পাবনা প্রতিনিধি ॥
পাবনায় অন্তর হত্যা মামলার আসামীদের বাঁচাতে নিহতের স্বজনদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে মামলা রেকর্ড করেছে আতাইকুলা থানা পুলিশ। পাবনার আতাইকুলা থানার গাগুহাটি গ্রামের জালাল হোসেন’র ছেলে ও ঢাকা সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিলি ইঞ্জিয়ারিং তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী অন্তর কে পূর্ব শত্রুতার জেরে বিগত ১ জুন অন্তরকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হাত ও পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে নির্মমভাবে হত্যা করে এলাকার টিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এ ব্যাপারে পাবনার আতাইকুলা থানায় ১০জনসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা মনজিলা খাতুন। ঘটনার বিবরণে জানা যায় একই এলাকার ওয়াজ সরকারের ছেলে ইরাক প্রবাসী মিন্টু সরকারের স্ত্রী রুপা খাতুন (২৫) এর সাথে মামলার এজাহার নামীয় আসামী আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রাজের পরকিয়া সম্পর্কের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে অন্তর। ঘটনাটি যাহাতে জানাজানি না হয় সে কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অন্তরকে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ছেলে হত্যার বিচার দাবিতে পাবনা প্রেসসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে গত ৬ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন। বিষয়টি নিয়ে ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। আতাইকুলা থানা পুলিশ মামলার ৩জন আসামী তোফাজ্জল হোসেন মন্টু, রনি ও আশুরা খাতুন কে গ্রেফতার করে। অন্যান্য আসামীদের এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। অপর দিকে নিহতের পরিবারের উপর প্রাণ নাশের হুমকীসহ মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও জীবন নাশের হুমকি দেওয়ায় নিহত অন্তরের মা মনজিলা খাতুন নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে আতাইকুলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নং-১০১৮, তারিখ-৩১/০৭/২০২০ ইং। অন্তর হত্যা মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার পাবনা সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। পাবনা প্রেসক্লাবে নিহতের স্বজনরা সংবাদ সম্মেলন করার পর আসামীদের গ্রেফতারে তৎপর হয় পুলিশ।
নিহত অন্তরের মা মনজিলা খাতুন ও স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, এই মামলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাহীনের আপন দুই ভাই পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের একজন এএসআই শামছুল হক বাট্টু বর্তমান রাজশাহী আরএমপিতে কর্মরত এবং অপর ভাই বাচ্চু চাঁদপুর পিবিআইতে ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত আছেন। বাচ্চু’র ব্যাসমেট আতাইকুলা থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল ইসলাম তাদের যোগসাজসে আসামী মন্টুর স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন বাদী হয়ে আতাইকুলা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত না করেই মামলাটি থানায় রেকর্ডভুক্ত করেন। সূত্রমতে জানা যায়, গত ৮’ অক্টোবর রাতে আতাইকুলা থানা পুলিশের একটি দল সাদা পোষাকে নিহত অন্তরের নানা নিরীহ চায়ের দোকানদার মুজিবুর (৬০) ও কাপড় সেলাইয়ের কারিগর ইজিবুর (৫৫) এবং খালু দিনমজুর নজরুল (৪৫) ৩ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসিরুল আলম মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অন্তর হত্যার আসামীদের গ্রেফতার না করে বরং মিথ্যা অভিযোগে চুরির দায়ে অন্তরের স্বজনদের গ্রেফতার করে জেলা হাজতে পাঠায় বলে নিহত স্বজনদের অভিযোগ।
গত ২৬ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস্ ক্রাইম রিপোটার্স ফাউন্ডেশন পাবনা জেলা কমিটি এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ গাঙ্গুহাটি গ্রামে সরেজমিতে পরিদর্শনে গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত অন্তরের মা মনজিলা খাতুন, তার নানী মতিজান নেছা, খালা রাশেদা খাতুন। মুজিবুর গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকায় তার স্ত্রী রেশমা খাতুন জীবন জীবিকার তাগিদে চা বিক্রি করে কোনমতে দিনাতিপাত করছেন। অপর দিকে অন্তরের খালু দিন মজুর নজরুল জেল হাজতে থাকায় তার স্ত্রী রাশেদা দুটি সন্তানসহ অর্ধাহারে অনাহারে দিনযাপন করছেন। অন্তর হত্যা মামলার আসামীদের দ্বারা গোটা পরিবার এখন পুণরায় আক্রান্ত আশঙ্কায় ভীতসন্তস্ত জীবনযাপন করছেন।
এরপর ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ক্রাইম রিপোটার্স ফাউন্ডেশন পাবনা জেলা কমিটি এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ বেলা দেড় টার দিকে আতাইকুলা থানায় পরিদর্শনে গেলে ওসি নাসিরুল ইসলাম না থাকায় তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, আমি এখন পূজামন্ডবের ডিউটিতে আছি, আমি শুধু মামলা রেকর্ড করেছি। আপনারা এ বিষয়ে ওসি (তদন্ত) কামরুল ইসলামের সাথে কথা বলেন। এ সময় ওসি (তদন্ত) কামরুল ইসলাম তার রুমে উপস্থিত ছিলেন। মানবাধিকার ও মিডিয়ার কর্মিরা তাকে চুরি মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অসীকৃতি জানিয়ে মৌখিকভঅবে বলেন, অন্তর হত্যার পর আসামীদের ঘরবাড়ি তালাবদ্ধ ছিল। উল্লেখিত ঘরে একাধিকবার চুরি হয় এবং বাগানের পেপেও চুরি হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন অন্তর হত্যার আসামী মন্টুর স্ত্রী মনোয়ারা খাতুনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। প্রাথমিকভাবে চুরির ঘটনা প্রমানিত হয়, তবে কে বা কারা চুরি করেছে এ বিষয়ে অদ্যাবধি আমরা ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারিনি। আসামী চিহ্নিত না করেই চুরির মামলায় কিভাবে অন্তরের স্বজনদের গ্রেফতার করলেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি (তদন্ত) কামরুল ইসলাম কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে অন্তর হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র এসআই বজলুর রশিদ জানান, আসামী গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। বারবার আসামীরা স্থান পরিবর্তন করছে বলে তাদের গ্রেফতার করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে আমরা অচিরেই আসামীদের গ্রেফতার করতে পারবো বলে তিনি জানান।