আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রতিটি বিষয়ে সরকারের সমালোচনা আর মিথ্যাচার করা বিএনপির চিরায়ত ঐতিহ্য।
আজ মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে তার নিজ দপ্তরে ব্রিফিংকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এবারের বন্যা নাকি সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েও মিথ্যাচার ও অপরাজনীতির বৃত্ত থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে পারেনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চান তাহলে কি সম্প্রতি চীন, জাপান ও আসামের বন্যাও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল? বিএনপির আমলে যে বন্যা হয়েছিল তাও কি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে হয়েছিল?
মির্জা ফখরুলকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গুলশানে বসে বসে প্রেস ব্রিফিংয়ে মিথ্যাচার করলে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ দেখার কথা নয়। কারণ বন্যা গুলশানে নয়। দেশের ৩১টি জেলাকে প্লাবিত করেছে।
তিনি বলেন. ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্ধ হয়ে থাকলে সরকারের উদ্যোগ ও সহায়তা দেখতে পাওয়ার কথা নয়। হাতের তালু দিয়ে আকাশ ঢাকা যায় না। বিএনপি না দেখলেও দেশের মানুষ এবং দুর্গত এলাকার মানুষ সরকারের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দেখছে ও উপকৃত হচ্ছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বন্যা মধ্যাঞ্চলকে প্লাবিত করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন ধরণের সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। চলছে খাদ্যসহ মানবিক সহায়তা কার্যক্রম। বিএনপি মহাসচিব বন্যার্তদের সহায়তায় সরকারের কোনোধরণের প্রয়াস খুঁজে পাচ্ছেন না, চোখে দেখছেন না।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের ৩১টি জেলায় বন্যার্তদের সহায়তায় ১ হাজার ৬০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৮০ হাজার।আশ্রয়কেন্দ্রে জরুরি চিকিৎসা সহায়তায় প্রায় নয়শত মেডিকেল টিম কার্যকর রয়েছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষদের রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে। বন্যায় এ পর্যন্ত ৩১টি জেলার ১৫৩টি উপজেলায় পানিবন্দী প্রায় দশ লাখ পরিবারের প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসনের নিকট ১২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৭ হাজার টনেরও বেশি। প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টন মজুদ রয়েছে। নগদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ১ লাখ ৩২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশুখাদ্য বাবদ ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গো-খাদ্য বাবদ ২ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য নৌকাসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিতরণ করা হচ্ছে খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটর করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা গ্রহণের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের পাশাপাশি দুর্গত মানুষের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকমীরা। পানিবন্দী মানুুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা, রান্না করা খাবার বিতরণ, চিকিৎসা, ত্রাণ কার্যক্রমে প্রশাসনকে সহায়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ রয়েছেন সক্রিয়। দেশের যে কোনো দুর্যোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনও দুরে সরে থাকেনি। নিরাপদ দুরত্বে বসে বসে প্রেস ব্রিফিং করেনি। ছুটে গেছে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে। সম্পৃক্ত হয়েছে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা ও মানবিক সহায়তায়। করোনায় কর্মহীন মানুষের পাশে থেকে আওয়ামী লীগ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা নজির বিহীন। একইভাবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে বন্যা দুর্গত মানুষের পাশেও দলীয় নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিগণ সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছেন। মাটি ও মানুষের দল বলে দেশের ও দেশের মানুষের যে কোন বিপদে সবার আগে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সত্তর বছরের ঐতিহ্য।
ওবায়দুল কাদের বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষা নিয়ে এখনো কিছুটা বিভ্রান্তি রয়ে গেছে জানিয়ে বলেন, অনেকেই টিকেট জমা দিয়ে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগে নমুনা দিচ্ছে পরীক্ষার জন্য, আবার কেউ কেউ ২৪ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না। তাই বিদেশগামীদের ভোগান্তি কমাতে একটি যৌক্তিক সময় নির্ধারণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি লক্ষণ দেখা দিলেও অনেকে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছে না। কোনো কোনো হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা, নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ, নমুনা গ্রহণে দীর্ঘ লাইন ও ফলাফল প্রদানে অপ্রয়োজনীয় সময়ক্ষেপণ ইত্যাদি কারণে পরীক্ষার প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে। অপরদিকে টেলিমেডিসিনের আওতা বাড়ায় ঘরে বসেই অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। সাধারণ রোগীরাও বিভিন্ন রোগ যন্ত্রণায় হাসপাতালে যেতে চাচ্ছে না। রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হাসপাতালগুলোকে দৃশ্যমান সেবার মান ও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। নমুনা পরীক্ষা হতে দূরে থাকলে একজন রোগী অনেককে সংক্রমিত করতে পারে।