কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনি ছাত্রদের জুলাই ঘোষণা দিতে দেননি। এটা অন্যায় কাজ হয়েছে। ছাত্ররা আজকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। এই ঝুঁকির দায় কে নেবে? কারণ বিএনপি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেন, সব একই জিনিস। এরা তো এই তরুণদের বাঁচতে দেবে না।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘রাষ্ট্র গঠনে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ও তার বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন সংশোধন আন্দোলন নামের একটি সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহার বলেন, আপনি (অধ্যাপক ইউনূস) যে জুলাই ঘোষণা করতে দেন নাই, কী যুক্তিতে দিলেন না? বলছেন, আপনি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করবেন।একটা কথা বলতে চাই, বাপের নাম কি ছেলে দেয়?
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার। ঘোষণাপত্র আসবে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। এখন বিষয়টি আবার সামনে এনেছেন ফরহাদ মজহার।
বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, আপনারাই বলছেন, অধ্যাপক ইউনুসকে পাঁচ বছর থাকতে। উনি কী করে থাকবেন পাঁচ বছর। আপনি তো ভুল করে ফেলেছেন প্রথম দিনই। দ্বিতীয় তর্কটা করছেন যে ইউনুস নির্বাচিত না। আরে ভাই নির্বাচিত না মানে কী। তিনি রক্তদানের মধ্য দিয়ে হয়েছেন। আমি রক্ত দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছি। গণতন্ত্র মানে শুধু নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফরহাদ মজহার কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে বলেন, যদি তোমরা অভ্যুত্থান করতে পারতা, তাহলে তোমরাই তো থাকতা ক্ষমতায়। তোমরা তো পারো নাই। তোমরা তো শেখ হাসিনার পরাজিত শক্তির মতো। এখন তোমরা ঘুরতেছ কী কথা বইলা-নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে রক্ষার জন্য লড়ছেন জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, আমরা লড়তেছি অন্তর্বর্তী সরকারকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করার জন্য। আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করব। কিন্তু আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) ভুল করতে পারবেন না। কারণ, আপনার ভুলের ওপর আমাদের জীবন নির্ভর করছে। আমাদের কথা শুনতে হবে। আমরা অতি দ্রুত আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। এ কথা পরিষ্কার বলছি। আমাদের সময় দিতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে কঠিন সময়ে মাঠে ছিলেন উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, আপনি (অধ্যাপক ইউনুস) আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আমরা আপনার মূল্য বুঝব। আমরা আপনার মর্যাদা বুঝব।
এদিকে গতকাল ঢাকার বিএমএ ভবনের শহীদ ডা. মিলন হলে সম্মিলিত বাংলাদেশ পরিষদ আয়োজিত ‘কেমন দেশ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় ফরহাদ মজহার বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যারা ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের, তারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করত। এনসিপি কিন্তু জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করে না, এটা মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমি যখন একটা দল মানি, তাহলে আমি সেই দলকে রিপ্রেজেন্ট করি। তোমাদের কমপিট করতে হবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের মডেল দ্বারা আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তরুণদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে। এখন এনসিপি এসেছে, তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো একই। ওদের রাজনৈতিক দল ওদের জনগণকে রিপ্রেজেন্ট করে।
তরুণদের ব্যাপারে অসম্ভব রকম চিন্তিত জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, আজকে যখন ড. ইউনূস তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, একবারও তাদের বলেননি যে তোমরা নিজেরাও নির্বাচন করে আসো। নির্বাচন চাচ্ছ আমাদের কাছে ভালো কথা, তো তোমরা আগে নিজেরা নিজেদের মধ্যে নির্বাচন করে আসো। তিনি বলেন, তাদের মধ্যে নির্বাচন নেই, কাউন্সিল নেই। এই যে ব্যাপারগুলো রয়ে গেছে, তরুণরা এই ব্যাপারটা খেয়াল করছে না। তাই আমি তরুণদের ব্যাপারে অসম্ভব রকম চিন্তিত।