আমরা আমজনতার অংশ। এমপি. মেয়র. চেয়ারম্যানরা হলেন আমজনতার প্রতিনিধি। তাঁরা নির্বাচিত হওয়ার পর যথানিয়মে শপথ গ্রহন করেন। শপথে যাকিছু ভাল ও গুরুত্বপূর্ণ শব্দ সবই থাকে। বলা বাহুল্য এসবের মধ্যে রাষ্ট্র. জনগন তো থাকেই। সম্মানীত এই সকল জনপ্রতিনিধিরা তখন থেকে হয়ে ওঠেন জনগনের খেদমতে নিবেদিতপ্রান।
অপরদিকে রাস্ট্রের প্রশাসন বিভাগও একই ধরনের কর্মযজ্ঞে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাঁরাও জনগনের জন্য নিবেদিতপ্রান। এঁরা জনগনের ট্যাক্সের টাকা থেকে বেতন পান। জনপ্রতিনিধিরাও কম-বেশি ভাতা পান। উচ্চপদে আসীন বড় বড় কর্মকর্তারা রাস্ট্রের অনেককিছুই দেখভাল করেন। তাঁদের বিজ্ঞ
সিদ্ধান্তে অনেক প্রকল্প গৃহিত হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সব জনপ্রতিনিধি অথবা সব আমলা (সরকারি কর্মকর্তা) কি কার্যক্ষেত্রে
তাদের দায়িত্ব গ্রহনকালীণ সেই শপথের কথা মনে রাখেন-? বাস্তবতা তা বলেনা।
সম্প্রতি কক্সবাজারে মেজর (অব:) সিনহা হত্যা. সিলেটে রায়হান উদ্দিনকে থানায় রেখে
নির্যাতন ও মৃত্যু. সংঘটিত কয়েকটি নারী নির্যাতন যেমন দেশব্যাপী আলোড়ন তৈরি করেছে তেমনি ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন কর্তৃক সহকারি কমিশনার ভূমি ও জেলা প্রশাসকের সাথে দূর্ব্যবহার এবং পাবনার বেড়া পৌর মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা (বহিস্কৃত) আব্দুল বাতেন কর্তৃক প্রকাশ্য মিটিং’এ উপজেলা নির্বাহী
অফিসারের সাথে অশালীণ ব্যবহার ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দেশবাসীর মনে নানান শংকা সৃষ্টি করছে। তবে সরকারের ভাল দিক হচ্ছে এসব অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
যারা মেজর সিনহা ও সিলেটের রায়হানকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে তারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি। অন্যদিকে ফরিদপুর ও সাঁথিয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের নাজেহাল করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। বাস্তবে শপথ গ্রহনকারি উভয়পক্ষই ব্যক্তিস্বার্থে তা শুধু লংঘন করছেন তাই নয়
কোন কোন ক্ষেত্রে জীবনহানির মত ঘটনাও ঘটছে। এখন সংশ্লিষ্ট অনেকে হয়ত বলবেন, এ ধরনের অপকর্মকারীদের সংখ্যা তো বেশি নয়। কিন্তু এই সংখ্যা কি আসলেই কম-? যখন যেখানে সামাজিক গণমাধ্যম অথবা মিডিয়াতে ঘটনার আদ্যপান্ত প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে তখনই কেবল ‘ভাইরাল-ঘটনা’গুলো আমলে নিয়ে বিচারের সম্মুখিন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগ একেবারে না পাওয়ার চেয়ে কিছুটা ভাল নি:সন্দেহে। কিন্তু অন্য অনেক ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোর উপর মানুষের আস্থাহীনতার কারনে বিচার প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়না।
সমাজের ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষী দিতে এগিয়ে আসেননা। ফলে আইনের আশ্রয় নিলেও প্রমানের অভাবে সাধারন মানুষ বিচারপ্রাপ্তী থেকে বঞ্চিত হয়।
ইতোমধ্যে ফরিদপুরের এমপি নিক্সন ও বেড়ার মেয়র আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
বাতেন নাকি এরই মধ্যে পালিয়ে গেছে। এমপি সাহেব সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর অবস্থান তুলে
ধরেছেন। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আচরণবিধি লংঘনের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ফলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বহাল থাকার বিষয়টি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।
গত ১২ই অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও দেড় ডজন মামলার আসামি মীর হোসেন মীরু এক পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে শাসিয়েছেন। সাদা পোশাকে থাকা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) এক সদস্যকে আঙুল উঁচিয়ে প্রকাশ্যে শাসানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
যখন আমাদের দেশে কিছু জনপ্রতিনিধি, নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ ধরনের
অস্থির ও লাগামছাড়া আচরণ দেখা যাচ্ছে তখন ম্যাক্সিকোর একজন সংসদ সদস্যের আচরণ দেখে অবাক হতে হয়। তিনি অধিবেশন চলার সময় তার সমস্ত পোষাক খুলে ফেলেন। সবাই তখন ছি ছি করে উঠে এবং লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে। তখন তিনি বক্তব্য শুরু করেন এভাবেঃ
‘তোমরা আমাকে উলঙ্গ দেখে লজ্জা পাচ্ছো অথচ শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেয়ে আছে তা দেখে তোমরা লজ্জা পাও না। তোমরা আমাকে উলঙ্গ দেখে লজ্জা পাচ্ছো অথচ শহরের লক্ষ লক্ষ মানুষ চিকিৎসা
পাচ্ছে না তা দেখে তোমরা লজ্জা পাও না, তোমাদের দুর্নীতির শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ তরুণ বেকার
বসে বসে হতাশ l পার করছে তা দেখে তোমরা লজ্জা পাও না।
তোমরা আমাকে উল্ঙ্গ দেখে লজ্জা পাচ্ছো অথচ তোমাদের দুর্নীতির কারণে লক্ষ তরুণী পরপুরুষের
সামনে উলঙ্গ হচ্ছে তা সব জেনেও তোমরা লজ্জা পাও না’।
আমাদের দেশের মত হয়ত সেখানেও অনেক পরিবেশ জনগনের অনুূকূলে নেই। ফলে একজন
জনপ্রতিনিধি নিজের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ প্রকাশের পন্থা হিসেবে নগ্নতাকে বেছে নিয়েছেন।
বেড়ার মেয়র আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। তবে
নিক্সন চৌধুরী সম্পর্কে দুর্নীতির কোন খবর এখনো দেখা যায়নি। জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের
একটি অংশ নানানভাবে দুর্নীতির সাথে জড়িত এটা এখন ওপেন-সিক্রেট। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি এদের অনেককেই নিবৃত করতে পারেনি। ফলে যারা ধরা পড়ছে তাদের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর পদক্ষেপ জনগন শুভ দৃষ্টিতেই দেখছে। এরপরও শেকড় পর্যায়ে দুর্নীতি বিরোধী কোন অভিযান দৃশ্যমান নয়। দুদকের জেলা পর্যায়ের কার্যক্রম সক্রীয় করতে না পারলে শুদ্ধি
অভিযানের সুফল পাওয়া মুশকিল।
ক্ষমতার সুবিধা নিয়ে অনেকেই নির্বিঘেœ দুর্নীতির অর্থে ফুলে-ফেঁপে কলাগাছ হয়ে
গেছেন। তাঁদের দাম্ভিকতাও অনেকক্ষেত্রে লাগামছাড়া পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে; পাবনার আব্দুল বাতেন তাঁর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আমরা ওসি প্রদীপ কুমার-এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া গংদের মত সরকারি কর্মকর্তা-
কর্মচারীদের যেমন দেখতে চাইনা; তেমনি আব্দুল বাতেন গংদের মত জনপ্রতিনিধি ও মীর
হোসেন মীরুর মত মাদক ব্যবসায়ীকেও কোন রাজনৈতিক দলে দেখতে চাইনা। এ ধরনের
অপকর্মকারীদের দ্বারা কোন বাহিনী অথবা দল শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হতে পারেনা। এরা সমাজ. রাষ্ট্র ও দেশের শত্রু। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোন বিকল্প নেই।
(লেখক: সিনিয়র সংবাদকর্মী. সাবেক ছাত্রনেতা ও সাবেক সভাপতি-ঈশ^রদী প্রেসক্লাব)।