নির্মলেন্দু সরকার বাবুল
আজ একজন আলোর ফেরিওয়ালার কথা বলবো। যার হাত ধরে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে পথ পাঠাগার নামক একটি পাঠাগারের অগ্রযাত্রা শুরু হয় ২জুন ২০২০ তারিখে।মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। আর লিখিত ভাষার ভান্ডার হলো বই। আর এই বইয়ের ভান্ডারকে বলা হয় পাঠাগার। যেখানে মানুষ পৃথিবীর বিচিত্র সব রক্ষিত ভান্ডারের সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পায়। নিত্য নতুন উপলব্ধি আর অভিজ্ঞতায় নিজেকে বিকশিত করা যায় পাঠাগারের মাধ্যমেই।
পথ পাঠাগারের যাত্রাটা পাঠাগার ভিত্তিক, তবে এ পাঠাগারের কার্যক্রম অন্যসব পাঠাগারের থেকে একটু ব্যাতিক্রম ধর্মী। আমরা জানি যেকোনো পাঠাগার মূলত একক পাঠাগার হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু এ পাঠাগারের ব্যাতিক্রমধর্মী কার্যক্রমটি হলো গ্রামগঞ্জ,লোকালয় ও হাটবাজারের যেকোনো দোকান,স্টল,সেলুন,ফার্মেসী থেকে শুরু করে যেকোনো জনবহুল স্থানে নিজস্ব অর্থায়নে বেশকিছু বই,একটি সেলফ ও পাঠাগারের নিজস্ব একটি ব্যানার দিয়ে নতুন একটি বই পাঠের উপযুক্ত স্থান তৈরী করে দেয়া। যেখানে বই পড়ার সুযোগ থাকবে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জন্য।
পথ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নাজমুল হুদা সারোয়ার। জন্ম থেকেই যার বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদ সুসঙ্গ দুর্গাপুরে। কৈশোরকাল থেকেই তিনি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনিই দুই বাংলার সুসঙ্গ কবিতা উৎসবের পথিকৃত ও দুর্গাপুর সাহিত্য পুরস্কারের প্রবক্তা হিসেবে সুপরিচিত।
গ্রামের অবহেলিত স্থানগুলোতে পথ পাঠাগার স্থাপনের মাধ্যমে বইয়ের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন নাজমুল হুদা সারোয়ার। তার এ উদ্যমী পথচলা শুরু থেকেই একটি সাহসীকতার পরিচয় বহন করে আসছে। ছুটি ছুটে নাজমুল হুদা সারোয়ার এ পর্যন্ত পথ পাঠাগারের ১২টি শাখা স্থাপন করেছেন দুর্গাপুর,কলমাকান্দা,ধরমপাশা ও ধোবাউড়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায়।
তিনি শুরু থেকেই একদল উদ্যমী তরুণ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। যারা পথ পাঠাগার পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন একনিষ্ঠ ভাবে। মাসুদ রানা, সাংবাদিক রাজেশ গৌড়,তন্ময় সাহা,পলাশ সাহা,জিয়াউল হক শুভ,শিপন রবি দাস।
আর এইসব পাঠাগারে বই পড়ে জ্ঞান আহরণ করতে প্রতিদিন আসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বইপ্রেমী মানুষরা। পাঠকদের উন্নত মানসিকতার সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে পাঠাগারটি।
পথ পাঠাগারের আয়োজনে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, শিক্ষাসামগ্রী বিতরন, শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান, কুইজ প্রতিযোগিতা ও এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়।
শিক্ষক পল্টন হাজং বলেন, পথ পাঠাগার মানুষকে আলোকিত করার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে, সেটি থেকে সবার আদর্শ হওয়া উচিত। তার স্বপ্নকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে সবার সহযোগিতা করা দরকার।’
পাঠাগারটির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা সারোয়ার বলেন, ‘পাঠাগারের শুরুতে আমি বলেছিলাম রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি-যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলরে। কিন্তু আজ থেকে সেই কথাটি আর বলব না। পাঠকদের উপস্থিতি বলে দেয় আজকে পথ পাঠাগার কানায় কানায় সুশোভিত। সবার সহযোগিতায় পথ পাঠাগার এগিয়ে যাবে বহুদূর এবং বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে তরুণ সমাজ।’