শার্শা সীমান্তের চোরাচালান পয়েন্ট গুলি স্বর্ণের খনিতে পরিনত

ইয়ানূর রহমান : দেশের সীমান্তবর্তী যশোর জেলার ২২টি চোরাচালান রুট যেন সোনার খনিতে পরিণত হয়েছে। এসব স্থানের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে স্বর্ণ। গত দুই মাসে রুটগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ উদ্ধার করেছে বিজিবি সদস্যরা। পাশপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে স্বর্ণ বাহকদেরকে।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের দাবি, স্বর্ণগুলো বিভিন্ন বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসে।
এরপর ভারতে পাচারের উদ্দেশে নেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিমানবন্দরে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মতৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রের।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, স্বর্ণ পাচারের সীমান্তঘেঁষা রুটগুলোর মধ্যে শার্শার বাগআঁচড়া, দাদখালী, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলোট, পাঁচভুলোট, অভয়বাস, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, বেনাপোল,
সাদীপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা, ধান্যখোলা, শিকারপুর, শালখোনা, টেংরালী, নারিকেলবাড়ীয়া, কাশিপুর, কাশিপুর বটতলা, নাভারন ও জামতলা এলাকা দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সীমান্ত এলাকা দিয়ে স্বর্ণ পাচারে মটরসাকেল চালক, ছাত্র, বেকার যুবক, রাজনৈতিক কর্মী, দিনমজুরদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
মটরসাইকেল, টিফিন বক্স, পেটের ভিতরে সহ শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে রেখে স্বর্ণ পাচার করা হচ্ছে। স্বর্ণ চোরাকারবারিরা পাচারের সময় বাংলাদেশ ওভারতের মোবাইল সিম ব্যবহার করে। কথাবার্তা চলে এসএমএসের মাধ্যমে। আকাশ পথে স্বর্ণ আসার পর বাস ও ট্রেনে সীমান্তের জেলা গুলোতে পৌঁছে যায়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চোরাকারবারিরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে স্বর্ণ এনে বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে সরবরাহ করছে। এ কাজে তারা নিজস্ব বাহক যেমন ব্যবহার করছে, তেমনি টাকার টোপে কখনো পাইলট, কখনো ক্রু, কখনো বিমানবালাকেও কাজে লাগাচ্ছে। তাছাড়া বিমানের ক্লিনার, ট্রলিম্যান এমনকি প্রকৌশলীরাও এই চক্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে স্বর্ণ পাচারে জড়িয়ে পড়ছে। যাত্রীবেশি বাহকের সঙ্গে থাকা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ইলেকট্রিক মোটর, দেহের বিভিন্ন অংশ, ট্রলির ওপরের হ্যান্ডেল ও মানিব্যাগে করে স্বর্ণ পাচারের ঘটনা ঘটছে। এছাড়া রোগী সেজে হুইল চেয়ারে, ঊরুতে অ্যাংকলেট বেঁধে, জুতার মধ্যে, বেল্ট দিয়ে কোমরবন্ধনীর ভেতরে, শার্টের কলারের ভেতরে, স্যান্ডেলের সঙ্গে, সাবান কেসে, সাউন্ড বক্সের অ্যাডাপটরে, বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বা ওষুধের কৌটা, প্যান্টের নিচে শর্টসের ভেতর, ল্যাপটপের ব্যাটারির ভেতর, মানিব্যাগে ও গলায় চেইনের সঙ্গে ঝুলিয়ে লকেট হিসেবেও আনা হচ্ছে সোনার বার। এরপর নানা কৌশলে হাত বদল হয়।

বিজিবি জানায়, ৭ সেপ্টেম্বর যশোরের পুটখালী সীমান্ত থেকে ১ কেজি ১৬৬ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ দুইজনকে আটক করা হয়। এর তিনদিন পর একই জেলার গোগা সীমান্ত থেকে দুই কোটি ৫৩ লাখ তিরাশি হাজার ছয়শ একত্রিশ টাকা মূল্যের ৩ কেজি ৪৯৮ গ্রাম ওজনের ৩০টি স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করা হয়।
এর দুদিন পর যশোরের পুটখালী সীমান্ত থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যের ২০টি স্বর্ণের বারসহ একজনকে আটক করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর যশোরের শার্শা উপজেলার গোগা সীমান্ত থেকে এক কোটি ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের ১৫টি স্বর্ণের বারসহ এক পাচারকারীকে আটক করা হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর একই জেলার রুদ্রপুর সীমান্ত থেকে ৮৯ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যের এক কেজি ২৩৩ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ সাকিব হোসেন নামে একজনকে গ্রেফতার করে বিজিবি। ১৪ অক্টোবর শার্শা সীমান্ত থেকে তিন কোটি ৪৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ৪৩টি স্বর্ণের বার উদ্ধার উদ্ধার করা হলেও পাচারকারীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। ২৭ অক্টোবর বেনাপোল পোর্ট থানার গাজীপুর গণকবর এলাকা থেকে ১ কেজি ২শ গ্রাম স্বর্ণ বার উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ শনিবার ৯টি স্বর্ণের বারসহ মো. কাউছার আলীকে আটক করে বিজিবি।