সাংবাদিকতার সাড়ে তিন যুগ(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমাদের সমাজ জীবনে সমস্যা প্রচুর। এখানে নানা প্রতিকুলতার মাঝ দিয়ে চলতে হয়। তাই সংবাদ বা খবরের সুত্র যে কোন সময় হাতের নাগালের মধ্যে পাওয়া খুবই সহজ। কথায় বলে কুসংবাদ বাতাসের আগে ধায়। কথাটি আসলেও সঠিক। কোন স্থানে কোন অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা কিংবা রটনা হলেই তা মানুষের মুখে মুখে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
আমাদের সমাজে কোথাও কোন অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা ঘটলেই তা শোনার পর কিংবা উক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর ঐ ব্যক্তি ঘটনাটি দ্রæত অন্যের নিকট ব্যক্ত করতে পারলে তৃপ্তি লাভ করে আর না পারলে যেন তার পেট ফুলে যাবার জোগাড় হয়। সংবাদ বাহক তখন ঘটনা সম্পর্কে কোন বাছ-বিচার কিংবা সত্য-মিথ্যার তোয়াক্কা করেনা।
কিন্তু একজন সাংবাদিকের কাছে কিংবা সংবাদপত্রের বেলায় যে কোন খবরই খবর নয়। যেকোন ঘটনাই পত্রিকার পাতায় সংবাদ বা খবর হিসেবে স্থান পায়না। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলতে হয়। সংবাদটি পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরা যাবে কিনা এবিষয়ে ষ্পষ্টাস্পষ্টি ধারণা থাকা চাই। পাঠক সমাজের কাছে কিভাবে কোন আঙ্গিকে তুলে ধরলে কেমন হৃদয়গ্রাহি হবে তার বাছ-বিচার করতে হয়। এছাড়া সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকে। মিথ্যা বা ভিত্তিহীন কোন সংবাদ যা নাকি গুজব হিসেবে মানুষের মাঝে ছড়ায় তা খবর হলেও খবরের কাগজের পাতায় তার কোন স্থান নেই।
সাংবাদিকতা বা সংবাদপত্রের নীতিমালায় তা অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। এক্ষেত্রে সংবাদ বা খবর পরিবেশনে কোন ব্যক্তিই হোক আর কোন সংবাদ সংস্থাই হোক তাদেরকে এধরেণের নিয়ম-নীতি অবশ্যই মেনে চলতে হয়। ভিত্তিহীন ভুয়া ও মনগড়া সংবাদ পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হলে শুধু পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকেরই মান যায়না, সংশিলিষ্ট এলাকার সাংবাদিকের প্রাণ যাবারও যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। তাই সংবাদের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি লক্ষ রাখা প্রয়োজন তাহলো সংবাদের সত্যতা। এই সত্যতার ব্রত নিয়েই আমাদের সাংবাদিকতার হাতে খড়ি হয়।
আমরা যখন ১৯৭৮ সালে সাংবাদিকতা শুরু করি তখন এলাকায় সাংবাদিকের সংখ্যা খুবই কম। বলতে গেলে পাবনা জেলা ব্যাপি (সিরাজগঞ্জ জেলাসহ) হাতে গোনা কিছু সাংবাদিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ পাঠাতেন। এর মধ্যে সার্বক্ষণিক সাংবাদিক দশের অধিক নয়। আর অন্যদের সাংবাদিকতা ছিলো নিছক সৌখিন। যাকে বলা হতো পার্টটাইমার জার্নালিষ্ট। তারা কোননা কোন পেশার সঙ্গে জড়িত থেকে বেছে-কুছে সংবাদ পাঠাতেন।
প্রকৃত পক্ষে একজন সাংবাদিক হতে গেলে তাকে অনেক তত্বজ্ঞানের অধিকারি হতে হয়।
পাঠক সমাজের কাছে কোন সংবাদ কিভাবে কোন আঙ্গিকে তুলে ধরলে কেমন হৃদয়গ্রাহি হবে তার বাছ-বিচার করতে হয়। এছাড়া সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকে। মিথ্যা বা ভিত্তিহীন কোন সংবাদ যা নাকি গুজব হিসেবে মানুষের মাঝে ছড়ায় তা খবর হলেও খবরের কাগজের পাতায় তার কোন স্থান নেই।
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে শহর সভ্যতা আজো গড়ে ওঠেনি। তাই শহর বা নগর সভ্যতার উপর নির্ভর না করে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে সাংবাদিকগণ সংবাদ পরিবেশন করে সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এক বিশেষ অবদান রখে চলেছেন। প্রকৃতপক্ষে একজন সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক হতে গেলে তাকে অনেক তত্বজ্ঞানের অধিকারি হতে হয়। তথ্য উদঘাটনে পারদর্শী ও বিচক্ষণ হতে হয়। সেকারণে প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে প্রদত্ত ডিগ্রির। কিন্তু আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসকল সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক রয়েছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজম করা না থাকলেও বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের মধ্যে অনেকেই এসম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারি।
এ প্রসঙ্গে একথা বলা যায় যে, ৪০ এর দশকেও এদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিশু জন্ম লাভের পর মায়েরা বাঁশের “চোঁচ” দিয়ে সন্তানের নাড়ি কাটতো। আজকের বিজ্ঞানের যুগে যা নাকি একেবারেই বেমানান। তখনকার দিনে প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ না থাক, সন্তানকে তো আর মায়ের ফুলের নাড়ির সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা যাবেনা। পৃথিভুমে পদার্পণকারি সন্তানের নাড়ি কাটতেই হবে। কাটা চাই। নইলে মাতা ও সন্তান উভয়েরই যে নিশ্চিত মৃত্যু ঘটবে।
মফস্বল এলাকার যারা সংবাদকর্মী বা সাংবাদিক তাদের অধিকাংশই বিশ্বদ্যিালয়ের জার্ণালিজম করা নেই বটে কিন্তু সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে তারা যে ভুমিকা রেখে চলেছেন তা মোটেই ফেলনা নয়। একে কোন অবস্থাতেই অবহেলার চোখে দেখা সমীচিন নয়। হয়তো বা গ্রামীণ প্রবাদ বাক্যের আদলে মফস্বল এলাকার সাংবাদিকরা নাচতে নাচতে নাচুনি এবং গাইতে গাইতে গায়েনী। যারা মফস্বল এলাকায় সাংবাদিকতা করেন তারা যেন নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ান। আমাদের বেলায়ও সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশন ঠিক এমনিই ছিলো বলতে হয়।
( লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট )