ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে তা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা বটে। ভয়াবহ ভয়ের কারণও রয়েছে এই ঘটনায়। সরকারের একজন উঁচু পর্যায়ের এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কেন এমন কাজটি করে বসলেন তা ভাবতে অবাক লাগে। তার উদ্দেশ্যই বা কি ছিলো। এসবের বিচার বিশ্লেষন হওয়া দরকার । বলছিলাম ডাক বিভাগের মহাপরিচালকের কথা।
বৈশি^ক মহামারি করোনাভাইরাসের তান্ডবে সমগ্র বিশ^ কম্পমান। বিশে^র তাবত মানুষ যখন দিশেহারা । কার কখন কি হাল হয় তা যখন কেউই জানেনা, সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি রব। তখন তিনি নিজে করানাক্রান্ত হয়েও জেনেশুনে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দহলিজে গিয়ে হাজির হলেন? শুধু তাই নয় তাঁকে দিয়ে আবার বিশেষ স্মারক ডাকটিকেট, ডাটা কার্ড উন্মোচন এর উদ্বোধনী কাজটিও করালেন?
এমনই একটি খবর পরিবেশন করেছে কালের কন্ঠ পত্রিকা। গত ২২ আগস্ট সচিত্র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাক টিকেট ও ডাটা কার্ড উন্মোচনের উদে¦াধনী কাজে গত ১৪ আগস্ট গণভবনে যান ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনেক কাছাকাছি অবস্থান করেন। এদিকে এই ঘটনায় ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্রকে চাকরি থেকে বরখাস্ত চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে। নোটিশে করোনা পজিটিভ হবার পরও কেন তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলেন তার তদন্ত চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে বিচারের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় কোন কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এবিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক এবং আইইডিসিআরের পরিচালককে ইমেইল যোগে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার শনিবার এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫ তম শাহাদাত বাষিকী উপলক্ষে বিশেষ স্মারক ডাক টিকেট , ডাটা কার্ড উন্মোচন এর উদ্বোধনী কাজে গত ১৪ আগস্ট গণভবনে যান সুধাংশু শেখর ভদ্র। সেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অনেক কাছাকাছি অবস্থান করেন। কিন্তু সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ২৬ ধারা অনুযায়ী তিনি করোনা পজিটিভের তথ্য গোপন করেছেন যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
নোটিশে বলা হয় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ১২ আগস্ট আইইডিসিআর করোনা পরীক্ষার জন্য সুধাংশু শেখর ভদ্রের নমুনা সংগ্রহ করেছে এবং ১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় উক্ত রিপোর্ট তাকে প্রদান করা হয়েছে। যে রিপোর্ট অনুযয়িী তার করোনা পজিটিভ ছিলো। কিন্তু উক্ত রিপোর্টের তথ্য গোপন করে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। যা শুধুই বেআইনি নয়, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকি বহন করে।’
নোটিশে বলা হয় আগস্ট মাস একটি শোকের মাস। এই মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন বর্বরতম হত্যাকান্ড ঘটেছে। বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শুন্য করার জন্য বার বার স্বাধীনতা বিরোধী এই আগস্ট মাসকে বেছে নিয়েছ্,ে এমন একটি পরিস্থিতিতে এমন একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি যাওয়ার উদ্দেশ্য সম্পর্কে দেশবাসীর মধ্যে বিভিন্ন ধরণের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কেন এবং কোন উদ্দেশ্যে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গেলেন? একই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা কার্যকরি সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একারণেই বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’
এবিষয়ে আমি আগেই বলেছি বৈশি^ক করোনাভাইরাস কোন হেলাফেলার বিষয় নয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সোমালিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নুর হাসান হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। এক বিবৃতিততে তার পরিবার জানিয়েছেন, নুর হাসান হোসেন তার চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
করোনায় সৌদি রাজ পরিবারের অবস্থা শোচনীয়। নোভেল করোনাভাইরাসের থাবায় এরই মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক সদস্য প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েেেছ বলে গণমাধ্যমে খবর উঠে এসেছে। এবার জানা গেছে আরো ভেতরের খবর। এই প্রাণঘাতি ভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়েছেন সৌদি বাদশাহ ও যুবরাজ। সৌদি রাজপরিবারের দেড় শতাধিক সদস্য কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন বলেও খবরে জানা যায়। আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গত মার্চের ৮ তারিখ হতে শুরু হওয়ার পর থেকে সকল শ্রেণি-পেশার লোকজনই এতে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুরুতে প্রবাসীদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দিলেও ক্রমেই তা সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ তালিকায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্য সেবা কর্মী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লোকজনের পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন সরকারের উচ্চ পদধারীরাও। এরই মধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ মারা গেছেন। মারা গেছেন জাতীয় সংসদের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী সিরাজগঞ্জের মোহাম্মদ নাসিম। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জামালপুরের সরিষাবাড়ির আনোয়ারুল কবির তালুকদার (মেজর জেনারেল অবঃ)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেন ও একই দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য কামরুন্নাহার পুতুল। এছাড়া আরো ববেশ কিছু সংসদ সদস্য কোভিড এ আক্রান্ত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তাঁর স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলেও তিনি সুস্থতা লাভ করেছেন।
করোনাভাইরাস এখনো বিশ^ব্যাপি তার মরণ কামড় বসিয়ে চলেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রমণের শিকার হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। তবে আমাদের বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন বলতে হবে। যদিও প্রতিদিন মৃত্যুর হার চল্লিশের কোঠায় অবস্থান করছে তবু স্বাস্থ্যমন্ত্রী বুক ফুলিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে করোনা বিদায় নিয়েছে, ভ্যাকসিনের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তার সাথে আবার অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিও মন্ত্রীর কথার সুরে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেছেন। কী বিচিত্র এই দেশ। হয়তো বা সেই সাহসের উপর ভর করেই ডাক বিভাগের মহাপরিচালক গণভবনের কঠোর নিরাপত্তা বলয়! ভেদ করে করোনা পজিটিভ অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে রাষ্ট্রীয় কার্য সম্পাদন করেছেন এতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে? ’’ (চলবে) (লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
এবাদত আলী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সদস্য পাবনা প্রেসক্লাব।