সঞ্জু রায়, বগুড়া: বগুড়ায় স্ত্রীকে হত্যার ২৬ বছর পর স্বামীসহ হত্যায় জড়িত তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাবিবা মন্ডল এই রায় দেন। এছাড়াও রায়ে দণ্ডিতদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডিত আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার পালসন গ্রামের মৃত আরিফ উল্ল্যাহ ফকিরের ছেলে জিল্লুর রহমান, মৃত জহুরুল ইসলামের ছেলে গোলাপ হোসেন ও খারতাপাড়ার মফিজ উদ্দিনের ছেলে ফরহাদ মন্ডল। নিহত গৃহবধূর নাম চায়না খাতুন। তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাপ হোসেনের স্ত্রী।
বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) নাছিমুল করিম হলি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাবার অমতে চায়নাকে বিয়ে করে গোলাপ। শেরপুরের মির্জাপুরে বাস করছিলেন তারা। কিন্তু বিয়ের পর সম্পর্কের বনিবনা না হওয়ায় বিয়ের এক বছর পর তাদের বিচ্ছেদও হয়। কিন্তু তালাক হলেও চায়না ও গোলাপের মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুন্ন থাকে। এ বিষয়টি নিয়ে গোলাপের সঙ্গে তার পরিবার চাপ সৃষ্টি করছিল এবং বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছিল। এসব কারণে গোলাপ চায়নার সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে বিচ্ছিন্ন করতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ রাতে উপজেলার পালশান গ্রামে চায়নাকে ডেকে নিয়ে আসে গোলাপ। এ সময় গোলাপকে সহযোগীতা করার জন্য জিল্লুর ও ফরহাদ উপস্থিত ছিলেন ঘটনাস্থলে। সেখানে গল্প করার সুযোগে চায়নার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন দণ্ডিত আসামীরা।
এরপর আসামীরা চায়নার মরদেহ ওই গ্রামের এক বাড়ির সেফটি ট্যাংকির ভিতরে লুকিয়ে রাখে। এ ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পর গ্রামবাসী মরদেহ উদ্ধার করে। বিষয়টি জানাজানি হলে চায়নার পরিবার মরদেহ শনাক্ত করে সেদিনই তার ভাই হাফিজার রহমান বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
সেই মামলায় দু বছর পর জুন মাসে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এরপর মামলায় দীর্ঘদিন ধরে শুনানি চলছিল। এর মাঝে মামলার আরেক আসামী গোলাপের বাবা জহুরুল হক মারা যান। পরবর্তীতে বুধবার মামলার বাকি তিন আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। এপিপি নাছিমুল করিম জানান, দীর্ঘদীন পর হলেও নিহত চায়নার পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছেন। এই রায়ে সকলেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।