মরিচ মানে ঝাল। মরিচের ঝালের সঙ্গে সবাই কম-বেশি পরিচিত। ঝালপ্রেমীদের কাছে কাঁচা মরিচ অত্যন্ত প্রিয়। সুস্বাদু একটি তরকারির অন্যতম প্রধান উপাদান হলো কাঁচা মরিচ বা পাকা মরিচ। যা গুঁড়ো করে কিংবা পাটায় বেটে তরকারিতে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা মরিচ ছাড়া কি আর তরকারি হয়? ঝালপ্রিয়দের পছন্দের তালিকায় থাকে ঝাল ঝাল ভর্তা। কেউবা আবার ভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কামড়ে খেতে পছন্দ করেন।
তরকারি হোক, নিরামিষ হোক—এক-আধটু ঝাল চাই-ই চাই। পরিমিত ঝাল না হলে অনেকের কাছে তরকারি স্বাদহীন হয়ে যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য রকমের মরিচ চাষ হচ্ছে। রয়েছে এর বিভিন্ন জাত। উল্লেখ্যযোগ্য জাত হলো—রোপা ঝাল মরিচ, বোনা ঝাল মরিচ এবং মিষ্টি মরিচ। এই তিনটি জাতের মধ্যেও রয়েছে আরো অসংখ্য জাতের মরিচ। যেমন কামরাঙ্গা, বোম্বাই, কৃষ্ণকলি, ঘৃতকুমারী, সূর্যমুখী, সিটিন, বালিজুরী, জারলা, বারোমাসী, উবধা, পুষা জাওলা, বাইন, সাইটা, শিকারপুরী, ক্যালিফোর্নিয়া ওয়ান্ডার, ম্লিমপিম, ওয়ান্ডার বেল, ফুসিমি লংগ্রিন প্রভৃতি।
বাংলাদেশে সব অঞ্চলেই কাঁচা মরিচ হয়। উত্তরাঞ্চলে কাঁচা মরিচ ‘আকালি’ নামে পরিচিত। টাঙ্গাইল জেলার পাহাড়ের ঢালু অঞ্চলেও কাঁচা মরিচ ভালো জন্মে, তবে সেগুলো ছোট আকৃতির—যার নাম হচ্ছে ‘ধাইন্যা মরিচ’ বা সুগন্ধযুক্ত তীব্র ঝাল মরিচ। টাঙ্গাইলের কাঁচা মরিচ বিখ্যাত। এ মরিচ অন্যান্য জেলার মরিচের চেয়ে একটু ভিন্ন। টাঙ্গাইল অঞ্চলের দ্বারিয়াপুরের লোকজন মরিচের গুঁড়ো মসলা খুবই কম ব্যবহার করেন। তাঁরা কাঁচা মরিচ দিয়েই তরকারি রান্না করে থাকেন।
কাঁচা মরিচ গ্রামবাংলায় পানতার সঙ্গে খাওয়া হয়। কাঁচা মরিচ অনেক উপকারী। এতে যথেষ্ট পরিমাণে আমিষ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ রয়েছে। তাছাড়া অনেক জাতে ‘কেপসাইসিন’ থাকায় মরিচ ঝাল হয়ে থাকে। মাটির তারতম্য ও আবহাওয়ায় ঝাল, তীব্র ঝাল, হালকা ঝাল ও মিষ্টি কাঁচা মরিচ উত্পাদিত হয়। কাঁচা মরিচ নষ্ট হয় না এবং তা ফেলনা নয়। গ্রামে এমনকি শহরেও এখন প্রচলিত আছে—হাটবাজার থেকে সবুজ হালকা লাল, কমলা ও লাল আকৃতির কাঁচা মরিচ বাসায় এনে তা দু’ভাগে ভাগ করা হয়। লাল কাঁচা মরিচ অর্থাত্ পাকা। মরিচ শুকালে শুকনো মরিচে পরিণত হয়। আর তাই কাঁচা মরিচ পচনশীল দ্রব্য নয়। তবে এক্ষেত্রে সাবধান হয়ে পরিচর্যা করলে এর থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব।