বধ্যভূমির নিঃশব্দ কান্না শুনি


এনামুল হক টগর

সেদিন মিরপুর বধ্যভূমির বিস্তির্ণ পথ ধরে
আমি ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে শুনি নিঃশব্দ কান্নার আওয়াজ হাহাকার।
জীবনের গভীরে মনে পড়ে অনেক পুরনো স্মৃতির অতীত,
আর আগের দিনগুলো আন্দোলন সংগ্রাম বেদনা বিস্ময় রাত্রি।
এই ইতিহাসের স্মৃতিসৌধ ও ইটের দেয়াল সেদিন এখানে ছিল না,
শুধু ছিল কাঁদা মাটি আর মাঝে মাঝে ফসলের সবুজ মাঠ নিপুণ।
যেখানে প্রতিনিয়ত প্রভাতের বুক জুড়ে জেগে উঠতো চেতনার সূর্য সোনালী।
আজ সেখানে মানবতা কেঁদে ফিরে জীবন যন্ত্রণার দহন জ্বালা।
রক্তাক্ত আর ক্ষত চিহ্ন বুকে দাঁড়িয়ে
বুদ্ধিজীবীর আত্মা কেঁদে কেঁদে যন্ত্রণায় বলে অসহায়!
আমারা এখানে অনেক বছর অবহেলিত পারে আছি নতুন দিনের প্রতিক্ষায়,
শুধু তোমাদের জন্য শুধু তোমাদের সাক্ষাতের দীপ্তিময় কর্ম অপেক্ষায়।
কতো-দিন কতো-রাত ভেবেছি তোমাদের সাথে দেখা হবে,কথা হবে,
কথা শেষে আমাদের ব্যথার বাণীগুলো তোমরা পৌঁছে দেবে,
আগামী বংশধর নতুন প্রজন্মের কাছে।
বলো কবি,বলো প্রিয়তম লেখক,তুমি কেমন আছো?
কেমন আছে তোমাদের সন্তানরা?
কেমন আছে তোমাদের স্বজনরা?
আর্দশ ও সভ্যতার নীতিবান রমণী এখন কোথায়?
আমি লজ্জায় মুখ ফিরাই,আমি চিৎকার করে বলি সর্বদায়।
আমি বলতে পারবো না,আমি বলতে পারবো না।
প্রিয় শহীদ বুদ্ধিজীবী তোমারা কি এই বেদনা ব্যথা শুনতে পাও না?
তোমাদের উত্তরসূরীদের জীবন যন্ত্রণার আর্ত চিৎকার।
ক্ষুধায় ক্ষত-বিক্ষত অনাহারীর বিপন্ন বঞ্চিত জীবন ধ্বনি দাবি অধিকার,
অনিশ্চিত অবরুদ্ধ তোমাদের আগামী উত্তরসূরী ও বংশধরদের সংসার।
তোমাদের স্বপ্ন বাসনা আর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নীতিগুলো আজ দিশেহারা।
ব্যর্থ প্রবঞ্চিত ও নিগৃহীত নিষ্ঠুর সময় এখানে করে আর্ত-চিৎকার।
নগরের রাস্তায় রাস্তায় কেঁদে ফিরে বিষণ্ণ জীবনগুলো বিবস্ত্র অনাহারী,
গভীর দুঃখের বিরহ নিশিথে দেশপ্রেমিকের কষ্ট ও বেদনা অথই,
তোমাদের কানে কানে আমি নিঃশব্দে ইতিহাস রচনা বলে যাই,
তারাই আজ সবচেয়ে বেশি ও অধিক অর্থের মালিক,
যারা হত্যা করেছিল তোমাদের,যারা হত্যা করেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অবাক,
যারা হত্যা করেছিল অসংখ্য বাঙালি প্রজ্ঞাবান দিশারী,
অপমান লাঞ্চিত ও ধর্ষণ করেছিল লক্ষ লক্ষ যুবতী নারী,
যারা এদেশের মুক্তি চায়নি স্বাধীনতা চায়নি তাদের গাড়ির চাকায় পিষ্ট আজ অনাগত আগামী নতুন জীবন!
সময় জাতির উত্তরসূরীদের কি জবাব দেবে কি দর্শন দেবে পরিচয়।
ইতিহাস বিকৃত ঘাতকরা এখনো জাতির পতাকা উড়ায়,
চলমান গাড়ির অগ্ৰভাগ মাথায়।
হায়রে অংশ বিশেষ দুর্বোধ্য মূর্খের নির্বাচনে মনোনিত,
না বুঝা চেতনার ফসল ব্যর্থ বিফল নীতি।
আহত স্তব্ধ লোকে লোকান্তরে কেঁদে ফিরে
অঘুম আঁধার সমাজের দ্বারে দ্বারে।
তোমরা চিন্তা করো না একদিন জীর্ণ-শীর্ণ সার্বজনীন মানুষের কাছে,
তোমাদের বাণী পৌঁছে যাবে আগে ও পিছে।
সেদিন সত্যি ইতিহাস জানবে জাতি
বধ্যভূমির নিঃশব্দ কান্নার আওয়াজ মিনতি
মানবতার বিনয় আহ্বান চেতনা প্রগতি,
দেখবে সেদিন জেগে উঠবে দেশপ্রেমের সুনীতি।
সমগ্র জন্মভূমির পথে পথে ও দিকে দিকে
ফুঁটবে গুণবান মানুষের নির্মল হাসি ও চেতনার বিবেক।
মৌসুমী বাতাস চলমান বাস্তবতার শস্য সবুজ সোনালী জমিন,
কিশোর কিশোরী ও বালক বালিকা বেলার খেলা ঘর জীবন।
আসন্ন উজ্জ্বল চৈতন্যের নতুন ও নিপুণ আগামী।
সুন্দর অনুভূতির স্পর্শে হৃদয়ে ছুঁয়ে যাবে মহাপ্রেম।
জীবনের সব সুন্দর ও সত্য সুখের তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্তগুলো,
পরাজিত শত্রুর বিমর্ষতা ভেঙে মানবতা জাগিয়ে তুলবে বিশোধন আলো।
নতুন সভ্যতার প্রভাত কিরণে দেশ স্নেহ ও মমতায় জ্বল জ্বল করবে,
ভালোবাসার আন্তরিক আনন্দময় জ্যোতিতে জ্যোতিতে সজিব!
শত যুগের চন্দ্র সূর্য নক্ষত্র হাসবে নতুন আলোর রৌদ্রে
আমার ফিরে পাবো মুক্তির দিন সাম্য-বন্টন জীবন আর্দশ অভেদ।
স্বাধীন প্রিয় জন্মভূমি আমাদের ফসলের চৈতন্যে সুন্দর আবাদ।