প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। চলছে গাছিদের মাঝে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে গাছের ছাল তোলা, চাঁছা ও নলি বসানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। আবার কোথায় কোথায় শুরু হয়েছে রস সংগ্রহের কাজ।
এক সময় রস সংগ্রহের জন্য বাঁশের চোং বা নলি, কাঠি, দড়ি, ভাঁড় ইত্যাদি ব্যবহার হলেও সম্প্রতি আধুনিক পদ্ধতিতে খেজুরের গাছ প্রস্তুত করতে দেখা গেছে নাটোরের লালপুরের উপজেলা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে।
উপজেলার কেশবপুর, বাওড়া, নেঙ্গপাড়া, ঈশ্বরপাড়া কচুয়াসহ বেশ কিছু গ্রামে গাছ প্রস্তুত করতে বাঁশের নলি, কাঠির পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে টিনের তৈরি নলি ও লোহার পেরেক। এছাড়া বড় গাছগুলোতে গাছে উঠে রসের হাঁড়ী লাগানো ও নামানোর ঝামেলা এড়াতে নলি থেকে লোহার চিকন তারের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে গাছের গোড়ায় মাটির হাড়ি রেখে রস সংগ্রহ করার প্রস্তুতি চলছে।
এবিষয়ে স্থানীয় গাছিরা জানান, খেজুরের রস সংগ্রহের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে গাছ ঝুড়ার কাজ শুরু করেছেন তারা, বাঁশের কাঠি ও নলি তৈরি করা বেশি পরিশ্রমের ও সময় সাপেক্ষ হওয়ায় সহজ প্রাপ্ত টিন ও লোহার পেরেক ব্যবহার করছেন এতে পরিশ্রম ও সময় দুটোই কম লাগে।
এছাড়া বড় গাছ গুলোতে বার বার উঠা নামা এড়াতে নলি থেকে লোহার চিকন তারের মাধ্যমে গাছের গোঁড়ায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে মাটির হাড়ি রেখে রস সংগ্রহ করা সুবিধা হওয়ায় গত কয়েক বছর যাবৎ এই পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ করছেন বলে জানান গাছিরা।
তবে এই পদ্ধতি রস সংগ্রহ সহজ হলেও গাছের গোঁড়ায় রসের হাড়ি থাকায় রস চুরির শঙ্কা থাকে। তাই এই পদ্ধতিতে রস সংগ্রহ এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠে নি বলে জানান স্থানীয় গাছিরা ।
একসময় গ্রামীণ জনপদে খেজুর রস নিয়ে পায়েস পিঠার উৎসব, রাত জেগে সিন্নি রেঁধে খাবার উৎসব, খেজুর রসের মৌ মৌ গন্ধ অম্লান স্মৃতি হয়ে আছে আজও। গ্রামীণ মেঠোপথ আর খেজুর গাছের সারির সেই মুগ্ধতাও আজ বিলীন হবার পথে। খেজুর গাছের গুরুত্ব থাকলেও কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। অল্প জমিতে অধিক খেজুর গাছ চাষে কৃষকরা লাভবান হওয়া সত্ত্বেও সময়ের পরিক্রমে খেজুর গাছ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এই বৃক্ষটির বিলুপ্তির শঙ্কা রয়েছে। তাই ঐতিহ্যবাহী এই বৃক্ষটি রোপণ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষি বিভাগের কার্যকারী পদক্ষেপ জরুরি মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল।