ভাঙ্গুড়ায় ঘুষের টাকা ফেরতের দাবিতে অডিট অফিসারকে লাঞ্ছিত

সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে রাজিউল ইসলাম নামে একজন অনার্স পড়ুয়া কলেজ ছাত্রের পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা (অডিট অফিসার) আনসার আলীর বিরুদ্ধে। চাকরি না পাওয়ায় গত প্রায় এক বছর ধরে ওই টাকা ফেরত চাচ্ছেন ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রের পরিবার। টাকা না দেয়ায় বুধবার সকালে ওই কর্মকর্তাকে নিজ বাড়ির পাশে সড়কে লাঞ্ছিত করে কলেজ ছাত্রসহ তার পরিবারের সদস্যরা। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। আনসার আলী উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের মৃত তজিম উদ্দিনের ছেলে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের নিরীক্ষণ কর্মকর্তা আনসার আলী ও যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারি আবু সাঈদ সরকারি চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত পাঁচজন যুবকের কাছ থেকে পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা করে ঘুষ নেন বলে অভিযোগ ওঠে। রাজিউল সহ অন্যরা এই ঘুষের টাকা আনসার আলীর কাছে জমা দেন বলে অভিযোগ করেন। চাকরি প্রত্যাশী যুবকদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামে। এরা আনসার আলীর গ্রামের বাসিন্দা। পরবর্তীতে এসব চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির জন্য নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলে এসব নিয়োগপত্র ভুয়া বলে ধরা পড়ে। পরে সকলেই আনসার আলী ও সাঈদের কাছে টাকা ফেরত চান। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারি আবু সাঈদ নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে ভাঙ্গুড়াতে অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। পরে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে চাকরিপ্রার্থী পাথরঘাটা গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনার তদন্তও করেন। এরপর মুজাহিদুল ইসলাম ৬ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা ফেরত পান।

আরেক ভুক্তভোগী গ্রামের হাসান আলীর ছেলে হাসিনুর রহমান চাকরির জন্য ওই চক্রকে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছিলেন। তিনিও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে আংশিক টাকা ফেরত পান।

তবে একই গ্রামের আরেকজন কলেজছাত্র রাজিউল ইসলাম আজ পর্যন্ত কোনো টাকা ফেরত পায়নি। এর ছয় মাস আগে টাকা ফেরতের দাবিতে রাজিউলের পরিবার আনসার আলীর বাড়ি ঘেরাও করে। সে সময় আনসার আলী কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে চিকিৎসা করতে ভারতে চলে যান। তবে এর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও কোনো টাকা ফেরত পায়নি রাজিউল। বিষয়টি নিয়ে রাজিউলের পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। তবে এর কোনো সমাধান হয়নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বুধবার সকালে নিজ বাড়ির পাশে আনসার আলীকে পথরোধ করে লাঞ্ছিত করে রাজিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা। এসময় আনসার আলীর স্ত্রী ও কন্যারা সহ শতাধিক গ্রামবাসি ঘটনাস্থলে এসে জড়ো হন। পরে খবর পেয়ে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

ভুক্তভোগী রাজিউল ইসলাম বলেন, প্রতিবেশী আনছার আলীকে বিশ্বাস করে সরকারি চাকরি পাবার আসায় জমি ও গরু বিক্রি করে তার বাড়িতে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা দেই। পরে শিক্ষা অধিদপ্তরে চাকরিতে যোগদান করার কথা বলে আমাকে ঢাকা পাঠায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমি প্রতারক চক্রের জালে ধরা পড়েছি। কিন্তু ওই চক্র আমাকে বাড়ি ফিরতে না দিয়ে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে জোরপূর্বক চাকরি করতে বাধ্য করায়। পরবর্তীতে আমি সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসি। এখন টাকার জন্য আনসার আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়ে যাচ্ছি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে আনসার আলীকে ফোন করলে অসুস্থতার কথা বলে তার স্ত্রী লিপি পারভিন ফোন রিসিভ করে বলেন, রাজিউল চাকরির জন্য গ্রামের ইমরান নামে এক ব্যক্তির কাছে টাকা দিয়েছিল। ইমরান নিরাপত্তার কথা ভেবে সেই টাকা আমাদের বাড়িতে রেখেছিল। পরে ইমরান সেই টাকা নিয়ে যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহকারি আবু সাঈদের একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। টাকা নিয়ে সাঈদের চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নাই। রাজিউলের পরিবার বারবার মিথ্যা অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্র করে আমার স্বামীকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। একপর্যায়ে বুধবার আবারো রাস্তায় আটকে হয়রানি করে।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো ব্যক্তি ৯৯৯ ফোন করে উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামে মারামারির ঘটনা জানায়। তখন তাৎক্ষণিক পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় বিস্তারিত বিষয়ে কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।