স্বপ্নে দৈব আদেশ। ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে স্ত্রী তুলসী রানীকে হাতি কিনে দিতে হবে। নইলে কঠিন অভিশাপ। নিরুপায় কৃষক দুলাল চন্দ্র বিক্রি করেন তার চাষের জমি। আর সেই টাকায় কেনা হাতি এখন আয়েশি দিন কাটাচ্ছে দুলালের বাড়িতে। স্বপ্নে আদেশ পেয়ে কেনা হাতি দেখতে ভিড় জমেছে এলাকাবাসীর।
লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের দেউতিরহাট রতিধর এলাকায় হাতি কেনার এ ঘটনা সপ্তাহখানেক আগের।
এলাকাবাসী জানায়, দুই দশক আগে তুলসী রানীকে বিয়ে করেন দুলাল সাহা। এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে এই দম্পতির। বসতঘর বলতে একটি টিনের চালা ও মাটির ঘর। পৈত্রিক জমি চাষাবাদ করে চলে সংসার।
দুলাল সাহা জানান, এর আগে স্বপ্নে হাঁস জবাইয়ের দৈব আদেশ পান স্ত্রী। সেটি পূরণ করতে না করতেই আরেক আদেশ, কিনতে হবে ঘোড়া। এক বিঘা জমি বিক্রি করে দুই বছর আগে সংগ্রহ করা হয় দুটি ঘোড়া। এবার হাতি কিনতে গিয়ে আর্থিক কষ্ট চরমে উঠেছে।
তুলসী রানী জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে দেব-দেবীর একনিষ্ঠ পূজারি তিনি। স্বপ্নে পাওয়া তরিকায় স্থানীয়দের দিচ্ছেন পানি পড়াসহ টোটকা চিকিৎসা। সম্প্রতি ঘুমের মধ্যে হাতি কেনার দৈব আদেশ পান। এরপর অর্থ জোগাড়ে পৈত্রিক ৭২ শতক জমি বিক্রি করেন স্বামী। বন্ধক রাখেন আরও দুই বিঘা। বসতভিটার গাছ বিক্রি করে জোগাড় হয় আরও কিছু টাকা। সব মিলিয়ে ১৭ লাখ টাকায় মৌলভীবাজার থেকে কেনা হয়েছে এই মাদী হাতি।
হাতির দেখভালে ১৫ হাজার টাকা বেতনে রাখা হয়েছে মাহুত শরীফুলকে। তিনি জানান, প্রতিদিন খাবার হিসাবে ১০টি কলা গাছ, ৩ কেজি ভূষি, ২ কেজি গুড় ও ২ কাদি কলা দিতে হয় হাতিকে। এতে মাসে খরচ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে হাতি পোষায় মাসে গুণতে হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
এত খরচের জোগান আসবে কীভাবে- এমন প্রশ্নে দুলাল চন্দ্রের জবাব, যিনি আদেশ দিয়েছেন তিনিই সব দেখবেন।
স্ত্রীর প্রতি দুলালের ভালোবাসায় মুগ্ধ পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, এই দৃষ্টান্ত স্থানীয়দের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা উত্তম কুমার জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে বন্যপ্রাণী ব্যক্তিপর্যায়ে লালন-পালনে বিধিনিষেধের বিষয়ে প্রশ্নে কোনো জবাব দেননি তিনি।