বকুল মামার অবদান ভোলার নয় পাবনায় “স্বাধীনতা চত্ত্বর” উদ্বোধন কালে প্রধানমন্ত্রী

রফিকুল ইসলাম সুইট : পাবনায় প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী সাবেক সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্মরণে “স্বাধীনতা চত্ত্বর” উদ্বোধন করেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতির জনক কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার এই ঐতিহাসিক স্বাধীনতা চত্বরের শুভ উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক এ স্থানটি সংরক্ষণে পাবনার বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসায় আমি অঞ্জন চৌধুরীসহ পাবনার মানুষকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।
রফিকুল ইসলাম বকুল একজন অকুতোভয় দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরেও আওয়ামীলীগের রাজনীতির জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে আমাকে ব্যাপক সহযোগীতা করেছেন। বকুল মামার অবদান ভোলার নয়। আমি তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। জাতির পিতা ১৩/১৪ বার পাবনায় গিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনেছিলেন এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। পিতা স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দেশে ফিরে এসেছিলাম। জাতির পিতার অনুস্বরণ করে কাজ করছি। যার সুফল বাংলার মানুষ ভোগ করছে। ধন্যবাদ জানাই বাংলার মানুষের বার বার ভোটদিয়ে কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। বর্তমানে অর্থনীতির চাকা অনেক সচল। করোনা মহামারিতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা এবং অপরকে সুরক্ষিত থাকতে সহায়তা করতে হবে। করোনার টিকার জন্য আগাম টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে স্বাধীনতা চত্বর প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চত্ত্বর বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু। স্বাধীনতা চত্ত্বরের পোড়ামাটির কারুকাজে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও পশ্চিম পাশে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২টি উক্তিসহ মূর‌্যাল। স্বাধীনতা চত্ত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দু‘টি গ্রীণ রুম এবং টয়লেটসহ ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্ত ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্ত১১৭ ফুট।
যার তিন দিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারী রয়েছে। মাঠের উত্তরপুর্ব কনার্রে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পুর্ব কণার্রে ছোট একটি গেট রয়েছে। এ ছাড়া সর্বপরি পুরো মাঠে রয়েছে দৃষ্টি নন্দন সবুজ ঘাস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, এক সময়ের টাউন হল নামের এই স্বাধীনতা চত্বর ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য এই মাঠ।
রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর, নেতাজি সুবাস চন্দ্র বসু, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অশ্বিনী কুমার দত্ত, এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ বড় মাপের নেতা ভাষণ দিয়েছেন এখানে আয়োজিত জনসভায়।
১৯০৮ সালে এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন, যেখানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এ ছাড়া আব্বাস উদ্দীনসহ বহু শিল্পী এখানে গান গেয়েছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই মাঠেই পাকিস্তানের পতাকা ছিঁড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তোলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল।
২০০০ সালে তিনি সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেলে পাবনা পৌর কর্তৃপক্ষ এটিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেয়। সময়ের প্রয়োজনে এটিকে আরও আধুনিকায়নের দাবি ওঠে। আধুনিকায়নের পর এর নাম দেয়া হল স্বাধীনতা চত্ত্বর।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে রফিকুল ইসলাম বকুল এর স্ত্রী নাসিমা ইসলাম, গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি, এ্যাড. শামসুল হক টুকু এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, আহম্দ ফিরোজ কবির এমপি, নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় উপদেষ্টা সাহাবুদ্দিন চপ্পু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মজুমদার, পাবনা পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সোহানী হোসেন, আলী মতুর্জা বিশ্বাস সনি, দবির উদ্দিন আহমেদ, পাবনা প্রেস ক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ, সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, সংবাদ পত্র পরিষদ সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান শহীদ, বাসস প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম সুইট, রাফিয়া ইসলাম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন কুমার চক্রবর্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হাবিব, আওয়ামীলীগ নেতা মোশারোফ হোসেন, মনির উদ্দিন আহমেদ মান্না, সোহেল হাসান শাহীন, শিবলী সাদিক, সকল উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রগনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সকল আন্দোলন সংগ্রাম ও জেলার সাংস্কৃতিক প্রাণ কেন্দ্র এই ‘স্বাধীনতা চত্বর’ পৌর টাউন হল ময়দান।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই টাউন হল প্রতিষ্ঠা হয়। ইতিহাসের বহু ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে পাবনা টাউন হল। অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তির স্মৃতিতে ধন্য এই টাউন হল চত্বর।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অশ্বীনী কুমার দত্ত, এম মনসুর আলী, তাজউদ্দীন আহমদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এই টাউন হল ময়দানে ভাষণ দিয়েছেন। ১৯০৮ সালে এই টাউন হল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছিল কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন, যেখানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এছাড়া শিল্পী আব্বাস উদ্দীনসহ বহু শিল্পী এখানে গান গেয়েছেন। পরবর্তীতে পাবনা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটিকে মুজিব বাহিনীর সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল মুক্তমঞ্চ নাম দেন। সময়ের প্রয়োজনে এই টাউন হলকে আরও আধুনিকায়নের দাবী উঠে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনার নতুন প্রজন্ম পাবনা টাউন হলকে আরও আধুনিয়ন করে ‘স্বাধীনতা চত্বর’ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
যার ফলশ্রুতিতে পাবনা পৌরসভার সহায়তায় স্কয়ার গ্রুপের অন্যতম পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির নামে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের অর্থায়নে এটি নির্মাণ করা হয়। স্বাধীনতা চত্বর বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে সবার অংশগ্রহণে বৃহত্তর পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মুক্তিবাহিনী এবং মুজিব বাহিনী প্রধান রফিকুল ইসলাম বকুলের স্মরণে পাবনার ঐতিহাসিক টাউন হলের মুক্তমঞ্চের নামকরণ করা হয় ‘স্বাধীনতা চত্বর’।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনীর পাবনা অঞ্চলের অন্যতম সদস্য ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু ফলক উন্মোচন এবং এ চত্বরের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্থানীয় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মুক্তিযোদ্ধা জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষের উদ্যোগে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা চত্বরের নির্মাণকাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে শেষ হয়। এটি নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশ ঘটাবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ নভেম্বর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক স্বাধীনতা চত্বরের শুভ উদ্বোধন করলেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, আধুনিকায়নের পর এই স্থানটি হল উত্তরবঙ্গ তথা দেশের মধ্যে অন্যতম ‘স্বাধীনতা চত্বর’ হিসাবে গণ্য হবে। যেখানে প্রতিটি ইট পাথরের নকশায় মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিদ্যমান। স্বাধীনতা চত্বরের প্রধান মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্ত ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ২০ ফুট। যার দুই পাশে দু’টি গ্রীন রুম এবং টয়লেটসহ ওয়াশরুম রয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট ও প্রস্ত ২৪ ফুট। মাঠের দৈর্ঘ্য ১১৮ ফুট ও প্রস্ত ১১৭ ফুট। যার তিনদিকে দুই স্তরের বসার গ্যালারি রয়েছে। মাঠের উত্তরপুর্ব কর্নারে প্রবেশের প্রধান ফটক ও দক্ষিণ ও পুর্ব কর্নারে ছোট একটি গেট রয়েছে। এছাড়া সর্বোপরি পুরো মাঠে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সবুজ ঘাস।