রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি :: পার্বত্য অঞ্চলে ক্রীড়া উন্নয়নে যার অবদান অনস্বীকার্য, যার হাত ধরে গড়ে উঠেছে পার্বত্যঞ্চলের ক্রীড়া প্রতিভা, যার ছোঁয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ ক্রীড়া ভালোবাসতে শিখেছে, তিনি হলেন এ অঞ্চলের গৌরব জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ এবং রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা স্বপন কিশোর চাকমা। প্রচারবিমুখ, সাদাসিদে এই মানুষটি রাঙামাটি জেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে ১৯৬২ সালের ১৯ জানুয়ারী পিতা কিরণ বিকাশ চাকমা ও মাতা শৈলবালা চাকমার ঘরে জন্ম গ্রহন করেন। শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রজীবণ শুরু করে রাঙ্গুনিয়ার ক্ষীরমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে গহিরা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় থেকে ভুগোল বিষয়ে ¯œাতকোত্তর করেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনার পাশাপাশি অগাধ ক্রীড়া প্রতিভার অধিকারী স্বপন কিশোর চাকমা ১৯৮৯ সালে সাঁতার ইভেন্টে জাতীয় শিশু পুরস্কার পান। বাংলাদেশের জাতীয় সাঁতার দলে সুযোগ পেলেও নানা কারণে অংশ না নিয়ে ১৯৯৪ সালের ১লা মার্চ খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে কর্ম জীবণ শুরু করেন। কর্মজীবনে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সর্বশেষ কর্মস্থল রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করে আজ সোমবার ১৮ জানুয়ারী ২০২১ শেষ কর্মদিবস করে অবসর জীবণে পা রাখছেন। তার এই কর্মময় জীবনকে স্মরণীয় করে রাখতে তার কর্মস্থল রাঙামাটি শহরের কাঠালতলী জেলা ক্রীড়া কার্যালয়ে গিয়ে সিএইচটি মিডিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে অবসর জীবণে শুভকামনা জানান পত্রিকাটির মুখ্য সম্পদক নির্মল বড়–য়া মিলন ও বার্তা সম্পাদক জুঁই চাকমা।
আলাপচারিতায় স্বপন কিশোর চাকমা জানান দীর্ঘ কর্মময় জীবণে অসংখ্য ক্রীড়াবিদ গড়ে তুলেছেন। তার হাতে গড়া খাগড়াছড়ির অথুই মারমা স্পোর্টস সাইন্স নিয়ে পিএইচডি করে বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে কর্মরত। অতিসম্প্রতি ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় আন্তঃস্কুল বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্ণামেন্টে বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে, শুধু তাই নয় ২০১৯ সালে জুরাছড়ি ভুবনজয় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্রিকেট অনুর্ধ্ব-১৬ আঞ্চলিক পর্যায়ে সিলেটে রানারস আপ ও কাবাডী অনুর্ধ্ব-১৬ প্রতিযোগীতায় জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করা স্বপন কিশোর চাকমার চেষ্টার ফসল। তবুও সন্তুষ্ট নয় ক্রীড়া পাগল এই মানুষটি। তিনি বলেন সারা রাঙামাটি জেলায় নেই কোন সুইমিং পুল। সাঁতার নিয়ে জীবন শুরু করে নিজের ছেলেমেয়েদের সাঁতার শেখানোর জন্য সুইমিং পুল নেই, হ্রদে তো সাঁতার শেখা বা সাঁতার প্রশিক্ষণ নিরাপদ নয়। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পার্বত্য অঞ্চলে সব ইভেন্টে ক্রীড়া প্রতিভার সম্ভাবনা রয়েছে। উদীয়মান খেলোয়াড়দের বাছাই করে এলাকা ভিত্তিক খেলা নির্বাচন করে প্রশিক্ষনের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় গড়ে ওঠার পাশাপাশি পার্বত্যঞ্চলে ক্রীড়াক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
পার্বত্যঞ্চলের ক্রীড়ার আইডল স্বপন কিশোর চাকমা অবসরের দিনগুলোও অবসরে কাটাটে চান না। অবদান রাখতে চান নিরাপদ খাদ্য ও সবুজায়নে। যার কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু করেছেন। রাঙামাটি জেলার নানিয়াচর উপজেলায় ঘিলাছড়িতে ৪ একর পাহাড়ী জায়গায় মিশ্র ফলজ বাগানে প্রায় এক হাজার আম গাছের বাগান সহ তরল সোনা আগর চারা রোপন করেছেন। এছাড়া মাল্টা, কমলা, লিচু, বড়ই ইত্যাদি তো আছেই। তিনি বলেন, পৃথিবী যতই অধুনিকতার দিকে যাচ্ছে মানুষের বিবেকবোধ ততই পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন নানা ফলমুলের নামে বিষপান করছি আমরা, তাই বিষমুক্ত নিরাপদ ফলমুল উৎপাদনের পাশাপাশি পাহাড়ে সবুজায়নে নিজেকে যুক্ত রাখবো। অত্যন্ত মিষ্টভাষী, সদালাপী স্বপন কিশোর চাকমা ব্যাক্তি জীবণে স্ত্রী স্বর্ণা চাকমা, এক কণ্যা ও এক পুত্র নিয়ে সুখের সংসার। মেয়ে বিদ্যার্থী সেন্ট ট্রিজার স্কুলের শিক্ষার্থী। চারিদিকে এত হাকডাক হইহুল্লোর অথচ পার্বত্যঞ্চলের ক্রীড়ার জীবন্ত কিংবদন্তী স্বপন কিশোর চাকমা নিরবেই গেলেন অবসর জীবণে। আমরা সিএইচটি মিডিয়া পরিবার স্বপন কিশোর চাকমার অবসর জীবণের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিরোগ, দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।