একজন বৃক্ষ প্রেমিক ভ্যানচালক আজগর আলী


বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের বড়াইগ্রামের মাঝগাঁও ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামের আজগর আলী (৪২)। পেশায় ভ্যানচালক। লেখাপড়া বলতে স্বাক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। দুই ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ছোট্ট সংসার। ভ্যান চালিয়ে যা পান তা দিয়ে কোন রকমে দিন চলে
তার। আজগর আলীর শখ গাছ লাগানো। কাজের ফাঁকে মহাসড়কের ধারে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে নি:স্বার্থভাবে গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। এ কারণে মানুষ এখন তাকে বৃক্ষপ্রেমিক আজগর নামেই জানে।
এলাকাবাসী জানান, আজগর আলীর নিজের সম্পত্তি বলতে সোয়া তিন কাঠার বসত ভিটা। একটি রিক্সা-ভ্যান থেকে পাওয়া সামান্য আয়ে ভরণ পোষণসহ ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চলে তার। এ অথচ এই প্রান্তিক মানুষটির রোপণ ও
পরিচর্যায় এ পর্যন্ত প্রায় একশ’টি বট গাছ, ১০ টি পাকুর গাছসহ আরো প্রায় শতাধিক তাল গাছ বেড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, উদার মনের এ মানুষটির
আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও আছে মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা। তাই মাধাইমুড়ি ও বেলগাছি বিলে নিজের কোন জমি না থাকলেও কৃষক ও কৃষি
শ্রমিকদের পানি পান, ওজু ও হাত মুখ ধোয়ার জন্য তিনি দুটি টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন। ঈদে হতদরিদ্র প্রতিবেশীদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ও গ্রামের বিধবা নারীদের সাধ্যমত ইফতার করিয়ে মানসিক তৃপ্তি খুঁজে পান তিনি। আর
এসব কাজের খরচ মেটাতে প্রতিদিন তার সীমিত আয় থেকে একটি অংশ আলাদা করে জমিয়ে রাখেন তিনি।
আজগর আলী জানান, ছোট বেলা থেকেই গাছ লাগানোটা তার শখ। কিন্তু তার নিজের জমি নেই। আবার বিনা লাভে শ্রম দিতে পারলেও নার্সারী থেকে চারা কিনে রোপণের ক্ষমতা নেই তার। কিন্তু দেশের জন্য কাজ করাতো থেমে থাকতে পারে না। তাই
ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বট গাছের চারা রোপণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ জন্য ভ্যান চালানোর সময় আশেপাশে খেয়াল করে যেখানে বটের চারা দেখেন সেটা তুলে
এনে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে রাখেন। এক সময় চারা গুলো বেড়ে যখন রোপণের উপযোগী হয়, তখন সেগুলো তুলে সড়ক-মহাসড়ক, মসজিদ, মাদরাসা ও স্কুল মাঠের কিনারায় রোপণ করে দেন। শুধু তাই নয়, গাছগুলো যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য
কখনও বেড়া দিয়ে, কখনও বা খুঁটি পুঁতে গাছটির সুরক্ষা দেন। রাস্তায় চলতে ফিরতে গাছগুলোর খেয়াল রাখাসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যাও করেন তিনি। এভাবে ইতোঃমধ্যে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের রাজাপুর-আহম্মেদপুর পর্যন্ত তার লাগানো
প্রায় একশ’ টি বটগাছ মাথা উঁচু করে নিজের অবস্থান জানান দেয়ার পাশাপাশি রোদে ক্লান্ত পথিকদের শীতল ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বজ্রপাত
রোধে তাল গাছ ভূমিকা রাখে বলে টিভির খবরে জেনে তিনি এরই মধ্যে শতাধিক
তাল বীজ রোপণ করেছেন। সেগুলো থেকে চারা বের হয়ে এখন বেড়ে উঠছে। তাছাড়া
এ বছরও রাস্তার পাশ দিয়ে রোপণ করার জন্য নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে প্রায় পাঁচশ’ তালবীজ সংগ্রহ করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তিনি স্বেচ্ছায়
গাছের চারা রোপণ করে দেশপ্রেমের অনন্য নজির রেখেছেন। বিষয়টি আমার জানা
ছিলো না। তাকে বনবিভাগের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব রকম সহায়তা দেয়া হবে।
মাঝগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম জানান, ভ্যান চালক আজগর আলী আর্থিকভাবে দরিদ্র হলেও মনের দিক থেকে ধনী। তিনি আমাদের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলেই আমি মনে করি। এ ব্যাপারে তাকে আমি সার্বিক সহযোগিতা করবো ইনশাল্লাহ।