পাবনা প্রতিনিধি:
মুক্তিযোদ্ধা সংসদে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও চাঁদাবাজিতে বাধা দেয়ায় পাবনায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বাবলুর বিরুদ্ধে। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন লাল মুক্তিবার্তা ও বেসামরিক গেজেটভুক্ত ২৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেনের নিকট স্মারকলিপি দেন তারা।
নের্তৃবৃন্দ স্মারক লিপি প্রদান শেষে জেলা প্রসাশকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পথে দেখা হয় অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধ সাইফুল বাবলুর সাথে শুরু হয় বাক বিতন্ডা। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে। প্রাণ বাঁচাতে সাইফুল ইসলাম বাবলু জেলা প্রসাসক কর্যালয়ে আশ্রয় নেন।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের অন্যতম প্রধান শর্ত লাল মুক্তিবার্তা ও বাংলাদেশ গেজেটে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যাচাই বাছাইয়ের বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি পেয়ে আসছেন। গত ২৩ আগস্ট জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামে অসত্য অভিযোগ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে দাখিল করে ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গত ২৬ অক্টোবর উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষরিত পত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের আবারও যাচাই বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। যা আমাদের জন্য অপমানজনক।
মুক্তিযোদ্ধারা আরও অভিযোগ করেন, সাইফুল ইসলামা বাবলু দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিতে নানা অপকর্ম করে আসছেন।
তার মতের বিরুদ্ধচারণ করলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লেগে পড়েন এবং অসত্য অভিযোগ করে নানা ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করেন।
একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিড়ম্বনায় ফেলে তা সমাধান করে দেয়ার জন্য মোটা অংকের টাকা উৎকোচ নেন। তার এই অপকর্ম পাবনায় প্রকাশ্য ঘটনা। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারাও সাইফুল ইসলাম বাবলুর ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবি করেন তারা। একই সাথে সাইফুল ইসলাম বাবলুর শাস্তিও দাবি করেন তারা।
স্মারকলিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, তোফাজ্জল হোসেন, আজমত আলী, আখতারুজ্জামান, আক্তার আলী, ডা. মেজর (অবঃ) মনসুর রহমান, মোস্তফা কফিল উদ্দিন, সাইদুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, নজরুল মালিথা, আব্দুস সামাদ, আমিরুজ্জামান খান, আব্দুর রশীদ, ডাঃ রথিন দত্ত কুন্ডুসহ ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মেজর (অব) মনসুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আমি উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছিলাম। প্রত্যক্ষ রণাঙ্গণে যুদ্ধ করে সুজানগর এলাকায় পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা করে, এলাকার মানুষের সাথে উল্লাস করেছি। তা সবাই জানে। অথচ, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে আমার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন
তোলা হচ্ছে। আমি এই অপমানের বিচার চাই।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক পাবনা জেলা ইউনিট কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, সাইফুল ইসলাম বাবলু সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের আত্মীয়।
সে পরিচয় ব্যবহার করে তিনি প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করে অর্থ নেয়া তার পেশায় পরিণত হয়েছে। তাকে মাসোহারা না দিলেই তিনি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা আটকে দেন। ভাতা প্রদানের দিন সোনালী ব্যাঙ্কে গেলেই
আপনারা এর প্রমাণ পাবেন। স্মারকলিপি প্রদান করা মুক্তিযোদ্ধাদের লাল মুক্তিবার্তায় নাম আছে। তাদের আর কোন যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন নেই। সম্মানীভাতা আটকে দেয়ার অধিকারও কারও নেই। এটি অযথা
হয়রানি।
তবে, মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের সাথে নিজের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বাবলু। তিনি বলেন, আমি তো প্রশাসন নই, ভাতা বন্ধ করার ক্ষমতাও আমার নেই। যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের ব্যপারে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেন, সেটা নিয়ে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
গোনালী ব্যাঙ্ক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা গ্রহণের সময় চাঁদা নেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি মিথ্যা অভিযোগ, আমাকে কেন চাঁদা দেবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ তহবিলের জন্য মুক্তিযোদ্ধারাই কিছু টাকা তোলেন।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ^াস রাসেল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।