চাটমোহরে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছে সিনেমা হল। ব্যবসায়ীক মন্দা স্থায়ী হওয়াতে একে একে বন্ধ হয়েছে সিনেমা হলগুলো।
চরম ক্রান্তিকাল পার করছে চলচ্চিত্র প্রদর্শন শিল্প। নিভে গেছে পাবনা চাটমোহরের সিনেমা হলগুলোর রূপালী পর্দার আলো। গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে ৩টি প্রেক্ষাগৃহ।
৩টি সিনেমা হলের মধ্যে একটিতে নিয়মিত সিনেমা প্রদর্শিত হলেও বর্তমানে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন চলছে কেবল হল ভেঙ্গে নতুন কিছু তৈরি করার প্রতিযোগিতা। সিনেমা হল ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে মাল্টিকমপ্লেক্স, গুডাউন, গো খাদ্যের মিল, গ্যারেজ, শপিংমল, কারখানা।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবার হাতে স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট থাকায় এখন সিনেমা নাটকসহ পুরো চিত্তবিনোদন ব্যবস্থা হাতের মুঠোয়, তাই এখন আর সিনেমা হলে যাওয়ার দরকার হয় না। মানহীন সিনেমা, অসামাজিক পরিবেশ, হল আধুনিকায়ন না হওয়া, হাতের মুঠোয় ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, আইফ্লিক্সে সিনেমা দেখার অপার সুযোগ ইত্যাদি কারনে সিনেমা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা।
ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ সমূহের ক্রমবিলুপ্তির এই ক্রান্তিকালে আশা জাগিয়েও গণমানুষের কাছাকাছি যেতে পারছে না হল ফ্যাশনের সিনেপ্লেক্সগুলি। পুঁজিবাদী বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছেন হল মালিকরা। গ্রাম গঞ্জের সব যায়গাতেই এখন ডিস এন্টেনা ছোট ছোট ষ্টলে চায়ের আড্ডায় টিভিতে সিনেমা নাটক দেখা যায়, ফলে এখন সিনেমা হলের ব্যবসা অচলাবস্থা। এখন নতুন সিনেমা চালালে দু’একদিন চলে কিন্তু দশ পনের বছর পূর্বে ভাল মানের সিনেমা হলে প্রায় এক দেড় মাস অনায়েসে চলতো, কখনও দর্শক কমতো না।
চাটমোহর উপজেলায় সর্বমোট সিনেমা হল ছিল ৩টি, বর্তমানে সবগুলি সিনেমা হল একেবারে বন্ধ। চাটমোহর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ‘প্রেরণা’ সিনেমা হল এখন মসলা তৈরির ফ্যাক্টরি ও গোডাউন। চাটমোহর সরকারী কলেজ গেট সংলগ্ন ‘অর্পণ’ সিনেমা হল এখন রড, সিমেন্ট এর গোডাউন।
এতদিন শহরের বড় রাস্তার সংলগ্ন বালুচর ছোটশালিখা আবাসিক মহল্লার মধ্যে ‘লাভলী’ সিনেমা হল ঢিলেঢালা ভাবে চললেও বর্তমানে সেখানেও তৈরি হয়েছে গো খাদ্যের মিল ও গোডাউন, সামনে মার্কেট।
এ ব্যাপারে সিনেমা হলের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা সলেমান হোসেন এর থেকে শোনা যায়, বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমরা এখন বেকার, ব্যবসা মন্দা হওয়ায় মালিকপক্ষ আমাদের ঠিকমত বেতন দিতে পারেনা। এখন সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে ফলে কেউ কেউ অন্য কোন পেশা বেছে নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বেকার জীবন যাপন করছি।
চাটমোহরের ‘লাভলী’ সিনেমা হলের মালিক মো. লাভলু হোসেন জানান, দীর্ঘদিন লোকসান গুনে সিনেমা হল চালিয়েছি। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে। আমাদের পক্ষে লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আমার মতো সবাই হলগুলোতে কারখানা গোডাউন তৈরি করতে বাধ্য হয়েছি। আগে সপ্তাহে এক দুটি ছবি রিলিজ পেতো এখন মাসেও একটি ছবি রিলিজ হয়না। পুরাতন সিনেমা দিয়ে হল চলেনা, নতুন একটি সিনেমা মুক্তি পেলে তা দু’এক সপ্তাহের মধ্যে নেটে বা অন্যান্য মাধ্যমগুলিতে পাওয়া যায় তাই সিনেমা হলে কেউ সিনেমা দেখতে আসেনা। তাই নিরুপায় হয়ে এই ব্যবসা ত্যাগ করতে হয়েছে।