পাবনার সিংহ পুরুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল এর সাক্ষাৎকার – ৫

এবাদত আলী

(পাবনার মক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্র, পাবনার সিংহ পুরুষ নামে খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মৃত্যুবরণ করেন ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। তার এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয় ১৯৯৫ সালের ২৭ ও ২৮ মে তারিখে। যা নি¤েœ হুবহু তুলে ধরা হলো।)।
“সাক্ষাৎকার”
এসময় রবিউল পশ্চিম পাকিস্তানের এ্যাবোটাবাদ, সোহরাব উদ্দিন সোবা সিরাগঞ্জে, মোহম্মদ নাসিম ও মাসুম ঢাকায় তখন তার সক্রিয় সহযোগী ছিল হাসানুর, আব্দুস সাত্তার লালু, লুৎফর রহমান তারা, ইকবাল, টিপু বিশ্বাসের ভাগ্নে সরোয়ার এবং আটুয়ার গফুর। ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্রদের সাথে শক্তিতে টিকে থাকার জন্য ব্যায়ামবীর জামিল ভাই (মিঃ ইষ্ট পাকিস্তান) এর মাধ্যমে পাবনা জেলা স্কুল মাঠে শারীরীক কসরত করা হতো। এখানে বেশ কিছু ছাত্রকে আত্মরক্ষা মুলক প্রশিক্ষণও প্রদান করা হতো। ৬৯ এর গন আন্দোলন যখন জোরদার তখন আহমেদ রফিক ও রেজা কাদের তাকে ঢাকা ইকবাল হলের পাশে একটি জায়গাতে নিয়ে যায়, সেখানে সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে তাকে পরিচয় করানো হয় এবং সিরাজুল আলম খান পাবনার ছাত্র সমাজকে বিপ্লবী পরিষদ পঠনের জন্য তাকে দায়িত্ব দেন।
সে সময় সিরাজুল আলম খান কর্তৃক তার ডান হাতের আঙ্গুলের একটি অংশ কেটে রক্ত বের করা হয়। সেই রক্ত দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে মেখে তা শপথ বাক্য লেখান। তিনি আঙ্গুলের সে কাটা অংশটি দেখালেন। সিরাজুল আলম খান তাকে বলে¬ন আমি শুনেছি তুমি কন্ঠনালীর সঙ্গে ঠেকিয়ে মোটা রড বাঁকা করতে পার। যে কোন জানালার মোটা শিক ভাঙ্গতে পার। এই শক্তিকে দেশের জন্য কাজে লাগাতে হবে। তোমাকে গোটা পাবনার দায়িত্ব নিতে হবে। ছাত্রলীগের গতিধারার সঙ্গে সংগ্রামে নামতে হবে। জন সমর্থন আনতে হবে প্রত্যেক থানায় প্রত্যেক ইউনিয়নে লোক বাছাই করে সংগঠিত করতে হবে। আমিও সেদিন তার কাছে অঙ্গীকার করেছিলাম। আর সেখান থেকে ফিরে এসেই পাবনাতে ছাত্রলীগের বিপ্ল¬বী পরিষদ গঠন করা হয়। তখন থেকে আমাদেরও শে¬াগান ছিল জ্বালো জ্বালো। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হয়ে গেল আওয়ামী লীগের আহমেদ রফিক নির্বাচনে জয়লাভ করে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করার মুহুর্তে ছাত্র ইউনিয়নের নকশাল নামধারিরা তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করলো। আহমেদ রফিকের ছোট ভাই আহমেদ করিম তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমি ছাত্রলীগের পাবনা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক। আমরা তখন নকশালদেরকে প্রতিহত করার জন্য পাবনা জিলা স্কুলে কছিমুদ্দিন মওলানা স্যারের সহায়তায় সুবাস বাবুকে দিয়ে এক ধরনের পাইপগান তৈরি করতাম। সেলিম (শহীদ সেলিম, যার নামানুসারে সেলিম নাজির উচ্চ বিদ্যালয় আছে) তখন পাক আর্মিতে চাকুরী করতো সে একটি পিস্তল নিয়ে আসে। স্কয়ারের তপন কর্তৃক রূচিতা গ্র“প থেকে আমাকে (বকুলকে) একটি পিস্তল কিনে দেওয়া হয়। বেবী ইসলাম, জহুরুল ইসলাম বিশু, রক,ু বাবু এরা তৈরি করতো পেট্রোল বোমা। গোলাম আলী কাদেরী, সানিক দিয়ারের হাবিব রেজা, বিড়ি শ্রমিক রাজা, গফুর তাদের সঙ্গে ছিল। একদিন নকশালেরা গোলাম আলী কাদেরীকে হত্যার জন্য ঘিরে নিলে উভয় পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। ইমাম আলী চাকুর আঘাতে আহত হয়। নকশালদের মধ্যে শহীদ আহত হয়। এদিকে পাবনা ইসলামিয়া কলেজের (বর্তমানে শহীদ বুলবুল কলেজ) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ১জন খুন হয়। আমাকে ঐ খুনের আসামী করা হয়। এছাড়া তখন আমার বিরুদ্ধে ৭/৮টি মামলা চাপানো হয়। এ সময় একদিন পুলিশ তাড়া করলে পলায়নরত অবস্থায় জাকের হাজীর বাসার ৫ ইঞ্চির গাথুনি ইটের দেওয়াল কনুই দ্বারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে দৌড় দেই। কিন্তু পুলিশ পিছনে পিছনে তাড়া করে চলছেই। অগত্যা অপর একটি বাসার দোতলা দিয়ে ছাদে উঠে আখেরী নিসান সিনেমার শেরে গুলের মত একটি পানির ড্রামের মধ্যে লুকিয়ে থেকে সে যাত্রা পুলিশের হাত থেকে রেহাই পাই। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।