বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার নারী কবিতায় লিখেছেন, সাম্যের গান গাই/ আমার চক্ষে পুরুষ-রমনী কোন ভেদাভেদ নাই!/ বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। কবির দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ না থাকলেও বাস্তবিক জগতে আমরা নারী-পুরুষের ভেদাভেদ লক্ষ্য করে আসছি সুদীর্ঘ কাল থেকে। তাই নারীদের প্রতি যথার্থ সম্মান জানাতে প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নয়। ৮ মার্চ অন্য দিন গুলোর মতোই সাধারণ একটি দিন হলেও নারীদের সম্মান জানাতে আমাদের দেশেও প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। এ দিবসটি পালনের পেছনে রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।
১৯০৮ সালে নিউইয়র্কে নিদৃষ্ট সময় অনুযায়ী কাজ, নারী-পুরুষের সমান বেতন দাবীতে সোশ্যালিস্ট পার্টি অফ আমেরিকা বস্ত্র শ্রমিকদের সম্মান আদায়ে ধর্মঘট শুরু করেন। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারী আমেরিকায় প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। ১৯১০ সালে কোপেনহেগেনের উদ্যোগের পর, ১৯ মার্চ অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানী, সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক নারী দিবস চিহ্নিত হয়। নারীর কাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রশিক্ষণ ও নারী-পুরুষের কাজের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদ জানান। রাশিয়ার নারীরা রুটি ও শান্তির দাবীতে নারী দিবস পালন করেন। এসময় তারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতাও করেন। শান্তি বিষয়ক কার্যক্রমের সমর্থনে ৮ মার্চ ইউরোপের নারীরা মিছিল করেন। ১৯১৩-১৯১৪ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হয়ে ওঠে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদের কন্ঠস্বর। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে ৮ মার্চ তারিখটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষণা করে।
সারা বিশ্বজুড়ে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করার চেষ্টার প্রক্রিয়া হিসেবে জনসচেতনতা বাড়াতে পালন করা হয় এই বিশেষ দিনটি। পাশাপাশি এ দিবস আমাদের নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের কাজের প্রশংসা করতে উদ্বুদ্ধ করে। নারীরা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করায় বর্তমান সময়ে নারীরা এ দিবসটিকে উৎসব হিসেবে দেখেন। সবার উচিত এ দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া।
নারী একটি পরিবারের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। গ্রাম এলাকায় হাঁস, মুরগি, গবাদী পশু পালনে একজন নারী গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অনেকে গৃহে গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া পালন করে থাকেন। এসব পশু যেমন আমাদের খাদ্যের যোগান দেয় তেমনি আমাদেরকেও গৃহপালিত পশুর খাদ্যের যোগান দিতে হয়। পাবনার চাটমোহরের মুলগ্রাম ইউনিয়নের মহরমখালী গ্রামের পঁচাত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মা আনোয়ারা খাতুন দুপুরের রোদে পুরে গৃহপালিত পাঁচটি ছাগলের জন্য রাস্তার ঘাস কাটছেন। চাটমোহরের মহরম খালী এলাকা থেকে সম্প্রতি ছবিটি তুলেছেন- ইকবাল কবীর রনজু।)