সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ললিতা বেগম (৩৫) নামে এক দরিদ্র বিধবা নারীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে উপজেলার পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তারের লোকজন।
গুরুতর আহত ললিতা বেগমকে প্রথমে পাশের নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে তার অবস্থা আশংকাজ্জনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই দিনেই ললিতাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন।
আজ শনিবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের বৌলাম গ্রামে উপজেলার নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে ওই দিন বিকেলে আহত নারী ললিতা বেগম বাদী হয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তারের ভগ্নিপতি ও উপজেলার চকিয়াচাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোনায়েম মিয়া (৪৪) ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় প্রায় তিন বছর সাজা কেটে আসা তাঁরই ছোট ভাই সাকিন শাহ (৩০) সহ ৩ জনকে আসামী করে ধর্মপাশা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,উপজেলার বৌলাম গ্রামের ললিতা বেগমের
স্বামী মতি মিয়া স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে গত প্রায় পাঁচ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। মতি মিয়ার মৃত্যুুর পর থেকেই তার বিধবা স্ত্রী ললিতা বেগম মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
বর্তমানে তিনি নিজ গ্রামে পল্লীবন্ধু নামে একটি বেসরকারি এনজিও সংস্থার কার্যালয়ের গৃহ পরিচারিকার কাজ করে আসছেন। শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তারের মামাতো ভাই হায়দার মিয়া (৩২) বাদশাগঞ্জ বাজার থেকে পল্লীবন্ধু এনজিও সংস্থার কার্যালয়ের জন্য একটি গ্যাস সিলিন্ডার বোতল কাঁধে করে নিয়ে আসেন। এ সময় হায়দার তাঁর কাঁধ থেকে ওই গ্যাস সিলিন্ডার বোতলটি নামানোর জন্য
গৃহপরিচারিকা ললিতা বেগমকে বলেন।
এ সময় ললিতা বেগম কাজে ব্যস্ত থাকায় হায়দারকে একটু দাঁড়াতে বলেন। পরে এ নিয়ে দুই জনের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে উপজেলায় পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যানের ভগ্নিপতি ও প্রধান শিক্ষিক মোনায়েম মিয়া ও তাঁর ছোট ভাই সাবেক বিডিআরের জেল কাটা সদস্য সাকিন শাহ ঘটনার স্থলে ছুটে আসেন এবং তাঁরা তিনজন মিলে ওই বিধবা নারীকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারপিট করে গুরুতর আহত করে তাকে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে চলে যান। পরে খবর পেয়ে ওই বিধবা নারীর স্বজনরা ঘটনারস্থল থেকে গুরুতর আহত ললিতা বেগমকে উদ্ধার করে তাকে দ্রুত পাশের মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে সেখানে তার অবস্থা আশংকাজ্জনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই দিন দুপুরে ললিতাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্ররণ করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিক মোনায়েম মিয়া বলেন, ঘটনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম ঠিকই। তবে আমি ওই নারীকে কোনো মারধর করিনি। বিডিআর বিদ্রোহ মামলার চাকুরীচ্যুত অভিযুক্ত সাকিন শাহর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি একটু পরে কথা বলবেন বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ললিতা একজন খারাপ চরিত্রের মহিলা আমার লোকজন তাকে মারধর করেনি। বরং উল্টো সে আমিসহ আমার লোকজনদেরকে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করেছে। তাই আমিও তার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে ধর্মপাশা থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।