২০১৪ সালে শুরু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। বেশ কিছু ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় লেনদেন হচ্ছে শাখা ব্যাংকের মতোই। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলো মূল ব্যাংকের মতোই সেবা দিচ্ছে। যাতে করে দ্রুত এগিয়ে চলছে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলো।
ইসলামী ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, তাদের এজেন্টরা সবাই মূল ব্যাংকের মতোই মুনাফাভিত্তিক ব্যাংকিং করছেন। এজেন্ট ব্যাংকের প্রতিটি আউটলেটে গড়ে ৪ থেকে ৫ জন সেবা প্রদান করছেন। তারা সবাই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া কর্মী। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখছে এজেন্ট ব্যাংক। শুধু ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে।
তথ্য
বলছে, করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২৬১টি নতুন
এজেন্ট আউটলেট চালু করেছে। এ সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নতুন হিসাব
খোলা হয়েছে ৮ লাখ ৪২ হাজার। আমানত বেড়েছে ৩ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে
ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৮ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
এর মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে ২২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেল, করোনার মধ্যেও প্রবাসীদের পাঠানো টাকা আসছে ইসলামী
ব্যাংকের এজেন্ট শাখাগুলো থেকে। প্রবাসী আয় গ্রহণ ও টাকা জমা রাখার জন্য
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অনেকে নতুন হিসাব খুলছেন। অনেকে বিদেশ যাওয়ার আগে
একাউন্ট খুলে যাচ্ছেন। বাসার পাশে সেবা পাওয়া ও সঞ্চয়ের সুবিধার জন্যও
অনেকে এজেন্টের কাছে হিসাব খুলেছেন।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে,
মাত্র সাত বছরেই এজেন্ট ব্যাংকের গ্রাহক বেড়ে এক কোটির কাছাকাছি হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ইউনিয়ন পর্যায়েও চালু হয়েছে। আমানত রাখা,
ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয়ের পাশাপাশি স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে এজেন্টরা।
শুধু তাই নয়, সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ভাতাও বিতরণ করছে এখন এজেন্টরা। তবে ডাচ-বাংলা ও ব্যাংক এশিয়া এবং আরও দুয়েকটি ব্যাংক মুদি দোকানদারসহ যাকে তাকে এজেন্ট বানানোয় এই সেবার প্রতি মানুষের আস্থা কিছুটা কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ব্যতিক্রম ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির গ্রাম-গঞ্জের গ্রাহকরা সুপ্রশিক্ষিত এজেন্ট ব্যাংকারের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা রেমিট্যান্স অল্প সময়ের মধ্যে হাতে পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যাচ্ছেন সবাই। হাজার হাজার গ্রাহক প্রতি মাসে এসে ডিপিএসের টাকা জমা দিচ্ছেন। বিভিন্ন ধরনের মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়ী হিসেবে দশ লাখ, ২০ লাখ বা তারও বেশি টাকা জমা করছেন অনেকে।
গ্রাহকরা
তাদের বিমার মেয়াদ পূরণ হলে টাকা যেমন তুলতে পারছেন, প্রিমিয়ামের টাকাও
জমা দিচ্ছেন। অবসর নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এজেন্ট শাখা থেকে
তুলছেন পেনশনের টাকা। শিক্ষকরা প্রতি মাসে তুলছেন বেতন। সুযোগ পেলেই
স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে এসে টাকা জমা করছে। কৃষক থেকে শুরু করে
ছোট-বড় ব্যবসায়ীরাও এজেন্ট শাখায় হিসাব খুলছেন।
ইসলামী ব্যাংকের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মনিরুল মওলা বলেন, দেশে ২০১৪ সালে এজেন্ট
ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। ইসলামী ব্যাংক এ কার্যক্রম শুরু করে ২০১৭
সালে। খুব কম সময়ের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা মানুষদের
আগ্রহী করে তুলেছে। ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের ৪৬২ উপজেলায়
পৌঁছে গেছে। বর্তমানে দেশজুড়ে ২ হাজার ২৭৬ এজেন্ট এ সেবার সঙ্গে যুক্ত
রয়েছেন। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আহরণ ও আমানতের দিক থেকে ইসলামী
ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং এখন শীর্ষ অবস্থানে আছে।
প্রসঙ্গত, দেশের
সর্বস্তরের মানুষকে ব্যাংকিং সেবা দিতে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি চালু হয়
এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। ব্যাংক এশিয়া প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দেওয়া
শুরু করে। এখন ২৪টি ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে। সারা দেশের প্রায় ১৫ হাজার
আউটলেটে চলছে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। এই সেবায় আমানত জমা হয়েছে ১৩ হাজার
কোটি টাকার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত নতুন এই ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে ৮২ লাখ গ্রাহক হিসাব
খুলেছেন। ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার কথা
রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে
এজেন্টের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ১৬৩, যা গত মার্চে ছিল ৮ হাজার ২৬০।
সেপ্টেম্বর শেষে আউটলেট বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ১৬টি, মার্চে যা ছিল ১১ হাজার
৮৭৫টি। সেপ্টেম্বর শেষে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ লাখ ২১ হাজার ৮৯৩ জনে, যা
মার্চে ছিল ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫১ জন। অর্থাৎ করোনার ৬ মাসে গ্রাহক বেড়েছে
১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৪২।
জানা গেছে, মার্চ-সেপ্টেম্বরে নতুন যে হিসাব খোলা
হয়েছে, তার মধ্যে নারীদের হিসাবের সংখ্যা ছিল প্রায় আট লাখ। এতে নারী
গ্রাহকের হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার, মার্চে যা ছিল ২৯ লাখ
৫৬ হাজার।
মোট ৮২ লাখ হিসাবের মধ্যে গ্রামীণ হিসাবই ৭১ লাখ ১২ হাজার। মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৫৫ লাখ ৮৩ হাজার। অর্থাৎ ৬ মাসে গ্রামের মানুষদের হিসাব বেড়েছে ১৫ লাখ ২৯ হাজার।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গত সেপ্টেম্বরে আমানত বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৪০ কোটি টাকা, মার্চে ছিল ৮ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। এই সময়ে আমানত বেড়েছে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে ১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা, মার্চে যা ছিল ৬৭৩ কোটি টাকা। বেড়েছে ৪১৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে যেখানে এজেন্টদের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, সেখানে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা।
Bangla Tribune