এবাদত আলী
যাক, দেখতে দেখতে যাত্রাদল চলে এলো। যশোরের ‘‘ উত্তম অপেরা’’। খুব নামকরা যাত্রা দল বলে এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল। আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দেবোত্তর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে যাত্রা পালা অনুষ্ঠানের প্রচার প্রচারনা চালাতে গিয়ে সাংবাদিকদেরকেই পথে নামতে হলো। পাবনা শহরের ‘হেদায়েত মাইক সার্ভিস’ হতে মাইক ভাড়া করা হলো। ভাড়া করা হলো হ্যাজাক ও ডে-লাইট। সাংবাদিক মোহাম্মদ ইয়াছিন মাইক নিয়ে প্রচারে বের হলেন। প্রচারের জন্য তার কণ্ঠ ও বাচনভঙ্গি ভালো বলে এই দায়িত্বভার তার উপর বর্তালো। প্রেসক্লাবের অন্যান্য সাংবাদিকদেরকেও দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হলো। মূল দায়িত্ব রলো প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং যাত্রা পরিচালনা কমিটির সভাপতির উপর। হয়তো বা সেকারনে ইদু জুয়াড়ি নামে এক নামকরা জুয়াড়ি এসে হাজির। তার কথা হলো থানার সাথে কণ্ট্রাক্ট হয়ে গেছে। সেদিক দিয়ে কোন অসুবিধা হবিনানে এহন শুধু আপনের মতামত হলিই আমরা কাজে নাববের পারি। আমি প্রথমে বিষয়টি বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সব কিছু পানির মত পরিষ্কার হয়ে গেল দুলাই বাজারের যাত্রাপালা দেখতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে। আমি তাকে এব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাই। আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের উন্নতিকল্পে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হবে তাতে কোনরূপ জুয়ার আসর বসবেনা। তাতে প্রেসক্লাবের তহবিলে যদি একটি টাকাও না আসে তাও।
কিন্তু তিনি নাছোড় বান্দা। মিয়া ভাই একটু চিন্তা-ভাবনা করে দেহেন। জুয়ে খেলা ছাড়া যাত্রাদল আনে কোন ব্যাটাশালাই কোন দিন লাভ করতে পারেনি। আপনারাও কস্মিনকালে পারবেননা কয়ে দিচ্ছি। আমি আবারও তাকে বলি, প্রেসক্লাবের উদ্যোগে যাত্রাপালা চালানোর সঙ্গে কোন অবস্থাতেই জুয়া খেলা চলবেনা। ইদু জুয়াড়ি রাগে গড় গড় করতে করতে চলে গেলেন।
আটঘরিয়া প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দেবোত্তর স্কুল মাঠে যাত্রা পালা অনুষ্ঠিত হলো বটে তবে তাতে প্রেসক্লাবের তহবিলে কোন টাকা জমা হলোনা। বরং কয়েকদিন যাত্রা চালানোর পর হিসাব করে দেখা গেল প্রেসক্লাবের তহবিল ঘাটতির দিকেই যাচ্ছে। তড়ি ঘড়ি করে মিটিং ডাকা হলো। উক্ত মিটিংএ যাত্রা দলের ম্যানেজারকেও রাখা হলো। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা। যাত্রা দল আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। গলি থেকে রাজপথ, মুঘল হাটে সন্ধ্যা, মসনদের মোহ, সরফরাজ খাঁ, আনার কলি এবং সব শেষে নবাব সিরাজ-উদ্দৌলা যাত্রা পালা অভিনয় করেও কোন ফল হলোনা। অর্থাৎ যাত্রা পালার আয়োজন করে প্রেসক্লাব স্বাবলম্বী হতে ব্যর্থ হলো।
প্রেসক্লাবের অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন না হলেও সাংবাদিকদের লেখালেখির পরিধি বেশ বেড়েছে বলতে হবে। কারণ আমার পাঠানো খবর ও ফিচার নিয়মিতভাবে দৈনিক স্ফুলিঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। এরই মাঝে “সপ্রতিভের কলাম” নামে একটি কলাম নিয়মিত দৈনিক স্ফুলিঙ্গে প্রকাশিত হতে থাকে। এই কলামের দুএকটি লেখা সন্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে চাই। “ আসলে আমরা প্রায় সকলেই হাচেন বীরের খপ্পরে পড়ে অহেতুক ভয়ে কুপোকাত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। এ অধমের স্মৃতিপটে তাই ভেসে উঠছে বার বার। হাচেন বীরের বাড়ি পাবনা জেলার সদর থানাধীন হিমায়েতপুর ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামে। তার বয়স বোধকরি তখন ৪৫/৪৬ বছর হবে। দিন মজুর হাচেন আলী একদিন মাটি কাটার কামলা দিতে গিয়ে দুপুরে সঙ্গিদের নিয়ে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। পাশের একটি পুকুর পাড়ে একটি বাঁকা খেজরগাছ যার শিখড়ের মাটি প্রায় সবই বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পুকুরে পড়েছিলো। খেজুর গাছটি কখন যেন উপড়ে পড়ে যায় এমনি অবস্থা। হাচেন আলী উপস্থিত সঙ্গিদেরকে হঠাৎ করে বলে বসলো যে, আমি ইচ্ছা করলে ঐ খাজুর গাছটাক উপড়ে ফেলা দিতি পারি। সঙ্গিরা বলল, থাক অতো ক্যাদ্দানী দেহানের কাম নেই। ‘খেদাবের পারেনা গুয়ার মাছি সেই আবার ভুঁই চষবের যায় রাহালগাছি।’ হাচেন আলী এই কথায় রাগান্বিত হয়ে এক লাফে গিয়ে গাছের হেলে পড়া কান্ডটা ধরে যেই টান দিয়েছে ওমনি খেজুর গাছটি হুড়মুড় করে পুকুরের মধ্যে পড়ে যায়। ব্যাস আর যায় কোথা।
গুজব আকারে সেকথা গ্রাম থেকে গ্রমান্তরে ছড়িয়ে পড়লো যে, অমুকের ছেলে অমুক সত্যিই একজন বীর। আসলে ওরা বীরের জাত, তা নাহলে কি এত্ত বড় একটি খেজুর গাছ উপড়ে ফেলতে পারে? কেউ কেউ বলতে শুরু করলো হাচেনের গায়ে বীরের বাও (বাতাস) লাগেছে। শুধু খেজুর গাছ কেন ইয়া বড়া তাল গাছ ও দুহাত দিয়ে ধরে অনায়াসে উপড়ে ফেলতে পারে। হাচেন আলী এসব কথা শোনার পর খুশিতে ডগমগ। চৌত্রিশ ইঞ্চি বুকের ছাতি ফুলিয়ে আটষট্রি ইঞ্চি বানিয়ে হেলে দুলে চলতে আরম্ভ করলো। লোকজনের সঙ্গে আজে বাজে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। ভোটে পাস করার পর কিছু কিছু চেয়ারম্যান মেম্বার সাধারণ জনগণকে যেমন পাত্তা দিতে চায়না ঠিক তেমনি। হাচেন আলীর পেটে ভাত থাক বা না থাক কুচকুচে কালো দেহে সব সময়ই সরিষার তেল মেখে ঘুরে বেড়াতে থাকে। হাচেন বীরের কথা তখন লোকের মুখে মুখে। তাকে একনজর দেখার জন্য কমবেশি সকলেই উৎসুক হয়ে থাকতো। (ক্রমশঃ) (লেখক: সাংবাদিক কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব
বাসা: টেবুনিয়া, পাবনা।