সারাদেশ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মহামারিতে যখন আতঙ্কিত অবস্থায় জীবনযাপন করছে তখনো থেমে নেই নওগাঁ জেলায় মাদক সেবন ও ব্যবসায়ীদের রাজত্ব। ভারতে বিধান সভা নির্বাচনের কারনে হিলি-বর্ডারসহ দু,দেশের কঠোর নিরাপত্তার কারনে মাদক চোরা-কারবারি মহল একেবারে নরবড়ে তবুও থেমে নেই মাদক পাচার চক্র। পুলিশের কঠোর তদারকী বিজিবি ও র্যাবের টানা অভিযানে বাংলাদেশে একেবারে নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিল নেশাদ্রব্য কিছুটা কমলেও এসেছে নতুন এক নাম এমকেডিল, মোকাডিল। বর্তমানে এ জেলায় ফেনসিডিলের মূল্য ২০০০/- টাকা, এমকেডিলের মূল্য ১০০০/- টাকা ও মোকাডিলের মূল্য৭০০ শত টাকা। মহাদেবপুরের বিখ্যাত মাদক স্পট-মাতাজি,পতœীতলার নাম করা মাদক স্পট ডাঙ্গাপাড়া ও ধামইরহাটের এখন হাতে গোনা কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী খুবই চতুরতার সাথে বর্ডারের কঠোর নিরাপক্তা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে ফেনসিডিল, এমকেডিল ও মোকাডিল নামের এসব নেশাদ্রব্য শুকৌশলে নিয়ে আনছে। এদিকে হিরোইন-ইয়াবার বদলে ওষধের বিভিন্ন ফার্মেসীগুলো থেকে যুবসমাজ বেছে নিচ্ছে পেন্টাডল টাপেন্ডাসহ নানান ধরনের বিকল্প পথ। আর মাদক সেবনের অর্থ সংগ্রহ করতে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজেও জড়িয়ে পরছে যুবসমাজ। দ্রæত এইসব প্রতিকার না করা গেলে যুবসমাজ প্রায় ধ্বংসের পথের দিকে এমন দুঃচিন্তায় ভুগছে ওইসব মাদকসেবীদের পরিবার।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের কড়া অভিযান অব্যাহত থাকার পরেও কেন কমছে না মাদকের এই ভয়াবহতা এমন প্রশঃœ বিরাজ করছে সচেতন মহলদের মাঝে।
গোপন সুত্রে জানা যায়, মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের চকরাজা উত্তর পাড়া গ্রামের সিরাজের সাত ছেলের মধ্যে তিন ছেলে চিহি¥ত মাদক ব্যবসায়ী। বাজারের পার্শবতী এলাকা স্বর-স্বতীপুর দয়ালের পরিত্যাক্ত রাইস মিল ও গ্রামের বাঁশঝাড় এলাকাগুলোর মধ্যে তৈরী ও বিক্রি হচ্ছে চোলায় মদ। বাজার থেকে গুড় কিংবা চিঠা কিনে সেলাইনের পাইপের মাধ্যমে আগুনে পুড়ে তৈরী করা হয় এই মদ। ৬০-৭০ কেজিতে বিক্রি হওয়ায় সেই মদের নেশায় নিজ জেলা এবং পাশ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেধে ছুটে আসছেন মাদকসেবীরা।
অন্যদিকে সীমান্তের কোল ঘেসা এলাকা সাপাহার পাতাড়ী, খঞ্জনপুর, ধামইরহাট রুপনারায়ণপুর, কালুপাড়া, খয়েরবাড়ী, দাদনপুর, আলতাদিঘী, চন্ডিপুর, দূর্গাপুর, হঠাৎপাড়া সহ বেশ কিছু গ্রামের স্পট গুলোতে সন্ধার পর থেকেই চলে মাদক সেবীদের আনাগোনা। রাত যত গভীর হয় মটোরসাইকেলের আনাগোনা ও তত বৃদ্ধি পায়। অপর দিকে শল্পী বাজার, হরিতকী ডাঙা বাজার এলাকার যুবসমাজরা ঝুঁকছে টাপেন্টাডল ও পেন্টাডল নামক মরণ ব্যাধী ওষুধে। এদিকে চকময়রাম হাটনগর এলাকার যুবসমাজরা ও ঝুঁকছেন গাঁজা সেবনে। উপজেলার কমবেশি প্রায় সব ফার্মেসীগুলোতে মিলছে একল ট্যাবলেট। নির্ধারিত মূল্যের বাহিরে ইচ্ছে মত দাম লাগিয়ে যুবসমাজের হাতে তুলে দিচ্ছেন অসাধু ওই ফার্মেসী ব্যবসায়ীরা। এতে করে তরতাজা তরুনদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব দিনদিন ধ্বংসের পথের দিকে যাচ্ছে।
সদ্য জেল ফেরত মাদক মামলার আসামী মুক্তার হোসেন বলেন, আমি গত,১৮ মার্চ ২০২১ সালে মাদক মামলায় নওগাঁ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাই এবং জেল সুপারের পক্ষ থেকে মাদক মুক্ত থাকার জন্য একটি ভ্যান গাড়ি উপহার পেয়ে থাকি। কিন্তু জেল থেকে মুক্তি পাবার পর উপহার পেয়ে নিজ বাসায় এসে আবারো মাদকের কবলে পড়ি। জেল সুপারের উপহার দেয়া ভ্যান আমি আমার পাড়ার শ্যালার কাছে ৩ হাজার টাকায় বন্ধক রাখি পড়ে টাকা শেষ হলে আমার বাচ্চার মাটির ব্যাংকে জমানো কিছু পাঁচ টাকার কয়েন নিয়ে আসি নেশা কেনার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদকসেবন কারীর পিতা বলেন, হাতের নাগালে ওসব ট্যাবলেট পাওয়ার জন্য সঙ্গ দোষে তার ছেলে নষ্টের দিকে গেছেন। বিভিন্ন পন্থায় ছেলেকে ওসব দিক থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হতে হয় তাদের কে। প্রশাসনের সহায়তা চান তারা।
নওগঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নজরুল ইসলাম (জুয়েল) জানান, আমি সদ্য সদর থানায় যোগদান করেছি মাদকের বিষয়ে কাউকে কোন ভাবে ছাড় দেওয়া হবেনা। পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনামুলক বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
নওগাঁ পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া,বিপিএম জানান, মাদক নির্মুলে জেলা পুলিশ নওগাঁ সদরসহ জেলার প্রতিটি উপজেলায় খুবই তৎপর রয়েছে। মাদকের বিষয়ে কাউকে কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনামুলক মাইকিংসহ বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।