারা ফেরার পথে নাড়িয়া গদাই, পারগোপারপুর, হলুদঘর, রুদ্রগাতী প্রভৃতি গ্রামে অগ্নি সংযোগ করে সাঁথিয়া সদরে চলে আসে। এ সময় নরপিচাশরা রুদ্রগাতী গ্রামের আঃ ছামাদকে ধরে এনে সাঁথিয়া থানার সামনে বেল গাছে ঝুলিয়া অমানুষিক নির্যাতন করে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ৭১ এর ২৭ শে নভেম্বর ধূল্উাড়ি হত্যাযজ্ঞ সাঁথিয়া বাসীকে স্মরন করিয়ে দেয় সেই ভয়াল রাতে হৃদয় বিদারক কাহিনী। ২০০২ সালের ২৭শে নভেম্বর ৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম ফলক উন্মেচন করা হয় ও ২০১৭ সালে সাঁথিয়ার এমপি এ্যডঃ শামসুল হক টুকু টাইলস প্রকল্প দিয়ে বাউন্ডারি করেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সাঁথিয়া থানা প্রসাশন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শহীদের কবরে পু®পস্তবক অর্পন, মিলাদ মাহফিল ও কাঙ্গালী ভোজসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি স্মরনীয় করে রাখবে।।