প্রফেসর ড. মামুনুর রশীদঃ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বর্তমান সময়ে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে রোগীর সুরক্ষা (পেসেন্ট সেফটি) নিশ্চিত করা ও নিরাপদ ঔষধের ব্যবহারের (ড্রাগ সেফটি) উপর সুনির্দিষ্ট নিয়ম নীতির উল্লেখ করেছে। রোগীকে ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নিরাপদ রেখে চিকিৎসা প্রদান করতে হলে নিরাপদ ও যোক্তিক ঔষধের ব্যবহার খুবই অপরিহার্য। অনিরাপদ ঔষধ ব্যবহারের ফলে রোগীর ভালো হওয়ার পরিবর্তে উল্টো রোগীর দেহে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। সঠিক পদ্ধতির নিয়মগুলো না মেনে ঔষধ সেবন করলে রোগীর দেহে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। ঔষধের ডোজ সংখ্যা এবং ডোজের পরিমান এবং ঔষধের প্রকৃতির উপরও রোগীর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। এই ধরনের জটিলতা দূর করতে হলে ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধের ব্যবস্থাপত্রটি (প্রেসক্রিপশন) ফার্মাসিস্ট দ্বারা যথাযথভাবে যাচাই এবং পরামর্শ গ্রহণ করার পরে রোগীকে ঔষধ সেবন করানো উচিত। আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল ফেডারেশনের (এফআইপি) প্রধান লক্ষ হচ্ছে বিশ্বজুড়ে যথাযথ, সাশ্রয়ী, মানস¤পন্ন ওষুধের আরও ভাল আবিষ্কার, বিকাশ এবং নিরাপদ ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করা এবং ফার্মেসী পেশার মান ও অনুশীলন এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করা। এফআইপি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা গঠিত গুড ফার্মেসী প্রাকটিস গাইডলাইনস অনুযায়ী ফার্মাসিস্টের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে রোগীর সার্বিক কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রাখা, সেবা দান করা এবং নিরাপদ ঔষধের নিশ্চায়তা প্রদান করা।
অনিরাপদ ঔষধের অনুশীলন এবং ঔষধের ত্র“টি (মেডিকেশন এরর) বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির অন্যতম এবং এড়ানো যায় না এমন ক্ষতির একটি প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ঔষধের ত্র“টির সাথে জড়িত বার্ষিক ব্যয় ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হিসাবে ধরা হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ১% হিসাবে ধরা হয়েছে। ত্র“টিগুলি ঔষধ ব্যবহারের প্রক্রিয়াটির বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটতে পারে। ঔষুধের ত্র“টিগুলি দেখা দেয় যখন সার্বিক ঔষুধ ব্যবস্থাপনার ঘাটতি তৈরি করে এবং দক্ষ ও পর্যাপ্ত লোকবল যথা ফার্মাসিস্টের অভাবে ঔষধের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন), নির্ধারণ, বিতরণ, এবং পর্যবেক্ষণের অনুশীলনগুলিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে রোগীর গুরুতর ক্ষতি, অক্ষমতা এবং এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ওষুধের নিরাপদ সংরক্ষণ, ওষুধের অপব্যবহার রোধ ও যৌক্তিক ব্যবহার ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে রোগীকে সেবাদান করা ও সুরক্ষা রাখা ডাক্তারের পাশাপাশি একজন ফার্মাসিস্টেরও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে।
২০০৮ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ঔষধের ব্যবস্থাপত্রে উলেখিত সমস্ত ঔষধের অর্ধেক সরবরাহ বা বিক্রয় নির্ধারিত হয় অনুপযুক্তভাবে এবং শতকরা ৫০ ভাগ রোগী সঠিক নিয়মে ঔষধ সেবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হাসপাতালে ঔষধের ব্যবস্থাপত্রের ত্র“টি (প্রেসক্রিপশন এরর) একটি দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। হাসপাতালে অবস্থান কালীন সময়ের মধ্যে রোগীর প্রায় ৩০% সমস্যা ঔষুধের ত্র“টির সাথে স¤পর্কিত। ত্র“টিগুলি সাস্থ্যসেবা গ্রহনের যে কোন পর্যায়ে ঘটতে পারে, সেটা রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচন থেকে রোগীর দেহে ঔষধ প্রবেশ করানোর যে কোন সময়ে হতে পারে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, হাসপাতালে চিকিৎসারত রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণ হচ্ছে ঔষুধের ত্র“টির ফলে, যার বেশিরভাগই ঔষধের ব্যবস্থাপত্রের ত্র“টির কারণে ঘটে থাকে। ২০০৯ সালে
ব্রিটিস জার্নাল অফ ফার্মাকোলজীতে প্রকাশিত এক গবেষনায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের ১-২% রোগীর শ্রাীরিক অবস্থ্রা অবনতি হয় ঔষধের ত্র“টি অথবা ভুল ঔষধ গ্রহণের ফলে যার অধিকাংশ ঘটে থাকে ঔষধের ব্যবস্থাপত্রের ত্র“টির বা ভুলের কারণে।
বিভিন্ন কারণে ঔষধের ব্যবস্থাপত্রের ত্র“টি হয়ে থাকতে পারে, এর মধ্যে কয়েকটি কারণ উলেখযোগ্য, সেগুলো হচ্ছেঃ (১) সঠিক ঔষধ এবং ঔষধের তথ্যের অনুপস্থিতি (২) ঔষধের সঠিক মাত্রা বা পরিমান (৩) ভুল সংক্ষিপ্তসার ব্যবহার (৩) অদক্ষ বা অ¯পষ্ট হাতের লেখা (৪) সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া / সিদ্ধান্তের ত্র“টি (৫) ঔষধের মিথস্ক্রিয়া এবং (৬) ঔষধের ডুপ্লিকেশন। বাংলাদেশে ঔষধের ব্যবস্থাপনা ত্র“টির উপর আমরা সর্বপ্রথম গবেষণা পরিচালিত করি যা ২০১৪ এবং ২০১৫তে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়। উলেখ্য যে, উক্ত হাসপাতালগুলোতে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টের কোন অন্তর্ভুক্তি ছিল না এবং গবেষনায় দেখা গেছে ব্যবস্থাপত্রে ৫০% এর বেশী ঔষধ মিথস্ক্রিয়া, ৩০% এর বেশী ঔষধের মাত্রা বা পরিমানের অনুপস্থিতি, ৫% এর বেশী অ¯পষ্ট হাতের লেখা এবং একই ধরনের বা অনুরুপ ঔষধের প্রয়োগ প্রায় ২% এর কাছাকাছি পরিলক্ষিত হয়। এই গুরুতর ব্যবস্থাপত্রের ত্র“টিগুলি হচ্ছে রোগীর অসুস্থতা এবং মৃত্যু, হাসপাতালে দীর্ঘদিন অবস্থান এবং চিকিৎসার অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রধান কারণ। ২০১