ট্রেনে উঠতে ভরসা মই !


নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের মালঞ্চি,ইয়াছিনপুর ও বাসুদেবপুর রেল স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে কয়েক বছর আগে। মাষ্টার ছাড়াই চলছে এসব স্টেশন। স্টেশনে ঝুলছে তালা। সিগনাল ছাড়াই এসব স্টেশন হয়ে চলাচল করে ট্রেন। নাটোর ও আব্দলপুর স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয় সিগনাল। আন্তনগর ট্রেনগুলো দাঁড়ায়না এসব স্টেশনে। পাবর্তীপুর থেকে খুলনাগামী রকেট মেইল ও রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস
নামের দুটি লোকাল ট্রেন থামে এসব স্টেশনে। ট্রেন দু’টি তাদের মত করেই এসব ট্রেনে এসে থামে এবং যাত্রি উঠিয়ে চলে যায়। ট্রেন দু’টির নির্ধারিত সময় বেধে দেওয়া থাকলেও যাত্রিদের অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। ট্রেনের আগমন জানতে লাইনের অদুরে তাকেয় থাকতে হয় যাত্রিদের।
মাস্টার বা টিকিট কাউন্টার না থাকায় ট্রেনের ভিতরেই যাত্রিদের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। এসব স্টেমনে চারটি পৃথক রেলক্রসিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবহারের উপযোগী লাইন মাত্র একটি। সেটাও প্লাটফরম থেকে বেশ দূরে। ফলে মই বা চা দোকানের ব্রেঞ্চ পেতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠানামা করতে হয় যাত্রীদের। এসব স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসা যাত্রিদের ভোগান্তিসহ দুর্ভোগ এখন নিত্য সঙ্গি। বিশেষ করে ১৯২৭ সালে বৃটিশ সরকারের আমলে স্থাপিত বাগাতিপাড়া উপজেলা সদরের
মালঞ্চি স্টেশন হয়ে চলাচলকারী সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী,শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী সহ সাধারন যাত্রিদের ভোগান্তি সহ পোহাতে হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। উপজেলা সদরের এই মালঞ্চি স্টেশন সংলগ্ন সরকারী অফিস আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় অনেকেই রেল পথে এসে অফিস করতেন। কিন্তু স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় এখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ।
বাগাতিপাড়া পৌরমেয়র মোশাররফ হোসেন বলেন, কাদিরাবাদ সেনানিবাস ও একটি আর্মি টেকনিক্যাল বিশ্বদ্যিালয় সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই স্টেশনকে ঘিরে। কিন্তু পৌর এলাকার জনগুরুত্বপুর্ন মালঞ্চি স্টেশন সহ বাগাতিপাড়া উপজেলার তিনটি স্টেশনের কার্যক্রম
বন্ধ করে দেয়ায় সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন এই উপজেলার মানুষ। দুটি লোকাল ট্রেন এই মালঞ্চি স্টেশনে দাঁড়ালেও তা নিজের ইচ্ছায় চলাচল করে। যাত্রিদের ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় স্টেশনে।
আবার ট্রেন এসে থামে প্লাটফরমের বাহিরের লাইনে । ফলে নারী,শিশু ও প্রতিবন্ধি মানুষদের ট্রেনে উঠতে নামতে কষ্ট হয়। তিনি স্টেশনটি পুর্বের ন্যায় পুনরায় চালুর দাবী জানান।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী সাজেদুল ইসলাম ও আফতাব খান সুইট বলেন, মালঞ্চি রেল স্টেশনটি ১৯২৭ সালে বৃটিশ সরকারের আমলে স্থাপিত হয়। তখনও পার্শ্ববর্তী লোকমানপুর, আড়ানী রেলস্টেশন ছিল না। উপজেলার বাস যোগাযোগব্যবস্থা না থাকায় সহজ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল মালঞ্চি রেলস্টেশন। বিশেষ করে উপজেলা সরকারি অফিসগুলো স্টেশনের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিকাংশই ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। সেই সময় মালঞ্চি রেলস্টেশনে কর্মরত ছিলেন তিনজন স্টেশন মাস্টারসহ প্রয়োজনীয় সকল কর্মচারী। কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে স্টেশন মাস্টার থেকে শুরু করে সকল স্টাফ বর্তমানে উঠিয়ে নেয়া হয়। প্রান
চাঞ্চল্যভরপুর এখন স্টেশনটিতে ২৪ ঘণ্টায় তালা ঝুলছে। এখানে শুধু একজন নৈশ প্রহরি দায়িত্বে রয়েছেন। চারটি পৃথক রেলক্রসিংয়ের ব্যবস্থা স¤পন্ন এই স্টেশনে এক সময় এই মেইল ট্রেন দাঁড়াতো। রেলের ক্রসিংও হয়েছে এখানে। এখন মাত্র দু’টি লোকাল ট্রেন থামে এখানে। প্লাট ফরম থেকে দুরে ট্রেন থামার কারনে যাত্রিদের ট্রেনে উঠতে মই বা চা দোকানের ব্রেঞ্চের ওপর ভরসা করতে হয়। এজন্য নারী,শিশু ও প্রতিবন্ধি মানুষদের ট্রেনে উঠতে নামতে কষ্ট হয়। অনেকেই শিগং ও
প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের কাঁধে করে নিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে দেন। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা জনগুরুত্বপুর্ন এই স্টেশন সহ কার্যক্রম বন্ধ হওয়া নাটোরের সকল স্টেশন পুনরায় চালুর দাবী জানান।
নাটোর রেল স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার অশোক কুমার চক্রবর্তী বলেন, জনবলের অভাবে গুরুত্বপুর্ন এসব স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মুলত লোকবল সংকটের কারণে স্টেশনটির এই দুরাবস্থা। স্টেশনগুলি পুনরায় চালু করতে জনবল নিয়োগ পক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
রেল পথ মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য এবং নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, স্টেশনগুলি কেন বন্ধ এবং এগুলো চালুর জন্য কোন উদ্দোগ নেয়া হয়েছে কিনা এবিষয়ে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন। একই সাথে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য বলেছেন।