আটঘরিয়ায় মুক্তিযুদ্ধকালীন থানা কমান্ডার আনোয়ার হোসেন

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলায় থানা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে আটঘরিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এই বীর ছিলেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। ১৯৬৮ সালের গনআন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু পর্যন্ত সকল আন্দোলন এবং সংগ্রামের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছাত্রলীগের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন । মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে উত্তাল মার্চ মাসে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের পর স্বাধীনতার পক্ষে একজন রাজনৈতিক যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। নিজ গ্রামের সহপাঠী এবং বাল্যবন্ধুদের সংগঠিত করতে থাকেন। এরপর এপ্রিল মাসের কোন এক সময় গ্রামের চারজন বন্ধুকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য রওনা হন। এরপর ভারতে মুজিব বাহিনীর সদস্য হিসেবে দেরাদুনে প্রশিক্ষন গ্রহন করেন এবং নয়মাসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন সহ তাঁর বর্ন্যাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজ সংক্ষিপ্ত আকারে আলোকপাত করতে চাই।আনোয়ার হোসেন ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আমিন উদ্দিন খান এবং মাতার নাম মোছাঃ মাছিয়া খাতুন। আনোয়ার হোসেন স্থানীয় পার খিদিরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে পাবনা শহরে অবস্থিত রাধানগর মজুমদার একাডেমীতে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নকালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মার্চে এলাকায় আসার পর ২৬ মার্চ পাকিস্তান আর্মীরা পাবনা শহর দখল করেন। ২৮ এবং ২৯ মার্চ পাবনায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে সমস্ত পাকিস্তানী আর্মীকে হত্যা করার পর পাবনা শহর মুক্ত করা হয়। এরপর ১০ এপ্রিল নগরবাড়ী ঘাট হয়ে পাকিস্তানী আর্মীরা পুনরায় পাবনা প্রবেশ করলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠক এবং প্রতিরোধ যুদ্ধে জড়িত সবাই সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান।

আনোয়ার হোসেন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের কোন এক সময় তাঁর গ্রামের সহযোদ্ধা মোঃ আলী আশরাফ, সুলতান মাহমুদ এবং আবুল কাশেম মুন্সিকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্য রওনা হন। তাঁরা পাশ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলা হয়ে আরো কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে লালপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানায় উপস্থিত হন। সেখান থেকে পাশের নদীয়া জেলার কেচুয়াডাঙ্গায় পাবনা জেলার জন্য গঠিত ট্রানজিট ক্যাম্পে যোগ দেন। সেখানে যাবার পর আনোয়ার হোসেন এবং তার সাথে যাওয়া সবাইকে মুজিব বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই ভাগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাছাই করা হয়। একভাগে মুজিব বাহিনী বা পলিটিক্যাল কমান্ডো এবং আরেকভাগে এফ এফ বা ফ্রন্ট ফাইটার। তুলনামূলক শিক্ষিত ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুজিব বাহিনীতে নেওয়া হতো। তাঁদের প্রশিক্ষন হতো ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত স্থানে। মুজিব বাহিনীর চারটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। পাবনা জেলা ছিল পশ্চিম দক্ষিণ অঞ্চলের অধীনে। বিভাগীয় অধিনায়ক ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। কলকাতার সন্নিকটে ব্যারাকপুর ছিল সদর দপ্তর। মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষন হতো ভারতীয় সামরিক একাডেমী দেরাদুন এলাকায়।

এছাড়া আসামের হাফলং এ কয়েক ব্যাচের ট্রেনিং হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে এফ,এফ বা ফ্রন্ট ফাইটার ছিল প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের নিয়ন্ত্রিত সেক্টর কমান্ডারদের অধীনে। যুদ্ধের সময় জেনারেল ওসমানীর অধীনে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত বাহিনীতে ডিফেন্স ফোর্সের সাথে এফ,এফ বা ফ্রন্ট ফাইটাররা গনবাহিনী সদস্য ছিল। তাঁদের ট্রেনিং হতো বিহার প্রদেশের চাকুলিয়া বা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার পানিঘাটা বা অন্যান্য প্রশিক্ষন কেন্দ্রে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন গর্ব বোধ করলেন মুজিব বাহিনীতে রিক্রুট হয়ে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে প্রশিক্ষন পাবেন। তবে বিড়ম্বনা হলো মনোনীত হওয়ার পরেও প্রায় একমাস তাঁদেরকে কেচুয়াডাঙ্গা ট্রানজিট ক্যাম্পে অপেক্ষা করতে হয়েছিল । সেটার কারন হলো উনারা যাবার অল্প কয়েকদিন আগে মুজিব বাহিনীর প্রথম ব্যাচ ট্রেনিং গ্রহন করছিলেন। যাইহোক প্রায় একমাস অপেক্ষার পর মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় ব্যাচ দেরাদূনের উদ্দেশ্য রওনা হন। তাঁদের নদীয়া জেলা থেকে নেওয়া হয় শিলিগুড়িতে। এরপর সেখানকার বাগডোগরা বিমান ঘাটি থেকে বিমানে নেওয়া উত্তর প্রদেশের দেরাদুন শহরে। সেখান থেকে ট্রাকে উঠিয়ে দুর্গম পাহাড় তান্দুয়া প্রশিক্ষন ঘাঁটিতে । সেখানে তাদের প্রায় দেড় মাস যাবত রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। সেখানে কঠোর পরিশ্রম করে প্রশিক্ষন শেষ করার পর মুজিব বাহিনীর বিভাগীয় সদর দপ্তর কলকাতার ব্যারাকপুরে আনা হয়। ব্যারাকপুর সদর দপ্তরে আসার পর বিভাগীয় অধিনায়ক তোফায়েল আহমেদ দশ সদস্যের গ্রুপ করে অস্ত্র, গোলা বারুদ ও রসদ তাদের হাতে তুলে দেন। পাবনা জেলার তিনটি থানার তিনজন অধিনায়ক মনোনীত করা হয়। আটঘরিয়া থানার অধিনায়ক মনোনীত হন, আনোয়ার হোসেন। ঈশ্বরদী থানার অধিনায়ক মনোনীত হন, নুরুজ্জামান বিশ্বাস এবং পাবনা সদর থানার অধিনায়ক মনোনীত হন, ইমদাদ আলী বিশ্বাস ভুলু। আটঘরিয়া থানার অধিনায়ক আনোয়ার হোসেনের দলে সহ-অধিনায়ক মনোনীত হন মোঃ আলী আশরাফ। সদস্যরা হলেন, সুলতান মাহমুদ, তোয়াজ উদ্দিন, হায়দার আলী, জহুরুল ইসলাম এবং চাটমোহর থানার আমজাদ হোসেন লাল, আতাউর রহমান রানা, রওশন আলম ও বাঘা।

অতঃপর পাবনার তিন থানার তিন গ্রুপ প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। মুজিব বাহিনীর অগ্রগামী দল হিসেবে আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর বাহিনী মাজপাড়া এবং চাঁদভা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান গ্রহন করেন। তাঁরা প্রাথমিকভাবে এলাকার তরুণ ও যুবকদের রিক্রুট করে প্রশিক্ষন দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গঠন করা, স্থানীয়ভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করা সহ নানা কাজে নিয়োজিত হন। অল্পদিনের মধ্যে আনোয়ার হোসেনের দল একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, চাটমোহর, বড়াইগ্রাম সহ পাবনা সদরের বহু স্থানে ছোট বড় অপারেশন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ২২ অক্টোবর বেরুয়ান যুদ্ধ এবং ৬ নভেম্বর বংশিপাড়া যুদ্ধ সফলভাবে পরিচালনা করেন। বেরুয়ান যুদ্ধে একদল রাজাকার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে তাঁর দলের বীর মুক্তিযোদ্ধা তোয়াজ উদ্দিন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী শহীদ হন। সেইযুদ্ধে নয়জন রাজাকার নিহত এবং অনেকে হতাহত হন। উক্ত যুদ্ধে আনোয়ার হোসেনের গ্রুপের সাথে পাবনার শাজাহান আলীর আরেকটি মুক্তিযোদ্ধার দল শরীক হয়েছিলেন। এরপরে সংগঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধে আটঘরিয়ার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। ৬ নভেম্বর মাজপাড়া ইউনিয়নে বংশিপাড়া – সোনাকান্দর নামক স্থানে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে ভয়াবহ যুদ্ধ হয় । যে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ক্যাপ্টেন তাহের সহ ১৩ জন সৈন্য নিহত হয় । অপরদিকে উক্ত যুদ্ধে ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। এরমধ্যে আনোয়ার হোসেন গ্রুপের ২ জন যথাক্রমে বেরুয়ান গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবুল কাশেম এবং মাজপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল খালেক। বাকী ৮ জন শহীদ হয়েছিলেন ঈশ্বরদী উপজেলার ওয়াছেব আলী গ্রুপের। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের আগে আরো কিছু ছোট ছোট যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আটঘরিয়া উপজেলা মুক্ত হলে আনোয়ার হোসেন আটঘরিয়া থানার প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহন করেন। আটঘরিয়া পুলিশ প্রশাসন এবং থানা প্রশাসন তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারী ঢাকা স্টেডিয়ামে আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট অস্ত্র সমর্পন করেন। এই লেখাটি এখানে শেষ করলে মহান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীর আনোয়ার হোসেনের মুক্তিযুদ্ধকালীন কর্মকান্ডের ইতিহাস এখানেই শেষ হয়। কিন্তুু বাকী থেকে যায় এই বীরের অনেক কৃতিময় কর্মকান্ড। এই বীরকে কাছে থেকে দেখা আরো কিছু কথা ইতিহাসের অংশ হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব প্রদানকারী আটঘরিয়া থানা কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, সৎ এবং জনপ্রিয় নেতা। তাঁর কোন শত্রুও উনার অসততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবেন না। মুক্তিযুদ্ধের পরে উনাকে অনেকবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলা যায় স্বাধীনতার দুইমাস পরে পাবনা শহরে অজ্ঞাত অস্ত্রধারীরা হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। অস্বাভাবিক ভাবে তিনি বেঁচে যান। উল্লেখ্য স্বাধীনতার পরে অনেকে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় আটঘরিয়া এলাকায় যে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যুদ্ধ করেছিলেন এদের মধ্যে চাটমোহরের এম,আই চৌধুরী স্বাধীনতার ৪ দিন পর তিন ভাই এবং ভগ্নিপতি সহ খুন হন। স্বাধীনতার কিছুদিন পরে ঈশ্বরদীতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওয়াছেব আলী খুন হন। ১৯৭৫ এর পর আটঘরিয়ার এফ এফ কমান্ডার মন্তাজ আলী খুন হন। সেই সময়ে পাবনা শহরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার লালু খুন হন। বানী সিনেমা হলের সামনে চাটমোহরের মুক্তিযোদ্ধা চঞ্চল খুন হন। ঈশ্বরদীতে মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান কচি খুন হন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আটঘরিয়া এলাকায় যুদ্ধ করেছেন এমন দুইজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বিশেষ করে কমান্ডার শাজাহান আলী এবং কমান্ডার আবদুল মান্নান গোড়া স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন এর পারিবারিক এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের আলোচনা করে এই লেখার সমাপ্তি টানতে চাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ১৯৭২ সালের শেষ দিকে মাজপাড়া গ্রামে ডাঃ নওশের আলীর কন্যা ফিরোজা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। উনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল – জাসদ এর প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক। ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মশাল মার্কা নিয়ে এমপি নির্বাচন করেন। তিনি বিপুল ভোট পেয়ে বিজয়ী প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। জাসদ রাজনীতি করার অপরাধে নির্বাচনের ১৪ দিন পর রক্ষীবাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাঁকে রক্ষীবাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারেনা। নির্বাচনের ২ মাস পর রক্ষীবাহিনী তাঁর গ্রামের বাড়ী পুড়িয়ে দেয়। ঐ একইদিন মাজপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাঁর শ্বশুর ডাঃ নওশের আলী এবং ভগ্নিপতি মকবুল হোসেন ( ল্যাব এইড হাসপাতালের চীফ কার্ডিয়াক সার্জন ডাঃ লুৎফর রহমানের বাবা) কে আটক করে এবং জেলখানায় বন্দী করে। এরপর ১৯৭৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন এবং তার ৬ জন সহযোগীকে চাটমোহর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের আটকের সময় তাঁর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার সহ কয়েকজন মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর গ্রেপ্তারকৃতরা ১৯৭৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত একটানা ২ বছর জেলে ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ১৯৮৩ সালে মাজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এলাকার পার খিদিরপুর কলেজ, স্থানীয় কমিউনিটি হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।। ১৯৮৬ সালে একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে একটানা ৪ বছর জেলে ছিলেন। এরপর ১৯৯০ সালে জেলখানায় আটক থাকাবস্থায় বিপুল ভোটে আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ( জেএসডি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের তিন ছেলে এবং তিন মেয়ে। বড়ছেলে ফিরোজ আহমেদ সেনাবাহিনীর মেজর পদে কর্মরত রয়েছেন। মেজছেলে ফারুক আহমেদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাষ্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তিনি জাতীয় হকি দলের খেলোয়াড় ছিলেন এবং দীর্ঘদিন আবাহনী ক্লাব হকি দলের অধিনায়ক ছিলেন। সে মাজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ছোটছেলে শাহরিয়ার রোমেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বড়মেয়ে মাহবুবা খাতুন বীথি বর্তমানে পাবনা এলএসডি খাদ্য গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মেজমেয়ে মাসুমা খাতুন যুথী সহকারী জজ হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোটমেয়ে সারথী পারভীন পাবনা সরকারী মহিলা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ২ বর্ষের ছাত্রী। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন যাবত চোখের সমস্যা নিয়ে ভুগছেন। ভুল চিকিৎসার কারণে সে প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে। উনি বর্তমানে আটঘরিয়া উপজেলা সদর দেবোত্তরে সপরিবারে বসবাস করছেন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি গল্প কবিতা লেখতেন। চোখের সমস্যায় নিজে আর লেখতে পারেন না। তবে মাঝেমধ্যে অন্যকে দিয়ে তার কবিতা অনুলিখন করান। তাঁর ইচ্ছা এ যাবত সব লেখাগুলি একত্রিত করে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করার। অমিতবিক্রমী এই বীরের মানসিক শক্তি এখনো প্রবোল। এখনো সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। আশা করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ। ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই তাঁর প্রত্যাশা – এটাই তাঁর চাওয়া। এই বীরের অন্তিম ইচ্ছা বাস্তবায়ন হোক – এটা আমাদের প্রত্যাশা। ( শেষ)

লেখক পরিচিতি –

আমিরুল ইসলাম রাঙা প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য আটঘরিয়া প্রেসক্লাব পাবনা।

৮ সেপ্টেম্বর ২০২০