যথাযোগ্য মর্যাদায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. সৈয়দ মুহম্মদ জোহা দিবস। বৃহস্পতিবার দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচী। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে জোহার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং দোয়া করেন উপাচার্যসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এবং মূল ফটকের সামনে যে স্থানটিতে তাকে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, গ্রন্থাগার, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দিবসটিকে সামনে রেখে সকাল ১০টার সময় সিনেট ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দিবসটিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দিবসটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের স্বিকৃতি দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলেন, ড. জোহাকে সবাই চিনতেন, তিনি জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। তিনি সর্বোচ্চ মানবিক আচার-আচরণ দিয়ে ছাত্রদের মন জয় করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এখানের শিক্ষকেরা বলেন শিক্ষক দিবস। আমরা কিন্তু এটাকে ‘ছাত্র-শিক্ষক দিবস’ হিসেবেই জানি। ড. শামসুজ্জোহা গুলিতে আহত শুনে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র নূরুল ইসলাম নগরের সোনাদীঘির কাছে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য রাস্তার ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তার মাথার ঠিক মাঝখানে গুলি করলে তিনি ড. জোহার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ৬৯ এর গন অভ্যুর্ত্থানে আন্দোলন চলাকালে ১৮ ফেব্রæয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে পাকিস্তানী বাহিনীর অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা। পরে তাকে গুলি ও বেয়নেট চার্জে হত্যা করে পাক বাহিনী। এরপরই স্বাধীনতার আন্দোলন বেগবান হয়। উল্লেখ্য ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা ১৯৩৪ সালের ১ মে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় জন্মহগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই তিনি লন্ডনে স্কলারশিপ পান। ১৯৬৪ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রæয়ারি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি।