পাবনা প্রতিনিধিঃ
উপজেলা ও পৌর কমিটিসহ অধিনস্থ বিভিন্ন ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা নিয়ে পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অভ্যন্তরেই চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এবিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাবর চিঠি দিয়েছেন আহ্বায়ক কমিটির দুই যুগ্ম-আহ্বায়ক।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) ডাকযোগে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ খান মন্টু ও যুগ্ম-আহবায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা এই চিঠি পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা ।
এতে বলা হয়েছে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সদস্য সচিব এডভোকেট মাসুদ খন্দকার আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একতরফা ভাবে সুজানগর উপজেলা ও পৌর এবং সাঁথিয়া পৌর বিএনপির পকেট কমিটি করায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। কিসের বিনিময়ে এই আহবায়ক কমিটি দিচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। আহবায়ক ও সদস্য সচিব যেসব এই সব কমিটিতে আহবায়ক ও সদস্য সচিব করেছে তাদের মধ্যে কিছু কিছু সদস্য দীর্ঘ ১০/১২ বছর দলীয় কোনও কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিল না। তারা অতীতে যেমন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছে বর্তমানেও চলছে। এমন ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা হলেও ত্যাগি ও পরীক্ষিত কোনও ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়নি। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য সদস্য সচিব মাসুদ খন্দকার যুগ্ম-আহবায়কদের সাথে আলোচনা করছে না।
এবিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও ফেসবুকে চিঠিটি দেখেছি। তাদের অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে বলতে পারেন, অফিসে এসে বলতে পারেন। কিন্তু এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারেন না। এটা দিয়ে তারা মহা অন্যায় করেছে। গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছে। সাধারণত কোনও কমিটি করতে গেলে আহবায়ক-সদস্য সচিবই ঠিক করে, তারপরও আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিভিন্ন কমিটি দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব কমিটি দিয়েছি- তারা বলুক যে ওই সব কমিটির অমুক অমুক অযোগ্য আর যোগ্যদের নাম বলুক। আমরা বিষয়টি দেখবো। কিন্তু এইভাবে ফেসবুকে দিতে পারে না। তাদের অভিযোগগুলো ঠিক না। যাদের জ্ঞানের অভাব আছে তারা এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারে। এই সময়ে এটা দেয়া ঠিক হয়নি।’
চলতি বছরের ২২ আগস্ট সংক্ষিপ্ত থেকে পরিধি বাড়িয়ে পাবনা জেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল দুই বছরের মাথায় পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
উল্লেখ্য, পাবনা জেলা বিএনপির বহুল আলোচিত-সমালোচিত তৎকালীন কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০১৮ সালের ৭ জুলাইয়ে ৪৩ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব ও সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের ওই কমিটিও জেলার নেতাকর্মীদের আলোর মুখ দেখাতে পারিনি।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য দলকে শক্তিশালী করতে যোগ্য, সাহসী, নিবেদিত ও সংগ্রামী নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি গঠন করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠায় কেন্দ্রীয় বিএনপি। তিন মাসের মধ্যে উপজেলা, থানা ও পৌর এলাকায় প্রতিনিধিদের সম্মেলনের মাধ্যমে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে বলা হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের পেরিয়ে দুই বছরেও কোনও উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি দিতে পারেন তারা।
পুনর্গঠন তো দূরের কথা আগের মতোই কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে জেলা আহবায়ক কমিটি। দুই বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুর অনুসারী সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের অনুসারীরা। এমন পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপির কর্মকাণ্ডে নেমে আসে স্থবিরতা। দ্বিতীয় দফায় আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে আহবায়ক কমিটি গঠন করলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বর্তমান আহবায়ক কমিটিও। ফলে নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে আগের মতোই নিজেদের গোছাতে পারেনি পাবনা জেলা বিএনপি।