লালমনিরহাট প্রতিনিধি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিভিন্ন নদী ও পুকুর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি ও ঘর বাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। এই বালু উত্তোলনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঘটনা ঘটছে, সেই সাথে বেড়িয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ওয়াপদা বাজার, পাকার মাথা, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি পাকার মাথা, বাগডোরা, মরাশতী, রাজপুর ইউনিয়নের তিস্তার চর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের চর গোকুন্ডা, মরাশতী (গোরবারের ঘাট), পশ্চিম গুড়িয়াদহ, মহেন্দ্রনগর, হারাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ী সংলগ্ন এয়ারপোর্ট পাকার মাথা এলাকায় চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। বেশির ভাগ এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এবং তিস্তা, ধরলা ও রত্নাই নদীর চর দখল করে অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু।স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। কেউ কিছু বলতে পারে না। প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকির মুখে পড়তে হয় তাদের। গোপনে স্থানীয় ভূমি অফিসে অভিযোগ দিয়েও লাভ হয় না।অভিযোগ রয়েছে, লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছেন এই বালু খেকোরা।
গোকুন্ডা ইউনিয়নের আব্দুল মজিদ বলেন, আমার এলাকার বেশিরভাগ রাস্তার কাজের বালু নদী থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। স্থানীয় নেতারা মরাশতীতে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন করে রাস্তার কাজ সম্পন্ন করেছে।এদিকে গত শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) তিস্তার চর থেকে বালু বিক্রিতে বাঁধা প্রদান করায় স্থানীয় গোকুন্ডা ইউনিয়নে বালু ব্যাবসায়ী রুহুল আমিন দুলু ও রিপন সিন্ডিকেটের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চর দখল করে বালু বিক্রি করায় বাঁধা প্রদান করেছে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতারা। বাঁধা না মেনে বালু বিক্রি করায় দুটি ট্রাক্টর আটক করে ছাত্রলীগের নেতারা। পরে দুলু ও রিপন সিন্ডিকেটরা মিছিল করে ট্রাক্টর দুটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গোকুন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ। মতবিনিময় সভা শেষ হওয়ার পর দুর্বৃত্তরা হামলা করে ওই আওয়ামী লীগ অফিসে। হামলায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর ও আসবারপত্র ভাংচুর করা হয়।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনার পর থেকেই চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ওই এলাকায়। যে কোনো মূহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের সহিংসতা।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) কুলাঘাট ইউনিয়নে ও স্থানীয় সচেতন মহল ধরলা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ প্রদান করেন। তারপর ওই দিনই লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায় অভিযানে যান ওই আলোচিত ধরলা নদীর চরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী ফরিদুল ধরলা নদীর চর থেকে ট্রাকে ট্রাকে বালু বিক্রি করছেন। তিনি জানান, প্রতি ট্রাক বালু আমি ৫শত টাকা করে বিক্রি করি। আমার বালু পার্শ্ববর্তী ঢেপঢেপি এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজে দুই’শ গাড়ি দিয়েছি তারপর আরেকজন ঠিকাদারকে বালু দিচ্ছি। ওখানে দেওয়া শেষ হলেই আমি আপনাদের দিতে পারবো।
ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও বালু বিক্রি সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। তবে কয়েকদিন আগে তাদের ভিতর অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে এসব অভিযোগ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের ভিতরে রফাদফা না হলে গন্ডগোলও হতে পারে।
খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি বাগডোরা এলাকায় দেখা যায়, অবাধে বিক্রি করছেন তিস্তা চরের বালু। চর দখল করে বালু ব্যবসা এটা তার নতুন কিছু নয়। তার ভয়ে টটস্ত এলাকাবাসী। কেউ ভয়ে অভিযোগ দিতে পারে না ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে ভূমি অফিসের লোকদের ম্যানেজ করেই বছর ব্যাপী চলে তার বালু ব্যবসা। অন্যান্য এলাকায় বালু বিক্রি নিয়ে দন্ধ থাকলেও এখানে তিনি অবাধেই বালু ব্যবসা করছেন। তবে তার বালু বিক্রির ট্রাক বাঁধের রাস্তা দিয়ে গিয়ে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারনেই স্থানীয়দের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
হারাটী ইউনিয়নের পাকার মাথায় গিয়ে দেখা যায়, বালু খেকোরো ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অর্ধকোটি টাকার বালু তুলে মজুদ করে রেখেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ হারাটী ইউনিয়নে এসব বালু উত্তোলন করছেন। আর এই বালু ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। বিভিন্ন জায়গায় জরিমানা করা হচ্ছে। সম্প্রতি সময়ে এক বালু ব্যবসায়ীকে ৭দিনের জেল প্রদান করা হয়েছে। তবে এ সকল জায়গায় কারা বালু উঠাচ্ছে তাদের পরিচয় সনাক্ত করতে পারিনি, যদি পরিচয় সনাক্ত করতে পারি তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো।