সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্পান, ইয়াসের পর এবার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ঘূর্ণিঝড় আইলার ও আম্পানের ক্ষয়-ক্ষতি এখন কাটিয়ে উঠতে পারিনি উপকূলীয় মানুষেরা। এর মধ্যেই ধেয়ে আসছে সিত্রাং। এর প্রভাবে রবিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকার আকাশ রয়েছে মেঘাচ্ছন্ন। মাঝে মধ্যেই হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সিত্রাং-এর আঘাত ও নদীতে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় উপকূলীয় এলাকার মানুষের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, উপকূলীয় এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধগুলো নাজেহাল অবস্থায় আছে। ঝড়ের প্রবল আঘাত ও নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে আইলার মত আবারও উপকূলীয় জনপদ লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে উপকূলের হাজারো মানুষ। ভেসে যাবে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি মাছ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আক্তার হোসেন বলেন, ঝড়ের পূর্বাভাস জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছেন। ঝড়ের আগে এবং পরে কি কি করতে হবে এবিষয় প্রতিনিধিদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শ্যামনগর উপকূলীয় এলাকায় ১০৩ টা সাইক্লোন সেন্টারসহ বিভিন্ন স্কুল গুলো পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতের আগ মূহুর্তে মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য স্ব-স্ব এলাকায় প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়েছে।
শ্যামনগরে পাউবো কর্মকর্তা (এসো) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কাশিমাড়ীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের পাউবো’র বেড়িবাঁধের দুর্বল জায়গা গুলোতে সংষ্কার করা হচ্ছে।
বুড়িগোয়ালিনী বন স্টেশনের কর্মকর্তা (এসো) নুরে আলম বলেন, ঝড়ের আগেই বন বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
রবিবার সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৪) এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিসহ জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথা জানায় অধিদপ্তর। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড়টি নিম্নচাপ আকারে এখনো বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। আগামী ২৫ তারিখ অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ইতিমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এক নম্বর সতর্কতা সংকেত অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী সতর্ক সংকেত জানিয়ে দেওয়া হবে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র প্রভাবে রবিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে সাতক্ষীরার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। এ ছাড়াও সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩৫টি পয়েন্টের ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে থাকায় ওই এলাকার জনপদগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার মধ্যে ২০০ কিলোমিটারের ৩৫টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে ঝূঁকিপূর্ণ এলাকায় দূর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।