বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) বলেছেন, নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে সেবা প্রদানে বগুড়া সারাদেশে বর্তমানে রোলমডেল হিসেবে সর্বজনগৃহীত যা সম্ভব হয়েছে আন্তরিকতা ও সহমর্মিতার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে ইতিবাচক সেবা প্রদানের জন্যে। তিনি বলেন, জেলার ১২টি থানাতে আরও সংবেদনশীলভাবে সেবাগ্রহীতাদের দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করতে হবে, যার লক্ষ্যে নিজেদের সেরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বগুড়া জেলা পুলিশের আয়োজনে এবং ইউএনএফপিএ’র সহযোগিতায় সোমবার সকালে পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে অর্ধবার্ষিক পর্যালোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি উপোরোক্ত কথাগুলি বলেন। সভায় পর্যায়ক্রমে আরো বক্তব্য রাখেন, বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাক্রমে আলী হায়দার (প্রশাসন) এবং আব্দুর রশিদ (অপরাধ), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক এসএম কাওসার রহমান, পরিবার পরিকল্পনা অফিস বগুড়ার পক্ষে ডা. শামসী আরা বেগম, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু, সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ডালিয়া নাসরিন রিক্তা, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো প্রধান হাসিবুর রহমান বিলু, আলোকিত বগুড়ার নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. ফেরদৌসি আক্তার রুনা, মাসুদা ইসলাম প্রমুখ। বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র সনাতন চক্রবর্তী জানান, অনুষ্ঠানে নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতন বন্ধে ভূমিকা রাখায় পুলিশ কর্মকর্তা এবং সেচ্ছাসেবী মোট ১১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মাঝে ৫ জন রয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা যথাক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তাপস কুমার পাল, গাবতলী সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, নন্দীগ্রাম থানার ওসি শওকত কবির, নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক কর্মকর্তা সদর থানার রোজিনা খাতুন এবং কাহালু থানার গুলবাহার খাতুন। পুরস্কারপ্রাপ্ত বাকি ৬ জন সেচ্ছাসেবী হলেন যথাক্রমে পুষ্পা খাতুন, মিতু খাতুন, জামিয়াল মুজাহিদ, মেহেদী হাসান, আতিকুর রহমান এবং হাবিবুর রহমান। সভায় করোনাকালে লিঙ্গ ভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে আড়াই মাস ব্যাপী অনলাইন ভিত্তিক বিশ^ব্যাপী একটি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্যে বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয় ইউএনএফপিএ’র ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর তামিমা নাসরিন কে। অনুষ্ঠানে শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির, শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান, শাজাহানপুর থানার ওসি আজিম উদ্দিন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আছলাম আলী, টিআই রফিকুল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র সনাতন চক্রবর্তী’র দেয়া তথ্যমতে, বগুড়ার সকল থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক রয়েছে যেখানে এএসআই/এসআই পদমর্যাদার নারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ২০২০ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ১২টি থানায় যৌন পীড়নের ২৮১টি, শারীরিক পীড়নের ৬৪৮টি, যৌতুক সংক্রান্ত ২১২টি,মানব পাচারের ৬৭টি, এসিড নিক্ষেপের ৩ টি, মানসিক নির্যাতনের ১৫২১টি এবং অন্যান্য ১৯১৯টিসহ মোট ৪৬৫১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কাউন্সিলিং সেবা দেয়া হয়েছে ২৯৯৩ জনকে, মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি, রেফারেল সেবা দেয়া হয়েছে ৩১৯টি, জিডি করা হয়েছে ৩০৯টি আর অন্যান্যভাবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে বাকি অভিযোগগুলো যা সারা বাংলাদেশে একটি দৃষ্টান্ত।