সঞ্জু রায়, বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: বগুড়া শেরপুরের চাঞ্চল্যকর ঘটনা রড ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম (৪৮) এর হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে শেরপুর থানা পুলিশ। ৭ দিনের মাথায় হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতারও করেছে তারা।
জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ এবং টাকা পয়সা লেনদেনের দেনা-পাওনা কে কেন্দ্র করে আপন ভাই, ভাই এর স্ত্রী, ভাতিজা, চাচা এবং সৎ শ্যালকের হাতে সুপরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল ফরিদুল। হত্যার পর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে কিছুদিন পর আসামীদের ১ জন অপহরণের নাটক সাজাতে গিয়ে পুলিশের চোখে পড়ে অবশেষে একে একে ঘটনার সাথে জড়িত সকলে ধরা পরে যায় পুলিশের জালে।
বুধবার দুপুর ১২টায় বগুড়া পুলিশ সুপারের সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার)। এসপি আশরাফ বলেন, ক্লুলেস এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ৭দিনের মাথাতেই সকল আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নিহতের সৎ শ্যালক ওমর ফারুক (৩৫), ফরিদুলের আপন ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ (৩০), চাচাতো চাচা আব্দুর রাজ্জাক (৫৮), নিহতের আপন ছোট ভাই জিয়াউর রহমান জিয়া (৪০) এবং জিয়ার স্ত্রী শাপলা খাতুন (৩৫)। জানা যায়, নিহত ফরিদুল স্থানীয় ছোনকা বাজারেরর একজন সিমেন্ট ব্যবসায়ী পাশাপাশি সে একজন কৃষকও। মায়ের জমি-জমা নিয়ে তার অন্যান্য ভাইদের সাথে দ্বন্দ্ব ছিল। ফরিদুল কৌশলে তার মায়ের এবং বোনদের নিকট হতে বসতবাড়ির এবং ছোনকা বাজারের পাশে মূল্যবান জায়গা রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছিল যাতে তার ভাইদের সাথে চরম শত্রুতার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ফরিদুল তার সৎ শ্যালক ওমর ফারুকের নিকট হতে ৩ লক্ষ টাকার জমি কট (বন্ধক) নিয়েছিল। এই টাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে তার সাথে ফরিদুলের শত্রুতার সৃষ্টি হয়েছিল। যার ফলে এক পর্যায়ে ফরিদুলের আপন ছোট ভাই এবং এই সৎ শ্যালক মিলে ফরিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে ২৮ ডিসেম্বর ননদকে ডাক্তার দেখানোর কাজে নিহতের স্ত্রী ঢাকায় গেলে ফাঁকা বাসার সুযোগ নিয়ে কয়েকদিনের আরো সুক্ষ্ম পরিকল্পনা শেষে ৫ জানুয়ারী সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে ফরিদুল সারাদিন কৃষি জমিতে সেচের কাজ শেষ কাজ করে বাড়িতে প্রবেশের সাথে সাথেই আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা নিহতের আপন ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ তাকে ধারালো চাকু দিয়ে স্বজোরে মাথায় আঘাত করে। পরে অন্যান্য আসামীরা ফরিদুলকে ধরে ফেলে বটি এবং চাকু দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়।
আসামীদের কিভাবে গ্রেফতার করা হলো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রেস ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার বলেন, আসামীরা হত্যার পর স্বাভাবিকভাবে পরিবারের সদস্য হিসেবে জানাযা থেকে দাফন সবকিছু করেছে। নিহতের স্ত্রী ইসমত আরা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীর নামে মামলা দিলে প্রথমদিকে সবকিছু ক্লু-লেস হলেও কঠোর নজরদারিতে এক পর্যায়ে পুলিশের ভয়ে ভীত হয়ে ওমর ফারুক মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরে। পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষ দিক-নির্দেশনায় শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান এর নেতৃত্বে শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম এবং ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদের পুলিশি কৌশলে ওমর ফারুক কে ১২ জানুয়ারী সকালে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য হতে বুধবার শেরপুরের ইটালী গ্রাম থেকে বাকী ৪ আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেফতারকৃত নিহতের সৎ শ্যালক ওমর ফারুক এবং ভাতিজা ফারুক আহম্মেদ কে বুধবারেই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান এবং বাকী ৩ জন আসামীর ১০দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হবে মর্মে প্রেস ব্রিফিং এ জানান এসপি আলী আশরাফ। প্রেস ব্রিফিংকালে এসময় জেলা পুলিশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার চৌধুরী (প্রশাসন), আব্দুর রশিদ (অপরাধ), মোতাহার হোসেন (ডিএসবি), ফয়সাল মাহমুদ (সদর সার্কেল) এবং গাজিউর রহমান (শেরপুর সার্কেল), শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম, বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির, জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।