সঞ্জু রায়, বগুড়া: বগুড়ায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণে ৭ বছরের অবুঝ শিশু তাবাচ্ছুম হত্যার দায়ে ৪ যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জেলা আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক নুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির এই রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন বাপ্পি আহম্মেদ, কামাল পাশা শামিম রেজা ও লাভলু শেখ। এদের সবার বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার নছরতপুর গ্রামে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একই এলাকার ৭ বছরের মাহি উম্মে তাবাসসুমকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করে গ্রামের বাঁশঝাড়ে ফেলে রাখা হয়। পরে খোঁজাখুজিঁর পর ওই রাতে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনেরা। এ ঘটনার পরপরই বগুড়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর পুলিশ ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
জানা যায়, তাবাচ্ছুমের বাবা-মা ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। সে ও তার বোন দাদির সঙ্গে বসবাস করত। ঘটনার দিনে গ্রামের ওয়াজ মাহফিল চলছিল। সেখানে মিষ্টি কিনতে কয়েকবার যায় অবুঝ শিশুটি। সন্ধ্যার পর আবার মিষ্টি কিনতে গেলে সেখানে বাপ্পী তাকে বাদাম কেনার লোভ দেখিয়ে মাহফিলের পাশের একটি কলেজের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে বাকি আসামীরা আগে থেকে অবস্থান করছিল। এর পর তারা ওই শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এদিকে অনেকক্ষণ নিখোঁজ থাকায় পরিবারের সদস্যরা তাবাচ্ছুমকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলে এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে গ্রামের বাঁশঝাড়ে তাকে পাওয়া যায়। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাবাসসুমকে মৃত ঘোষণা করে।
এ ঘটনায় পরের দিন তার বাবা বেলাল হোসেন খোকন অজ্ঞাত আসামীদের নামে থানায় মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তে ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর চার আসামী গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর বাপ্পী, শামিম ও লাভলু আদালতে জবানবন্দি দেন। আর কামাল পাশা জবানবন্দি দেন ২৯ তারিখে।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী স্পেশাল পিপি আশেকুর রহমান সুজন জানান, এ মামলায় ডিএনএ টেস্ট করা হয়। এতে তাবাচ্ছুমের মরদেহে আসামীদের বীর্যের উপিস্থিতিও পাওয়া যায়। ধর্ষণ ছাড়াও ময়নাতদন্তে ওই শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে পুলিশ ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বরে আদালতে মামলার পূর্নাঙ্গ চার্জশিট জমা দেয়।
তিনি বলেন, মামলায় সব সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে রোববার রায় ঘোষণা করেন বিচারক। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেক আসামীকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর নিহত শিশুর বাবা বেলাল হোসেন বলেন, আসামীদের সবাইকে তার মেয়ে চিনত। ওদেরকে ভাই বলে ডাকতো। তার মেয়ের সাথে যে অন্যায় হয়েছে এই রায়ে তারা মেয়েকে হারালেও তার হত্যার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হলো।