একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড, জনগণ, সরকার এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে একটি দেশ বা রাষ্ট্র গঠিত হয়। রাষ্ট্র ও নাগরিক একে অন্যের পরিপূরক। রাষ্ট্র যেমন তার নাগরিকের জন্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে, তেমনি নাগরিককেও রাষ্ট্রের প্রতি কতগুলো দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দায়িত্বগুলি যথাযথ পালন করার মাধ্যমেই দেশ গঠনে একজন নাগরিক সত্যিকারের ভূমিকা রাখতে পারে। একটি দেশ গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। রাতারাতি তা হয় না। জটিল এই প্রক্রিয়ায় নাগরিককে খুব সতর্কতার সাথে ভূমিকা রাখতে হয়। দার্শনিক প্লেটো তার রিপাবলিক গ্রন্থে দেশ গঠনে নাগরিকের কি কি ভূমিকা থাকতে পারে তার একটি সুনির্দিষ্ট ফর্মূলা দিয়েছেন। সক্রেটিস নাগরিকদের Virtue of knowledge এর কথা বলেছেন। এ্যারিস্টল, জন লক, হবস ও রুশো নাগরিকদের কর্তব্যগুলি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। একজন নাগরিক নিচের দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করে দেশ গঠনে স্ব স্ব অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখতে পারেঃ
★ দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ
* দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা
* দেশের আইন ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য
* ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন
*সময়মত ও নিয়মমাফিক কর বা খাজনা প্রদান
* নিজ ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান
* প্রকৃত দেশপ্রেম
একটি দেশের সকল নাগরিক একরকম হয়না। তারা বিভিন্নভাবে দেশ গঠনে সহায়তা করে। কেউ তার মেধা দিয়ে, কেউ তার প্রজ্ঞা দিয়ে, কেউ তার সাহস দিয়ে, কেউ তার দৈহিক শ্রম দিয়ে, কেউ তার পরামর্শ দিয়ে, কেউ তার সৃষ্টি দিয়ে ( যেমন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শেকসপিয়ার, প্লেটো, এ্যারিস্টিটল সহ আরও অনেকে)। কাজেই দেশ গঠনে একজন নাগরিক তার যোগ্যতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে পারে। এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো একজন নাগরিক দরদ দিয়ে যত্ন নিলে দেশ অনেক দূর যেতে পারে। এমন কিছু বিষয় হলঃ
* দেশের বিদ্যুতের অপচয় না করা
* রাস্তাঘাট ও পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে সতর্ক থাকা
* পানির অপচয় না করা
* পরিবেশ দুষণ না করা
* বিভিন্ন স্থাপনাগুলিকে রক্ষা করা
* দুর্নীতি না করা
* শান্তি বজায় রাখা
* জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে রাখা
* গুণী মানুষদের কদর করা
এমন অনেক নজীর আছে এই বিশ্বে যেখানে একজন নাগরিক নিজ উদ্যোগে দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে। এমন অনেক নাগরিক আছে যারা নিজ উদ্যোগে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাশ, মসজিদ, মন্দির সহ নানা স্থাপনা তৈরি করে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখে। একজন নাগরিক তার ক্ষুদ্র পরিসরে রাষ্ট্রের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। এজন্য যেটা প্রয়োজন সেটা হল সদিচ্ছা।সক্রেটিস তরুন সমাজকে আলোকিত করে রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখেছিলেন। জে এস মিল তার উপোযোগবাদী দর্শনের ব্যাখ্যায় বলেছেন,” একটি সুখী শুকুর হওয়ার চেয়ে একজন অসুখী মানুষ হওয়া ভাল এবং একজন সুখী মানুষ হওয়ার চেয়ে একজন অসুখী সক্রেটিস হওয়া আরও ভাল।”
পরিশেষে এটুকুই বলা যায় একজন নাগরিকের নিজ দায়িত্বের প্রতি সচেতন হতে হবে। একজন নাগরিক নেতা নাও হতে পারে কিন্তু তার মাঝে নেতৃত্বের গুনাবলী থাকতে হবে। যেটুকু সামর্থ আছে সেটুকু কাজে লাগাতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীন করা প্রসঙ্গে জনগনকে বলেছিলেন ” তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। যার কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়।” কাজেই নিজ সক্ষমতাকে যথাযথ কাজে লাগালে দেশের উন্নয়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কবি, ছড়াকার ও প্রান্ধিক