নির্মলেন্দু সরকার বাবুল
সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নেত্রকোণা দুর্গাপুর উপজেলার সুসঙ্গ সরকারি মহাবিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হলেও তা আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরেজমিন তদন্ত করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকা ফেরতের নির্দেশ দেন দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম। কিন্তু তাতেও বিকার নেই কলেজ কর্তৃপক্ষের। এদিকে প্রতিদিনই শত শত শিক্ষার্থী ভর্তি রশিদ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে ভিড় করছে। এদিকে কলেজের অধ্যক্ষ বলছেন, তিনি একাই প্রতিষ্ঠানের সব!
অভিযোগ আছে, সুসঙ্গ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান সিরাজী নানা ধরনের গোঁজামিল দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন। অতিরক্তি ফি ফেরতের নির্দেশনা পেয়েও তার গাঁ- করছেন না। এমনকি সরেজমিনে কলেজে গিয়েও শিক্ষার্থীদের হয়রানির চিত্রের অনিয়ম দেখা গেছে। বাড়তি টাকা ফেরত নিতে আসা অসংখ্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক কলেজ চত্বরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব ও কর্মহীন হয়ে পড়া অভিভাবকদের আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয় বিবেচনা করে দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধোর সন্তান ভর্তিতে নির্ধারিত ফি’র বেশি নেওয়া যাবে না এমন নির্দেশনা দেয় সরকার। তবে তার তোয়ক্কা না করেই আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই ভর্তি ফি, মাসিক বেতন, অগ্রীম অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি বাবদ ৪২০, নাস্তা খরচ বাবদ ১৫০ টাকা রশিদ বিহীনসহ যাবতীয় খরচের বিষয় উল্লেখ করে মানবিক ও ব্যবসা শাখায় (ভর্তি ফি সেশন বাবদ ১৫০০) টাকাসহ ২৬৭০ এবং বিজ্ঞানে (ভর্তি ফি সেশন বাবদ ১৫০০) ২৯২০ টাকা প্রদান করতে হবে মর্মে ভর্তির নির্দেশনা দেন সুসং সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান।
জানা গেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশে আনুষ্ঠানিকভাবে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এ ভর্তি প্রক্রিয়া ১৭ তারিখ শেষ হওয়ার কথা ছিল। শিক্ষাবোর্ড আরও ৪দিন ভর্তির সময় বৃদ্ধি করে একটি নোটিশ জারি করে। গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত সুসং সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে প্রায় ৮০৯ শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে মানবিক শাখায় ৭০২ জন শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান শাখায় ৬৩ ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৮৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার অভিযোগ করেছে, শিক্ষা বোর্ডের জারিকৃত ভর্তির প্রজ্ঞাপনে সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি মফস্বল-পৌর (উপজেলা) এলাকায় ১০০০ টাকার বেশি হবে না বলে উল্লেখ থাকলেও সে নিয়ম-নীতি ও নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে নানা ধরণের খাত তৈরি করে অতিরিক্ত ভর্তি ফি নিয়ে দেদারছে ভর্তি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন মিজানুর রহমান ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান সিরাজী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানায়, চলতি বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ও সেসন ফি বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পরীক্ষা ফি, অনলাইন প্রসেসিং ফি, ভর্তি ফরম, কলেজ উন্নয়ন, খেলাধুলা বাবদ আরও প্রায় ১২০০ টাকা ফি আদায় করা হচ্ছে। কিন্ত বাংলা, ইংরেজী ও আইসিটি বিষয়ের শ্রেণি শিক্ষক সংকট রয়েছে। শ্রেণি ওয়ারি শিক্ষক সংকটে ক্লাস ভোগান্তিতে শঙ্কায় ভুগছেন ভর্তি হতে আসা অসংখ্য শিক্ষার্থী।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে সুসঙ্গ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমার কোনো সভাপতি নেই। আমি প্রিন্সিপাল এ প্রতিষ্ঠানের সব। স্টাফ কাউন্সিলের সিদ্বান্ত নিয়েই ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অতিথিদের যে চা খাওয়ানো হয়, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে, নানা কৌশলে এটা বের করতে হয়।’
বাড়তি ফি ফেরতের ব্যাপারে অধ্যক্ষ মিজানুর বলেন, ‘স্টাফ কাউন্সিলের মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’ তবে কবে এ অর্থ ফেরত দেওয়া হবে; তা বলেননি তিনি।
জানা গেছে, অগ্রীম অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ফি বাবদ ৪২০ টাকা আদায় ও কোনো প্রকার রশিদ ছাড়াই লোগোযুক্ত ব্যাজ ও অন্যান্য দ্রব্যাদি বাবদ ১৫০ টাকা প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে।
ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক শাহজাহান সিরাজীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেও কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম বলেন, ‘সরকারি বিধি-বহির্ভূত একাদশ ভর্তিতে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে কলেজটিতে। আমি কলেজ পরিদর্শন করে বাড়তি টাকা আদায়ের সত্যতা পাই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি নেওয়া টাকা ফেরত দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে আসি। এখনো টাকা ফেরত পায়নি কোনো শিক্ষার্থী। পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে লেখা হচ্ছে। এতে আমরা বিব্রত। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’