হৈ হৈ রৈ রৈ করোনাভাইরাস গেলো কই? করোনাভাইরাসের চামড়া তুলে নেবো আমরা। একটা করে করোনা ধরো, ধরে ধরে জবাই করো। না এমন কোন শ্লোগান দিয়ে করোনাভাইরাসকে তাড়ানো যায়নি। কোন ধর্মঘট- হরতাল, অবরোধ, আলটিমেটাম, মানব বন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, অনশন পালন, উকিল নোটিশ কিংবা করোনাকে তাড়াতে স্বেচ্ছায় আত্মহুতি দিবার ঘোষণার মত এমন কোন আয়োজন করা হয়নি। তার পরও বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব খুলে গেলো। লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, শারীরিক দুরত্ব-সামাজিক দুরত্ব সব কিছুই যেন মানুষ ভুলে গেলো। করোনা টেষ্টের পরিমাণ কমে গেলো। দেশের করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বন্ধ করার চিন্ত-ভাবনা কর্তৃপক্ষের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করলো। বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, হ্যান্ড সেনিটাইজার সেতো বেকডেটেড। অবশিষ্ট রইলো মাস্ক পরা। সেটা মুখে না পরে গলায় পরার নিয়ম রপ্ত হলো। এসব কেন হলো?
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন তাই। অতি সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘‘ করোনা এমনিতেই চলে যাবে। করোনার ভ্যাকসিনের প্রয়োজন আর নাও হতে পারে।’’ ব্যাস আর যায় কোথায়? ‘একেতো নাচুনে বুড়ি তার উপর আবার ঢোলের বাড়ি।’ এও যেন ঠিক তাই। করোনা নামক মহামারি আপনা আপনিই চলে গেল। হাউজি খেলায় হাউজি উপস্থাপক ছড়া কেটে যেমন বলে ‘ পালিয়ে গেলো খান’ তখন হাউজি খেলোয়াড়রা বোঝে যে এবারের কল সেভেন এন্ড ওয়ান, সেভেনটি ওয়ান। অর্থাৎ পাকিস্তানি সৈন্যরা বাংলাদেশের মাটিতে ঢুকেছিলো উনিশ’শ একাত্তরে আবার বাংলাদেশীদের নিকট পরাজিত হয়ে সারেন্ডারও করে একাত্তুরে। বাংলাদেশের করোনাভাইরাসের অবস্থাও যেন তাই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় একাত্তরের মার্চ মাসে। এদিকে করোনাভাইরাসও বাংলাদেশে প্রবেশ করে আক্রমণ করতে সেই মার্চ মাসকেই বেছে নেয়। পাকিস্তানিদের আক্রমণ ছিলো ছাব্বিশে মার্চ আর করোনাভাইরাসের আক্রমণের সময় ৮ই মার্চ। কি অদ্ভুত মিল বলতে হবে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের পদলেহনকারি তাবেদার এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আল শামস বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য মুক্তি ফৌজরা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে থাকে। আর এই কৌশলের ফাঁদে পড়ে তারা ক্রমান্বয়ে কুপোকাত হতে থাকে। ফলে দিন যতই গড়ায় মুক্তিফৌজ ও সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার জন্য ততই ক্ষণ গণনা করতে থাকে।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে তরান্বতি করার জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে নামান। বাংলাদেশ ও ভারতের ২ হাজার ৫৮২ মাইল অর্থাৎ ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার লম্বা আন্তর্জাতিক সীমানায় সৈন্য সমাবেশ ঘটান। এছাড়া আকাশ পথ ও জলপথেও পাকিস্তানিদের মোকাবিলার জন্য সৈন্য প্রস্তুত রাখা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য শুরুতেই সমগ্র বাংলাদেশ সীমান্তে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য ১১ টি সেক্টরে ভাগ করে প্রত্যেক সেক্টরে একজন করে সেনা অফিসারকে সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ভারতীয় মিত্র বাহিনী এই সেক্টরের অধীনেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে থাকেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং আকাশ বাণী কলকাতা থেকে মুক্তিফৌজ বা মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর আক্রমণের খবর ফলাও করে প্রচারের ফলে তারা একেবারেই কোনঠাসা হয়ে পড়ে। চরমপত্র নামক একটি অতি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের রচয়িতাও উপস্থাপক এম আর আকতার মুকুলের কন্ঠে ‘অ্য ক্যামন বুজতাছেন’ বাংলাদেশটাকে টিক্কা খান ২৪ ঘন্টার মইধ্যে নাকি ক্যাপচার কইর্যা হ্যালাইবো।…. মুক্তিযোদ্ধারাও ফাঁদ পাইতা বইসা আছে। সুযোগ পাইলেই পশ্চিমা কুত্তাগুলোরে পাঁঠার বলি দিয়া নদীর মাছের খাবার দিবো। তিনি চরম পত্রে আরো বলেন, ‘হেইর লাইগ্যা কইছিলাম মেজিক কারবার। ঢাকায় অখন মেজিক কারবার চলত্যাছে। চাইর মুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেচ্কা মাইর খাইয়া ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়া সোলজারগুলো তেজগাঁ-কুর্মিটোলায় আইস্যা আ- আ- দম ফালাইতাছে।’ কেইসডা কি? আমাগো বকশী বাজারের ছক্কু মিয়া কান্দে কিয়ের লাইগ্যা।…. সামনে বিচ্চু, পেছনে বিচ্চু, ডাইনে বিচ্চু, বাঁয়ে বিচ্চু। অহন খালি মছুয়ারা চিল্লাইতাছে। ইডা হামি কি করছিনুরে – হামি ক্যা নানির বাড়িত আইছিনুরে।
বলছিলাম যুদ্ধের কথা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ২০২০ সালে বাংলাদেশ আবার যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। আর সেটা হলো করোনা যুদ্ধ বা কোভিড-নাইনটিন ওয়ার। এই যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬২জন। এপর্যনাত সুস্থ্য হয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ০২৪ জন।করোনা সোলজার বাংলাদেশের মাটিতে এসে পাকিস্তানি সৈন্যদের মত যেন বোকা বনে গেছে। তাদের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে তাইতো বুঝা যায়। আমেরিকার করোনাভাইরাস ফোন করেছিলো বাংলাদেশের করোনাভাইরাসকে ‘‘ বাংলাদেশের করোনা, ভাই সালাম, কেমন আছেন? আমেরিকার করোনাভাইরাস, ‘ তুই আর কথা কইসনা, মান-ইজ্জত তুই রাখলি কিছু? তোর পারফরম্যান্স দেইখা তোরে নিজের ভাই বলে পরিচয় দিতেও লজ্জা হয়। যেখানে আমি আমেরিকান গুলারে হুয়ায়ে দিতেছি আর তুই!!! তোর দেশের লকডাউন পর্যন্ত তুইলা দিতেছে, ছি ছি তুই কি করলি ভাই!! বাংলাদেশের করোনা, ভাই আমার কি দোষ. এই দেশের মানুষ নিজেরাই বড় ভাইরাস ভাই। আপনি নিজে দেখলে বিশ^াস করবেন না ভাই। প্রথম সমস্যা হইলো ভাই এগোরে ভিতরে ঢুইকাতো মাংস খুঁজে পাইনা, গলা থিকা পেট পর্যন্ত ধুলার স্তর ভাই। এরা নিঃশ^াসে অক্সিজেন নেয়না ভাই ধুলা নেয়। আমেরিকান করোনা- কসকি ? বাঙ্গালির এন্টিবডির এত পাওয়ার কেমনে? হালারা তো না খাইয়া থাহে। বাংলাদেশের করোনা, ভাই এগরে মতন খাওয়ান্না জাতি নাই ভাই। ঘুম থিকা উঠা এগো খাওয়া শুরু , খাইতে খাইতে ঘুমায় ভাই। কিছু না থাকলে মুড়ি নামে একটা মাল খায় ভাই, যেটার কোন স্বাদ নাই, ঘ্রাণ নাই, ভিটামিন নাই তাও ওগো সামনে খালি রাখবেন দেখবেন গরুর মত চাবাইতে থাকবো। আমেরিকান করোনা- ওরা মাস্ক পরেনা? পরে ভাই, তয় বাসায় সবাই এক মাস্ক ব্যবহার করে। বাপে মাস্ক পইরা বাজারে যায়, বিড়ি খাইতে খাইতে বাসায় আহে। আহার পর পোলায় হেই মাস্ক পইরা আবার গার্লফ্রেন্ডের লগে দেখা করতে যায়। আইলে মায় আবার ঐ মাস্ক পইরা বোনের বাড়ি যায়, বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা ভাই। বাংলাদেশের করোনা ভাই ওগলো কিছু না। ওই দিন এক করোনাভাইরাস একজনের মুখে মাত্র ঢুকছে, ঢুইকা আমারে কল দিছে, ২ ঘন্টার মধ্যে সেই ভাইরাস মারা গেছে ভাই। কেনরে গন্ধ ওয়ালা মাস্ক পরছিলো। আরে না ভাই, এইখানে একটা নদী আছে নাম বুড়িগঙ্গা। দুনিয়ার এমন কোন ভাইরাস আর ব্যাটেরিয়া নাই যা এই পানিতে নাই। একে ব্যাকটেরিয়ার জুস বলা হয়। তা দিয়া কুলকুিল করায় ভাইরাসের গলায় আটকাইয়া মারা গেছে ভাই। আর কি বল। বাংলাদেশের করোনা: আমরা আসার আগে এখানে কিছু ভন্ড হুজুর আছে যারা ধর্ম বেইচা চলে। তারা এইটা ছড়াইছে যে, আমরা খালি কাফের –মুসরিকদের ধরি, মুমিন বান্দাদের ধরিনা।
এই দেশে ভাই করোনার ডরে মায়ের সন্তান জঙ্গলে ফালায় দিয়া আসে। যেই ডাক্তার এগোর জন্যে জীবন বাজি রাখছে সেই ডাক্তাররে ঘরে ঢুকতে দেয়না। কবর পর্যন্ত দিতে গেলে আন্দোলন করে যে করোনা হইলে কবর দেওয়া যাইবোনা। আমেরিকান ভাইরাস তুই যত টুকুন পারস আতঙ্ক ছড়ায়ে দে। বাংলাদেশের করোনা- আতঙ্ক খুব একটা ছড়াইতে পারুম বলে মনে হয়না, এগো মরেণের ডর নাই ভাই। আইসোলেশনে এরা প্রেম করে, এর মধ্যেই এই দেশে গরীবের চাউল চুরি করে, নাম পুডাইতে কাঁচা ধান কাইটা ফালায়, ভুয়া মাস্ক সাপ্লাই দেয়, ভুয়া পিপিই দেয়। সবচেয়ে মজার পার্ট হইতেছে ভাই এগুলো যারা করে তাগো শাস্তি হয়না। আমেরিকান করোনা- তোর কথা শুইনাতো চিন্তায় পইরা গেলাম। বুঝলাম ওগো তোরে লাগবোনা ওগো মরণের জন্য ওরা নিজেরাই যথেষ্ট ভাই, তুই আয়া পড় ভাই।’’ ( সৌজন্যেঃ বিনয় কুমার দাস) । (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।