বগুড়ার ফুলতলা এলাকায় গত ২২শে ফেব্রæয়ারী সোমবার প্রকাশ্য দিবালোকে দুবৃর্ত্তদের হামলার শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন মারা যায় মরহুম আব্দুস সাত্তারের ছেলে যুবলীগ কর্মী ফোরকান। মারা যাওয়ার ১দিন পর বুধবার দিবাগত রাতে নিহত ফোরকানের মা শাহানা বেওয়া বাদি হয়ে বগুড়া শাজাহানপুর থানায় নাদিম প্রামানিক(৩৫) কে প্রধান আসামী এবং ফুলতলার মৃত শুকুর আলীর দুই ছেলে মো: নান্টু (৩৭) ও মো: ঝন্টু (৩৯) সহ এজাহার নামীয় মোট ১৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন কিন্তু ঘটনার এতদিন অতিবাহিত হলেও এজাহার নামীয় মূল আসামীদের ধরতে পারেনি শাজাহানপুর থানা পুলিশ।
মামলা দায়েরের পরদিন এজাহারের ১২নং আসামী, এই মামলার প্রধান আসামী নাদিম প্রামানিকের ফুফাতো ভাই সাগর (৩২) কে গ্রেফতার করলেও বাকি আসামীদের গ্রেফতারে ধীরগতি তে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়েছে নিহতের পরিবার। এদিকে ফোরকান হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক বিচারের দাবিতে বেশকিছুদিন আগে শহরের ফুলতলা এলাকায় এলাকাবাসি মানব-বন্ধনেরও আয়োজন করেছিল কিন্তু দিনশেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার এস.আই ওয়াহিদুজ্জামান এর উদাসীনতায় মূল আসামীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়ে গেছে বলে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে নিহত ফোরকান এর বড় ভাই ফরহাদ জানান, আসামীরা যেহেতু এখনো বাহিরে তাই সে তার মা কে নিয়ে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সেই সাথে দ্রæততম সময়ে আসামীদের গ্রেফতার ও ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছে তিনি।
অপরদিকে শাজাহানপুরের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের অনেকেই এস.আই ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে এনেছে চাঞ্চল্যকর নানা অভিযোগ যা নিয়ে গত কয়েকদিন হলো গোপনে নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে শাজাহানপুর এলাকায় মর্মে শোনা গেছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, এই ফোরকান হত্যা মামলার আসামীদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তার তবে তা কতটুকু সত্য তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে হত্যাকান্ডের পর আসামীদের গ্রেফতারে তেমন কোন সফলতা না থাকলেও হঠাৎ করেই গোপনে শাজাহানপুর সাজাপুর মৌজায় ২৪৩৫ দলিলের মূলে ৬ শতক জমি কেনেন এই পুলিশ কর্মকর্তা যার সরকারি আনুমানিক মূল্য হবে প্রায় ১৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা বিষয়টি অনেকেই ভিন্ন খাতে সন্দেহের তীর হিসেবে দেখছে। বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের সাথে অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ তার নিত্যদিনের স্বভাব, তবে হঠাৎ করে তার এই জমি কেনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।
এ বিষয়ে শাজাহানপুর থানার এস.আই ওয়াহিদুজ্জামানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, তিনি কোন গরীব ঘরের সন্তান নয়। সে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ছিল। চাকরির পয়সা দিয়েই জমি কিনেছে সেটি কোন অপরাধ হতে পারেনা। পূর্বে ছাত্রলীগ করার কারণে তার উপর অনেকের ক্ষোভ থাকতে পারে তবে তিনি নিরপেক্ষ সর্বদা। আর আসামীদের গ্রেফতারের বিষয়ে তার উপর উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাপক চাপ রয়েছে ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলমান আছে মর্মে জানান তিনি।
উক্ত বিষয়ে জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র ও সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, বগুড়া জেলা পুলিশ অপরাধ দমনে সর্বদা আপোষহীন। ফোরকান হত্যা মামলায় জড়িতদের গ্রেফতারে কাউকেই ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা, গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলমান আছে। আর তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাও খতিয়ে দেখা হবে মর্মে জানান এই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, বগুড়া শহরের এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহীনের মামাতো ভাই ২টি হত্যা মামলার আসামী ফোরকান এবং সন্ত্রাসী মজনুর ভাতিজা হচ্ছে নাদিম প্রাং যাদের দ্ব›দ্ব দীর্ঘদিনের। পারিবারিক দীর্ঘদিনের শত্রæতা এবং পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন ক্ষোভ থেকে ফোরকানকে হত্যা করা হয়েছিল মর্মে জানিয়েছে পুলিশের একাধিক সূত্র।