মুক্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

              

যুগে যুগে মানবতার মুক্তির দূত হয়ে যে মহান মানুষ গুলি এজগতে এসেছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাদের মধ্যে অন্যতম। তাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। বিশ্ব বরেণ্য এই নেতা ছিলেন মুক্তিকামী মানুষের কাছে এক আলোর দিশারী। জুলুম, শোষণ আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা জীবন লড়ে গেছেন এই মহান নেতা। তিনি ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন পশ্চিমবঙ্গের মেদনীপুরে। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবিদ ও বড় আইনজীবি ছিলেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী মূল নেতাদের একজন ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মহান নেতার স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছিলেন। মহান এই নেতার বাবা ছিলেন একজন বিচারপতি। এই নেতা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েট করেন। তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বৈচিত্রে ভরপুর। ক্ষমতার লোভ কখনই তাকে কাতর করতে পারেনি। যেখানে অন্যায় দেখেছেন সেটার বিরুদ্ধে লড়েছেন। প্রথম জীবনে তিনি যোগদেন চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে। এটি তখন মূলত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে একটি গ্রুপ ছিল। ১৯২৩ এর বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষরে তার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। ১৯২৪ সালে তিনি কোলকাতা পৌরসভার ডিপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। ১৯২৮ সালে তিনি সর্বভারতীয় খিলাফত সম্মেলন এবং সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি ইন্ডিপেনন্ডেট মুসলিম পার্টিনামক দল গঠন করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রী সভার একজন প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন। ১৯৪৬ সালে বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হিসাবে পাকিস্থান আন্দোলনে তিনি ব্যাপক সমর্থন প্রদান করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি বাংলার মূখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যান। ১৯৫৩ সালে তিনি এ কে ফজলুল হক ও মাওলানা ভাসানীর সাথে এক হয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। উপমহাদেশের বরেণ্য এই রাজনৈতিক নেতা ১৮৫৬ সালে পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী হন।  আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে তিনি ন্যাশনাল ডেমোক্রিটিক ফ্রন্ট  ( এন ডি এফ) গঠন করেন।

সারাজীবন সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে তিনি আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার পর তিনি মুসলিম লীগ সরকারের একনায়কতন্ত্র বিরোধী ছিলেন। স্বৈরশাসন বিরোধী একজন নেতা হিসাবে তিনি বিশ্ব পরিচিতি পেয়েছিলেন। গণমুক্তি আন্দোলনের এই মহান নেতা ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। ১৯৫৬ সালের পাকিস্থানের সংবিধান প্রতিষ্ঠায় তার ব্যাপক অবদান ছিল। মুসলিম লীগ সরকারের দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। 

মহান এই নেতার আজ  মৃত্যুবার্ষিকী। তার প্রতি মুক্তিকামী মানুষের শ্রদ্ধা ছিল, আছে এবং থাকবে। মহান এই নেতা ছিলেন দেশপ্রেমের এক মূর্ত প্রতীক। তার প্রবল দেশপ্রেম তাকে এক মহাননেতায় পরিনত করেছে। অবহেলিত মানুষের নেতা ছিলেন তিনি। নীতি ও আদর্শের প্রতি ছিলেন অবিচল। কোন প্রকার লোভ লালসাই তাকে তার নীতি থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

তিনি ছিলেন অবিভক্ত পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী ও অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রধেনমন্ত্রী। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং জণগনকে ঐক্যবদ্ধ করতে তার প্রচেষ্টা ছিল সীমাহীন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থানের বিরাজমান বৈষম্য তাকে খুব কষ্ট দিত। তিনি সেটা মেনে নিতে পারতেন না। তার মতে, যে জাতি গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। তার মতে রাজনৈতিক স্থায়িত্ব নির্ভর করে তিনটি বিষয়ের উপর। গণতন্ত্র, সংবিধান আর আইনের শাসন। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ”ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কক্ষে বসে জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে ভাবছি সোহরাওয়ার্দীর কথা। কেমন করে তার সাথে আমার পরিচয় হল। কিভাবে তার সান্নিধ্য পেলাম।””

মহান এই নেতার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। তার দর্শন তরুন সমাজকে আলোকিত করবে বলে বিশ্বাস করি।   লেখক- কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট