সাংবাদিকতার সাড়ে তিন যুগ -দুই

এর আগেও অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম ১৯৬৬ সালে। তখন রাধানগর মজুমদার একাডেমি (আরএম একাডেমি) হতে সবেমাত্র এসএসসি পাশ করে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমার সহপাঠি বন্ধু আটঘরিয়ার নজরুল ইসলাম রবি, (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত মেজর জেনারেল, ডি জি এফ আই এর সাবেক ডিজি), নাটোরের কেএম মোনায়েম (স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ), শরিফ উদ্দিন শরিফ (ইশ্বরদীর চরকামালপুর হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক, (মৃত), নুরুল ইসলাম নুরু (বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ পাবনা সদর থানার প্রথম থানা কমান্ডার, (মৃত), গোলাম সরওয়ার খান সাধন (স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ), আব্দুর রশিদ বিশ্বাস (সাবেক প্রধান শিক্ষক দেবোত্তর কবি বন্দে আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়),সহ অন্যান্যরা মিলে ‘রাধানগর ধ্রুবতারা সংঘ’ নামে একটি সংঘ গড়ে তুলি। আমাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
রাধানগর ধ্রুবতারা সংঘের পক্ষ থেকে পাবনা বনমালী ইনস্টিটিউটে প্রসাদ বিশ্বাস রচিত ‘জবাবদিহি’ নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। ১৯৬৬ সালের
২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে মঞ্চস্থ হওয়া উক্ত নাটকে আমি হাস্যরস চরিত্র ‘পিতাম্বরের’ ভূমিকায় অভিনয় করি। ওই নাটক মঞ্চায়নের খবর চিত্রাকাশ পত্রিকার পাবনাস্থ প্রতিনিধি টিআইএম রিয়াজুল করিম হিরোক তা উক্ত পত্রিকায় প্রকাশ করেন। প্রকাশিত খবরটি ছিলো নি¤œরূপ:- গত ২৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বনমালী রঙ্গমঞ্চে রাধানগর ধ্রুবতারা সংঘের প্রযোজনায় তাদের প্রথম নাট্য অবদান প্রসাদ বিশ্বাস রচিত সামাজিক নাটক জবাবদিহি মঞ্চস্থ হয় রাত্রী ৮.৩০ মিনিটে। নাটকটি পরিচালনা করেন শরীফ আহমদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক।
জবাব দিহি ধ্রুবতারা সংঘের প্রথম অবদান, তাছাড়া প্রায় সমস্ত শিল্পীরই প্রথম মঞ্চবতারণ, তাই এ নাটকের ভুলত্রুটির সমালোচনা করতে চাইনা অতি দুরের দৃষ্টিকোণ থেকে। তাই নিঃসন্দেহে তাদের এ প্রচেষ্টাকে সার্থক বলা যেতে পারে। তবে এই নাটকের অভিনয় ছাড়া অন্য যে সমস্ত ত্রুটি অভিজ্ঞ লোকদের হাত দিয়ে ঘটেছে তা ক্ষমাহীন ভাবেই তুলে ধরছি। পাবনার সবে ধন নীলমণি রূপ সজ্জাকর জনাব আয়েন উদ্দিন রূপ সজ্জায় আগাগোড়াই ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে আসছেন।
শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চসজ্জায় যে লোকগুলো ছিলো তাদের ভূমিকা ঠিক বুঝতে পারলামনা। তারা কেবল নাম প্রচারের ইচ্ছা ত্যাগ করে যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে নাটকটি যে আরো প্রাণবন্ত হতে পারতো তা নিঃসন্দেহে বলা চলে। আলোক সজ্জাতে তপন কুমার কোন নতুনত্ব দেখাতে পারেননি। সঙ্গীত পরিচালক বেতার শিল্পী হাসানুজ্জামান তালুকদার অনুষ্ঠানে সারাক্ষণ অনুপস্থিত থাকা সত্তেও তাঁর নাম বিভিন্ন ভাবে ঘোষণা করার কোন অর্থ হৃদয়ঙ্গম করতে পারলামনা। কণ্ঠ সঙ্গীতে গোলাম সরওয়ার খান সাধন অপূর্ব কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। নাটকটির
বিভিন্ন চরিত্রে অংশ নেন অমলেন্দু কুমার, নুরুল ইসলাম নুরু, নজরুল ইসলাম রবি, এবাদত আলী, আব্দুস সাত্তার, ইকরামূল হক, মোনায়েম, শওকত হোসেন স্বপন, মঙ্গল কুমার, শরীফ উদ্দিন, আবুল কাসেম প্রমুখ শিল্পীগণ। পরিচালনা সার্থকতার দাবিদার। আগামীতে ধ্রুবতারা সংঘের কাছ থেকে আরো সার্থক নাটক আশা করি।
চিত্রাকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত সেই নাট্য সমালোচনাও ছিলো আমার জন্য প্রেরণার উৎস। এছাড়া পাবনা এডয়ার্ড কলেজে অধ্যয়ন কালে আমি বার্ষিক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা ও হাস্য-কৌতুকে অংশ নিয়ে প্রায়ই প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হতাম। একবার এই খবর পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক রবিউল ইসলাম রবি ‘দৈনিক
সংবাদে’ প্রকাশ করলে অর্থাৎ উক্ত খবরে আমার নাম ছাপা হওয়ায় আমি ওই পত্রিকা খানি উপযাচক হয়ে অনেকেকেই দেখিয়েছিলাম এবং সযতনে রেখে দিয়েছিলাম।
খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করা কিংবা তাতে লেখালেখি করার সখের আরেকটি কারণ ছিলো, তাহলো আমি বাল্যকাল থেকেই গল্প-কবিতা লিখতাম। আর যখন পাবনা রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে (আর এম একাডেমী) দশম শ্রেণিতে পড়ি তখন একাডেমির নীচ তলায় পূর্ব পাশের হল রুমে ৬ষ্ঠ হতে দশম শ্রেণির সকল ছাত্রদের নিয়ে প্রধান শিক্ষক আজিজুল হকের সভাপতিত্বে (বাড়ি শাহজাদপুরের পোতাজিয়া বর্তমানে মৃত) একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে আমাকে ছাত্র সংসদের জেনারেল সেক্রেটারি বা জিএস নির্বাচিত করা হয়। শুধু তাই নয়, আমাকে বার্ষিকী সম্পাদকের ও দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আরএম একাডেমির আমিই প্রথম জিএস এবং প্রথম বার্ষিকী সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার গৌরব অর্জন করি।
আমার সম্পাদনায় আর এম একাডেমী হতে সর্বপ্রথম স্কুল বার্ষিকী বের হয়। আরএম একাডেমীর ইংরেজি শিক্ষক জহুরুল হকের তত্বাবধানে ১৯৬৭ সালে এই বার্ষিকী প্রকাশ পায়। বার্ষিকীতে আমার লেখা রম্য রচনা “হায়না” তখন পাঠক মহলে দারুন উপভোগ্য হয়, ফলে আমার পরিচিতি অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। যার ফলশ্রুতিতে আমার সহপাঠি
বন্ধু আব্দুস সাত্তার (ভাঙ্গুড়া হাজী জামাল উদ্দিন কলেজের সাবেক অধ্যাপক (মৃত) সহ আবুল কাসেম মৃধা (আরিফপুর ফাজিল মাদরাসার
সাবেক প্রভাষক (মৃত)), এবি সিদ্দিক হোসেন (মৃত) এবং আরো অনেকে মিলে পাবনা থেকে “দিগন্তিকা” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশে সচেষ্ট হই। গঠন করা হয় দিগন্তিকা সম্পাদনা পরিষদ। এই পরিষদের সভাপতি হন রাজশাহী ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যাপক মুহম্মদ হাবি বুন্ন নবী। সহ-সভাপতি এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র আব্দুল হাই
বিজু, প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন কলেজের অধ্যাপক মুহম্মদ ইদরিস আলী।
পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার এবং আমাকে সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। দিগন্তিকা পত্রিকায় যাঁরা লিখতেন তাঁরা হলেন, অধ্যাপিকা ফিরোজা বেগম, অধ্যাপক কামরুজ্জামান, অধ্যাপক একেএম হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক হাবি বুুন্নবী, অধ্যাপক ইদরিস আলী, অধ্যাপক আব্দুল হামিদ টিকে, আরো যাঁরা লিখতেন তাঁরা হলেন, মনোয়ার হোসেন জাহেদী , সামসুর রহমান, সোরহাব হোসেন খান, সৈয়দ আব্দুল হাই, এবি সিদ্দিক, এবাদত আলী, আবু দাউদ, ফরিদা বেগম, সৈয়দ ফয়জুল হাসান,
কুদ্দুস হাসান ফজলে, আখতারুজ্জামান, আবুল কাসেম মৃধা প্রমুখ। দিগন্তিকা পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় শিশুতোষ কবি বন্দে আলী মিয়া আর্শীবাণী লিখেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন, ‘‘নতুন পথের নবীন পথিক/ তোমার দিগন্তিকা/ খ্যাতির মাল্য কন্ঠে পরাবে/ ভালে দেবে জয়টিকা।’’এসময় পাবনা থেকে “ আমার দেশ” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা
প্রকাশ হতো। পত্রিকাটির সম্পাদক ও প্রকাশক এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যাপক ‘‘চলন বিলের ইতি কথা’’র লেখক আব্দুল হামিদ টিকে। আমার দেশ একই সময় পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি থেকে উর্দু ভাষায় “হামারা ওয়াতন” এবং লন্ডন থেকে ইংরেজি ভাষায় “ আওয়ার হোম” নামে প্রকাশিত হতো। হামিদ স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে আমি ওই পত্রিকায়
লেখা ছাপানোর জন্য অনুরোধ করলে তিনি শুধু লেখাই নয় সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবরও পাঠাতে বলেন। স্যারের কথায় খবর লেখার
অনুপ্রেরণা লাভ করি। কিন্তু পত্রিকায় খবর লেখার কলাকৌশল সম্পর্কে তখন
আমার নুন্যতম ধারণাটুকুর ও জন্ম হয়নি। তাই একাকি ভাবতে থাকি কিভাবে খবর লেখা যায়। (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।
মোবাইল ফোন নং ০১৭১২২৩২৪৬১ ঊসধরষ: বনধফধঃধষর ১৯৭১ @ মসধরষ .পড়স তারিখ:
২০/১০ /২০২০.