পাবনা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির অফিস দখলে নিল সন্ত্রাসীরা। প্রশাসনের নিরবতার অভিযোগ।


মোবারক বিশ্বাস,পাবনা ঃ পাবনা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতি দখল করেছে কতিপয় সন্ত্রাসীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পৈলানপুরের মৃত ইয়াকুব আলী ওরফে ইয়াকুব গুন্ডের ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম শরিফ ওরফে গুন্ডে শরিফ ওরফে হাজি শরিফের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী অফিসটি দখলে নেয়। এ আর কর্নারের ৩য় তলায় অবস্থিত পাবনা জেলা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির তালা ভেঙ্গে তা দখল করেন। এ ব্যাপারে সমিতির সাধারণ সম্পাদক কালাম আহম্মেদ পাবনা থানা পুলিশ সহ পাবনার পুলিশ সুপার ও সদর পুলিশের সার্কেলের সহযোগিতা চাইলেও তা তিনি পাননি বলে অভিযোগ করেন। পরে পাবনা র‌্যাব ক্যাম্পের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছালেও সন্ত্রাসীরা সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। র‌্যাবের টহল দল মালিক সমিতির অফিসে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করার পর তারা সেখান থেকে চলে যান বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান। এদিকে গুন্ডে শরিফের লোকজন প্রচার করে র‌্যাবের উপস্থিতিতে তারা অফিস দখলে নিয়েছে। সমিতির সাধারন সম্পাদক কালাম আহম্মেদ বলেন, আমি বগুড়ায় ৮টি জেলার বাস মালিকদের বৈঠকে গতকাল বুধবার সেখানে গিয়েছিলাম। এ কারনে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় আমি বাসায় বিশ্রামে ছিলাম। বেলা ১২টার দিকে আমার অফিস সহকারী হামিদুল আমাকে ফোনে জানান, শরিফের নেতৃত্বে ২০/৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী এ আর কর্নারের ৩য় তলায় অবস্থিত পাবনা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির আমাদের অফিসের তালা ভেঙ্গে তারা ভিতরে প্রবেশ করে। আমি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদকে অবহিত করি। তিনি কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমি পাবনা পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সাহেবের কাছে ফোন দেই। তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি। পরে পাবনা সদর সার্কেল ইবনে মিজানের মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পাবনা পুলিশ প্রশাসনের এমন অসহযোগিতায় আমি হতবাক হয়ে যায়। পরে আমি পাবনা র‌্যাব ক্যাম্পে বিষয়টি জানালে র‌্যাবের একটি টহল দল সেখানে গিয়েছিল। এরপরে আমি আর কিছুই জানি না। এখন যদি আমি আমাদের অফিসে যায় তাহলে সন্ত্রাসী শরিফ আমাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। শরিফ একজন দুধর্ষ সন্ত্রাসী। সে এলাকায় হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ধর্ষনসহ একাধিক অপরাধের সাথে জড়িত। তিনি পুলিশের এমন রহস্যজনক ভুমিকার সমালোচনা করে বলেন, আমি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম মোহাম্মদ নাসিম সাহেবের ভাইরা। আমাদের পারিবারিক একটি ঐতিহ্য রয়েছে। আমার ভাই একজন সাংবাদিক। আমার জামাই একজন সেনা কর্মকর্তা। অথচ পুলিশ যদি আমাদের সাথে এমন আচরন করে, তাহলে সাধারণ মানুষের সাথে কি ব্যবহার করতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। পাবনার আইন শৃংখলা রক্ষাকারীবাহিনীসহ, জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ সকল দফতরের কাছে আমার বিনিত অনুরোধ আমাদের বৈধ কমিটির অফিস কিভাবে একজন সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে দিবালোকে দখল করে তার সুবিচার কামনা করছি। যেহুতু ৩ বছর মেয়াদি কমিটি এক বছর পার হয়েছে আরো দুই বছর এখনও কমিটির মেয়াদ রয়েছে। মেয়াদ উর্ত্তিনের পরে কমিটিতে যারা আসবে আমরা তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবো। এদিকে কালাম আহম্মেদ আরো জানান, সন্ত্রাসী শরিফ বিগত কয়েক মাস ধরে অফিসটি দখলে নিতে পায়তারা করে আসছে। বিষয়টি আমি জানতে পেরে আমি ও আমার সভাপতি আলহাজ্ব ওমর আলী বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় গত ৩-০৮-২০২০ ইং তারিখে শরিফুল ইসলাম ওরফে গুন্ডে শরিফের বিরুদ্ধে একটি সাধারন ডায়েরী করি। যার নং-১১৭, তাং-০৩-০৮-২০২০। এদিকে নিজের জীবনের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে একই তারিখে পাবনা থানায় আরেকটি জিডি এন্ট্রি করেন কালাম আহম্মেদ। যার নং-১১৬, তাং-০৩-০৮-২০২০ইং। জিডি করার পরেও অজ্ঞাত কারনে পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থায় গ্রহন করেনি। শুধু তাই নয়, আমাদের পরিবারের প্রতি অব্যাহত হুমকির কারনে আমার স্ত্রী রেহেনা আহম্মেদ জুই আইজিপি অফিস বরাবর দরখাস্ত করেন। আইজিপি অফিসে আবেদন করার ফলে পাবনা পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। পাবনা সদর সার্কেল ইবনে মিজান গত ২৮ সেপ্টেম্বর আমাদেরকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে সকল ঘটনা শুনে স্বাক্ষর গ্রহন করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ করা হয়নি। ফলে আজ বৃহস্পতিবার পাবনা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির অফিসটি শরিফ দখল করার সাহস পেল। অফিসের মালামালসহ গুরত্বপুর্ন কাগজপত্র শরিফ লুট করে নিয়ে যায় বলে একাধিক ব্যাক্তি আমাকে জানিয়েছে। সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব ওমর আলী জানান, তিনি অসুস্থ্য বাড়িতে বিশ্রামে আছেন। তিনি এও জানান, তিনি জানতে পেরেছেন তাদের সমিতির অফিস একদল সন্ত্রাসী তালা ভেঙ্গে দখল করে নিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কালাম আহম্মেদ সাহেব আমাকে ফোন করার পরপরই এসআই জহুরুলকে সেখানে পাঠায়। এসআই জহুরুল তাকে জানায়, শরিফের নেতৃত্বে কতিপয় মালিক তালা ভেঙ্গে অফিসে অবস্থান করছে। জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি জানান, কালাম সাহেবও জিডি করেছেন, অপর পক্ষ কালাম সাহেবদের বিরুদ্ধে জিডি করেছে। তাই আমরা জিডির তদন্তের বিষয়ে আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেছি। আদালত অনুমতি দিলে পরবর্তি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি আরো জানান, মালিক পক্ষের বিরোধে আমরা জড়িত হতে পারিনা। তারা নিজেরাই এ বিষয়ে নিস্পত্তি করুক। ওসির কাছে জানতে চাওয়া হয়, অফিস দখলকারীরা প্রকৃত মলিক কিনা তা আপনি বুঝলেন কিভাবে। তখন তিনি বলেন, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অবহিত আছেন। ঘটনাস্থলে র‌্যাবের একটি দল পরিদর্শন করেন। র‌্যাবের পাবনা ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানী কমান্ডার আমিনুল ইসলাম তরফদার বলেন, কালাম আহম্মেদ সাহেবের ফোন পেয়ে র‌্যাবের একটি দলকে সেখানে পাঠায়। তারা আমাকে যে ভাবে বলেছে, তাতে মনে হয়েছে বিষয়টি তাদের অভ্যান্তরীন কোন্দল। আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে, তারা আইনগত ব্যবস্থা নিলে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করবো।