ঈশ্বরদীর শত শত বিঘা ফসলি জমি বছরের পর বছর পানির নিচে ; ব্যহত চাষাবাদ

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতাঃ
ঈশ্বরদী উপজেলার দুই গ্রামের প্রায় পাঁচশত বিঘা ফসলি জমিতে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। প্রায় ৭ বছর ধরে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন ও  পানি নিষ্কাশনের নালা সংস্কার না করায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে তিন ফসলি এ জমিতে কোনো ধরনের আবাদ করতে না পারায় কৃষকরা চরম আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছেন। ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিরসন ও চাষাবাদ নির্বিঘ্নে করার দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের নিকট বারংবার ধর্ণা দিয়েছেন।  এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগী কৃষকরা দ্রæত সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার কৃষক ও এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দাশুড়িয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর ও মারমী  গ্রামে এই ফসলি মাঠে  প্রায় পাঁচশত বিঘা জমি জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলতো। এসব জমি আবাদ করে কৃষকের ভরণ-পোষন চলছিল। সাত বছরের বেশি সময় ধরে এসব জমি জলাবদ্ধতায় ডুবে রয়েছে। এই জমিগুলো চাষাবাদের চারটি গভীর নলকূপের ঘরগুলো জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে।

পানি নিষ্কাশনে প্রায় ২০ বছর আগে একটি নালা তৈরি করা হয়েছিল। নালাটি মারমী-শ্যামপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে  কমলা নদীতে গিয়ে পড়েছে। নালাটি খননের পর এযাবত সরকারি উদ্যোগে পুনঃখনন কিংবা সংস্কার হয়নি। আবার নালার দু’পাশে কৃষি জমি খনন করে অপরিকল্পিতভাবে তৈরি হয়েছে মাছ চাষের পুকুর। পুকুর কাটার মাটি ও পাড়ের কলাগাছ কেটে নালায় ফেলাতে এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে পানি নিস্কাশনের নালা। ফলে বছর জুড়েই ডুবে থাকছে পাঁচশত বিঘা ফসলি জমি।

মারমীর আব্দুল মালেক জানান, এখানে তার তিন বিঘা জমি আছে। এখন জমি চাষাবাদ করতে না পারায় ছয় সদস্যের সংসার চালনোর মতো অবস্থা নাই। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গিয়েছিলাম। তারা আশ্বস্ত করেছেন নালা কেটে জলাবদ্ধতা নিরসন করে দিবে। কিন্তু দৃশ্যমান কিছু এখনও হয়নি।

মারমী পূর্বপাড়া গ্রামের কৃষক মোস্তাক আলী প্রামানিক জানান, সাত বছর ধরে তিন বিঘা জমি পানির নিচে। এখারে ধান, শিম, ঢ্যাঁড়শ, পাট, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করতাম। জমি চাষাবাদেই সংসার চলতো, এখনকার অবস্থা বলে বুঝানো যাবে না।    

শ্যামপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন জানান, খাল বা নালা খনন বা পুণঃখনন করা না হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। ফসলি জমি তো পানির নিচে আছেই, সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ছে বাড়িঘরে। ঘরে-বাইরে কোথাও ভালো নেই।

 ইউপি সদস্য  রফিকুল ইসলাম মাঝি বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের সাথে নিয়ে আমি নিজে ইউএনও স্যার ও কৃষি কর্মকর্তার নিকট গিয়েছি। তারা জলাবদ্ধতা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন।

দাশুড়িয়ার চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, বিষয়টি জানার পর  ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। আশাকরি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকরা কোন ফসল চাষ করতে পারছেন না সরেজমিনে দেখেছি। জলাবদ্ধতা দ্রæত নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। অথচ এখানে জলাবদ্ধতার কারণে  শত শত বিঘা জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে প্রকল্প গ্রহনের মাধ্যমে খাল খনন করে  জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।