রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নির্মাণ কাজ রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তদারকি করছেন। কাজের অগ্রগতি দেখার জন্য রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান গত ২৮ জুলাই পিজেএসসি জিও পোডোলস্ক এবং ২৯ জুলাই জেএসসি রাসু নামে বৃহত্তর মস্কোস্থ দু’টি কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন বলে প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন।
তিনি জানান, পিজেএসসি জিও পোডোলস্ক কারখানা পরিদর্শনের শুরুতে রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আনাতোলি এম স্মিরভ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন। বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই প্রকল্পটির কাজ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে যথাসময়ে সম্পন্ন করার উপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসময় সমাধিক গুরুত্বারোপ করেন। কারখানাটির বিভিন্ন বিভাগে রূপপুর প্রকল্পের জন্য নির্মাণাধীন যন্ত্রাংশ পরিদর্শন করা হয়।
ড. শৌকত জানান, জিও পোডোলস্ক কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। কারখানাটি থেকে ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের ময়েশ্চার সেপারেটর রিহিটারের চারটি সেট, হাই প্রেসার হিটারের চারটি সেট এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের বাবলার ট্যাঙ্ক রূপপুর প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ করা হয়েছে। কারখানাটিতে এখন দ্বিতীয় ইউনিটের ময়েশ্চার সেপারেটর রিহিটার, হাই প্রেসার হিটার এবং ইমার্জেন্সি কোর কুলিং সিস্টেম হাইড্রো-একুমুলেটর নির্মানের কাজ চলছে। যন্ত্রপাতিসমূহের নির্মাণকাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সম্পন্ন এবং প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ করা হবে বলে কারখানাটির প থেকে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
জানা যায়, জিও পোডোলস্ক কারখানাটি শতাধিক বছর ধরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল ও গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং পারমাণবিক শক্তিচালিত জাহাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরী করছে। এটি রুশ রাষ্ট্রিয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটম এর কারিগরী বিভাগ এ্যটম-এনার্গোম্যাশ এর অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, জেএসসি রাসু কারখানা পরিদর্শনের শুরুতে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মি. আন্দ্রেই বুতকোর সাথে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা মহামারির মধ্যেও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সচল রাখা হয়েছিল বলে কারখানাটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপ রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে অবহিত করে। বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সফলভাবে সম্পাদনের প্রত্যাশায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেমান আছে বলে রাষ্ট্রদূত এসময় উল্লেখ করেন।
জেএসসি রাসু কারখানায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ এর আপার লেভেল কন্ট্রোল সিস্টেম এর বিভিন্ন অংশের একত্রীকরণ এবং পরীার কাজ চলছে। আগামি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এর সকল কাজ সম্পন্ন হবে এবং কারিগরি মূল্যায়ন শেষে যন্ত্রপাতিসমূহ বাংলাদেশে প্রেরণ করা হবে বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে কারখানা দুটির মহাপরিচালক এবং প্রকল্পের জেনারেল কন্ট্রাক্টর জেএসসি অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের প্রতিনিধি রূপপুর প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং অগ্রগতি তদারকির জন্য রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে প্রকল্প সূত্রে জনা গেছে।
এসময় রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। যা তার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ৩০টি দেশের এক বিশেষ সম্মানজনক তালিকায় স্থান করে নেবে।