শাহজাদপুর প্রতিনিধি :
শাহজাদপুরে যৌতুক না পেয়ে এক সন্তানের জননী নিশা মণি (২৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে । এ ঘটনায় নিশা মণি নিজেই বাদী হয়ে গত বুধবার শাহজাদপুর থানায় একটি অভিযোগ পত্র দেয়ার পর বৃহস্পতিবার ফের পাবনা নারী শিশু দমন নির্যাতন আইনে পাবনায় মামলা করেছেন ।
গৃহবধু নিশামণির শাহজাদপুর থানায় অভিযোগ পত্রে থেকে জানা যায় শাহজাদপুর পৌর সদর পুকুর পাড় গ্রামের মোঃ মুনছুর ঘটকের ছেলে মাসুম বিল্লাহর সাথে পার্শ্ববর্তী পাবনা জেলার বেড়া পৌর এলাকার তেঘুরিয়া গ্রামের মধু মিয়ার মেয়ে নিশা মণির সাথে তিন বছর আগে বিয়ে হয় । বিয়ের পর হতে নিশামণির শ্বশুর বাড়ির লোকজন মণির বাবার বাড়ি হতে বিভিন্ন অজুহাতে নগদ টাকা আসবারপত্র সহ নানা সুবিধা আদায় করে । বিয়ের ১ বছর পরে নিশামণির কোল জুড়ে এক পুত্র সন্তান জন্ম হয় । সুযোগ বুঝে মণির শ্বশুর বাড়ির লোকজন মণির পিতার কাছে নাতির জন্য স্বর্ণের চেইন দাবি করে । মেয়ে ও নাতির সুখের কথা ভেবে মণির পিতা মধু মিয়া নাতির জন্য স্বর্ণের চেইন গড়ে দেন । এর আগে মণির শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক হিসাবে নগদ অর্থ ও আসবারপত্র নেয় । লোভি
স্বামী মাসুম বিল্লাহ দিনের পর দিন যৌতুকের জন্য মণির ওপর শারীরিক ও মানষিক অত্যাচার করতে থাকে । এদিকে মণির পিতা মধু মিয়া আরো অভিযোগ করেন তার মেয়ে জামাই ও তার পরিবার কিছুদিন ধরেই যৌতুক বাবদ আরো দশ লক্ষ টাকা দাবি করে। এত টাকা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় মাসুম বিল্লাহ প্রস্তাব পাঠায় আমার বাড়ির জায়গা বিক্রি করে টাকা দিতে । এ প্রস্তার আমার মেয়ে মণি অস্বীকৃতি জানালে ,তাকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয় ।
এরই জের ধরে গত দুই ডিসেম্বর বুধবার সন্ধায় মণিকে হত্যার উদ্দেশ্য স্বামী মাসুম বিল্লাহ ও তার পরিবারের অন্যরা মিলে হাতুরি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আমার মেয়েকে জখম করে । এসময় হত্যার উদ্দেশ্য মণির গলায় ওড়নার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ
করে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে । এ যাত্রায় আমার মেয়ে প্রাণেরক্ষা পায় প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসায় । মণির আত্মচিৎকার শুনে আশে পাশের লোকজন এসে মণিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে । খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় মণিকে উদ্ধ্ধসঢ়;ার করে শাহজাদপুর থানায় নিয়ে যাই । এ পর সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য মণিকে বেড়া উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করি । নিশামণির বাবা মধু আরো জানান বিয়ের চার মাস পর হতে নানা অজুহাতে আমার নিকট হতে ওই মেয়ে জামাই প্রায় ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছে । শুধু তাই নয় টাকা পয়সা না দিলে আমার মেয়েকে নানা ভাবে নির্যাতন করতো । মেয়ে ও দুই বছরের নাতির সুখের জন্য অনেক কষ্ট করে মেয়ে জামাইকে টাকা পয়সা ও ঘরের আসবাবপত্র দিয়েছি।
কিন্তু দিন দিন মণির স্বামী ও তার বাবা মায়ের লোভ আরো বেড়ে যায়। গত দুই ডিসেম্বর বুধবার সকালে আমার মেয়ে ফোন করে বলে বাবা আপনার জামাই ব্যবসার জন্য নগদ ১০ লক্ষ টাকা চাচ্ছে । আমি বলি এত টাকা কোথায় থেকে দেবেন । একথা শুনে আমার মেয়ে জামাই বলে তোর বাপের বাড়ির জায়গা বিক্রি করে হলেও আমাকে টাকা দিতে হবে । ১০ লাখ টাকা দিতে অস্বীকার করলে গত বুধবার সন্ধায় আমার মেয়েকে তার স্বামী ও পরিবারের অন্যরা মিলে তাকে শারিরিক নির্যাতন করে । এক পর্যায়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেস্টা করে । প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে আমার মেয়ের জীবন রক্ষা করেন । এ খবর পেয়ে আমিও আমার পরিবারের লোকজন নিশামণিকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে এদিন উদ্ধার করে সরাসরি শাহজাদপুর থানায় নিয়ে যাই । সেখান থেকে এদিন চিকিৎসার জন্য বেড়া উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ভর্তি করি । তিনি আরো অভিযোগ করেন আমার মেয়ের অভিযোগ পাওয়ার পরও শাহজাদপুর থানা কতৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় বাধ্য হয়ে আমি বেড়া উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা আমার মেয়েকে সে থেকে নিয়ে পাবনা নারী ও শিশু দমন আদালতে যৌতুক নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টার মামলা করা হয় । মামলার বাদি আমার মেয়ে হয়েছে । এদিকে শাহজাদপুর থানার এস আই শাহীন মাহমুদ জানান নির্যাতিতা গৃহবধু নিশামণির অভিযোগের পর গত বৃহস্পতিবার আমি
নিজে নিশামণির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারি পারিবারিক কলহে স্বামী স্ত্রীর মধ্য সর্ম্পকের অবনতি হয়েছে । গৃহবধু নিশামণির স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকদের বলে এসেছি খুব শিগগির বিবাদ মিটিয়ে নিতে । নইলে নিশামণির আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়মিত মামলা হবে ।